ব্যবসায়ীদের মধ্যস্থতায় আন্দোলন স্থগিত করে ইতোমধ্যে কাজে যোগ দিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তবে আন্দোলন স্থগিতের পরপরই কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে সরকার। এতে আতঙ্ক আরও বেড়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। এর মধ্যে ক্ষমার আর্জি নিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন কর ক্যাডারের কর্মকর্তারা। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত রাজস্ব ভবনে চেয়ারম্যান কার্যালয়ে ব্যাচভিত্তিক প্রায় দুইশ কর কর্মকর্তা ভুল স্বীকার করে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন। তারা বলেন, না বুঝে এবং পরিস্থিতির শিকার হয়ে তারা আন্দোলনে যুক্ত হতে বাধ্য হয়েছেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের আন্দোলনে সম্পৃক্ত না হওয়ার ব্যাপারে তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করেন। যারা ক্ষমা চেয়েছেন তাদের মধ্যে ৪০, ৩৮, ৩৩, ৩০, ২৯ ও ২৮ ব্যাচের কর্মকর্তা বেশি ছিলেন। তাদের মধ্যে অনেকেই এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।
ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে একজন যুগ্ম কমিশনার বলেন, আমরা চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করে ক্ষমা চেয়েছি। তিনি আমাদের অভিভাবক, পিতার সমতুল্য। সেই দাবি নিয়ে ওনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছি। চেয়ারম্যান ব্যক্তিগতভাবে আমাদের ক্ষমা করার কথা বলেছেন। কিন্তু আমদানি-রপ্তানি বন্ধ করে রাষ্ট্রের যে ক্ষতি হয়েছে, সেটির বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে তার (চেয়ারম্যান) তেমন কিছু করার নেই বলে জানিয়েছেন। আমরা আশা করছি, তিনি আমাদের বিষয়টি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।এদিকে, গত সোমবার ঢাকা কাস্টম হাউস পরিদর্শন শেষে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেছেন, যারা শাটডাউন কর্মসূচির মাধ্যমে সীমা লঙ্ঘন করেছেন, তাদের ক্ষমা নেই। তবে যারা দায়িত্বশীল হয়ে কাজ করবেন, তাদের ভয়ের কিছু নেই।গতকাল এনবিআরের পাঁচ সদস্যের দায়িত্ব পুনর্বণ্টন করেছে বোর্ড প্রশাসন। এর মধ্যে নতুন যোগদানকৃত দুই সদস্যকে পদায়নও করা হয়েছে। সদ্য যোগদানকৃত মুহাম্মদ মুবিনুল কবীর (কাস্টমস নীতি ও আইসিটি) এবং মো. আজিজুর রহমানকে (মূসক নীতি) অতিরিক্ত দায়িত্ব (মূসক নিরীক্ষা) দেওয়া হয়েছে। এর আগে এসব বিভাগের দায়িত্বে থাকা দুই সদস্য আহমদ হোসেন ও আবদুর রউফকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে সরকার। আর ড. মোহাম্মদ আল আমিন প্রামাণিককে কাস্টমস নিরীক্ষা, আধুনিকায়ন ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আগে তিনি মূসক নিরীক্ষার সদস্যের পাশাপাশি অতিরিক্ত হিসেবে কাস্টমস নীতি ও আইসিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া কাজী মুস্তাফিজুর রহমানকে কাস্টমস নিরীক্ষা, আধুনিকায়ন ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য থেকে কাস্টমস রপ্তানি, বন্ড ও আইটির সদস্য হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। অপর সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেনকে কাস্টমস ও ভ্যাট প্রশাসনের সদস্য করা হয়েছে। তিনি কাস্টমস রপ্তানি, বন্ড ও আইটির সদস্য হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন।
অন্যদিকে বিসিএস (কর) ক্যাডারের ৪৬ কর্মকর্তা পদোন্নতি পেয়েছেন। উপ-কর কমিশনার থেকে পদোন্নতি পেয়ে তারা ৫ম গ্রেডে যুগ্ম কর কমিশনার হয়েছেন। গত সোমবার পদোন্নতির বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ। পদোন্নতিপ্রাপ্তরা জাতীয় বেতন স্কেল, ২০১৫ অনুযায়ী ৪৩০০০-৬৯৮৫০ টাকা বেতনস্কেল প্রাপ্ত হবেন।পদোন্নতিপ্রাপ্তদের মধ্যে কয়েকজন সাম্প্রতিক সময়ে এনবিআরের আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। এদিকে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক না কাটলে রাজস্ব আহরণে বড় প্রভাব পড়বে। এমনিতেই রাজস্ব বোর্ডকে অযৌক্তিক বিশাল অঙ্কের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়। এর মধ্যে কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক থাকলে রাজস্ব আহরণে ঘাটতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করেছেন তারা।