TAXNEWSBD
যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে আবার শুল্কের অস্বস্তি
বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫ ১৬:৫১ অপরাহ্ন
TAXNEWSBD

TAXNEWSBD

যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে নতুন করে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অতিরিক্ত ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের চিঠি এই অস্বস্তির কারণ। বাংলাদেশসহ ১৪ দেশের পণ্যে বিভিন্ন হারে এবার শুল্ক আরোপ করে একযোগে চিঠি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে মূল প্রতিযোগী দেশ চীন, ভিয়েতনাম, ভারত ও পাকিস্তানের নাম নেই। এটি বাংলাদেশের জন্য অসম প্রতিযোগিতার ইঙ্গিত দেয়। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাকের রপ্তানি কমলে দেশের পোশাক খাতে এর বড় প্রভাব পড়বে।গতকাল মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পাঠানো প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশে বাংলাদেশের পণ্যে ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা জানানো হয়। আগামী ১ আগস্ট থেকে নতুন এই শুল্ক আরোপ হওয়ার কথা। নতুন এ হার কার্যকর হলে বাংলাদেশের পোশাকে শুল্ক দাঁড়াবে ৫১ শতাংশ। এর আগে গত ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশে ৬০ দেশের পণ্যে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশসহ বিভিন্ন হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তখন বাংলাদেশের পণ্যে ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা বলা হয়, যা কার্যকর হওয়ার কথা ছিল ৯ এপ্রিল। কার্যকরের দিন তিন মাসের জন্য দেশভিত্তিক বাড়তি শুল্ক আরোপ স্থগিত করা হয়। তিন মাসের এ শুল্ক বিরতির সময়সীমা শেষ হওয়ার আগে বাংলাদেশসহ ১৪ দেশের ওপর নতুন করে শুল্কহার নির্ধারণ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সরকারের উদ্যোগ যথেষ্ট নয়, লবিস্ট নিয়োগ চান রপ্তানিকারকরা

শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দরকষাকষিতে সরকারের উদ্যোগ যথেষ্ট ছিল না বলে মনে করেন রপ্তানিকারক উদ্যোক্তারা। প্রথম দফা ৩৭ শতাংশ শুল্ক ঘোষণার পর গত প্রায় তিন মাসে বলার মতো কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারেনি সরকার। কয়েকজন রপ্তানিকারক   বলেন, কী আলোচনা হচ্ছে, কারা আলোচনা করছে, সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানানো হয়নি সরকারের তরফ থেকে।প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু গতকাল   বলেন, প্রথম দফা শুল্ক আরোপের ঘোষণার পরই সরকারকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে গ্রহণযোগ্য সমাধানের অনুরোধ জানিয়েছিলাম। প্রধান উপদেষ্টাকে সরাসরি সম্পৃক্ত হতে অনুরোধ জানানো হয়েছিল। তিনি জানান, গতকালের চিঠির পর আবার আজ বুধবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য সময় চেয়েছেন তারা। বৈঠকে ওয়াশিংটনকে রাজি করাতে লবিস্ট নিয়োগের জন্য অনুরোধ জানানো হবে। এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টা নিজেই যেন সরাসরি সম্পৃক্ত হন, সে ব্যাপারে ফের অনুরোধ জানানো হবে।

বিজিএমইএ সভাপতি জানান, শেষ পর্যন্ত বাড়তি শুল্ক কার্যকর হলে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পাবে। বিশেষ করে যেসব কারখানা যুক্তরাষ্ট্রে ৫০ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি হারে রপ্তানি করে থাকে। কারণ, খুব শিগগিরই বিকল্প বাজার ধরা সম্ভব নয়। এ ছাড়া ভিয়েতনামের পণ্য বাংলাদেশের চেয়ে ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ এগিয়ে থাকবে। সেটাকে মোকাবিলা করা সম্ভব হবে না। অন্যদিকে ভারত, পাকিস্তানের বেলায় কী হারে শুল্ক আরোপ হয়, সেটাও দেখার বিষয়।জানতে চাইলে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন  বলেন, বুধবার শুল্ক আরোপের বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি বৈঠক আছে। সেখানে কী সিদ্ধান্ত হয়, তার পর ধারণা করা যাবে রপ্তানিতে কী ধরনের প্রভাব পড়বে। তবে বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য সরকারকে অনুরোধ করেছি।পাল্টা শুল্ক রপ্তানিতে কী ধরনের প্রভাব ফেলবে, তা তিনটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করবে বলে জানান বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি ফজলে এহসান শামীম। তিনি বলেন, এখনই বাংলাদেশের ভয়ের কোনো কারণ নেই। তবে ট্রাম্প প্রশাসন চীনের ক্ষেত্রে কী সিদ্ধান্ত নেবে, ভারতের সঙ্গে কী শর্তে চুক্তি করবে এবং ব্রিকসভুক্ত দেশগুলোর ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে কিনা এই তিনটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করবে বাংলাদেশের রপ্তানির গতিবিধি।

তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি চীনে অতিরিক্ত শুল্ক বসায় এবং ভারতকে ছাড় না দেয়, তাহলে বাংলাদেশের ভয় কম থাকবে। এ ছাড়া ব্রিকসের দেশগুলোর ওপর যদি ১০ শতাংশ অতিরিক্ত পাল্টা শুল্ক আরোপ করে, তাতেও বাংলাদেশের সমস্যা হবে না বরং ভালো হবে। কারণ, এসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সমঝোতা না হলে দেশটি ভিয়েতনাম থেকে আমদানি কয়েক গুণ করবে। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করার মতো সেই সক্ষমতা নেই ভিয়েতনামের। ফলে চীন, ভারত ও ব্রিকসের রপ্তানি আদেশগুলো বাংলাদেশেও স্থানান্তরিত হবে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের রপ্তানিতে শুল্ক ৩৫ শতাংশ আরোপ করা হলেও মোটা দাগে সমস্যা হবে না।বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি বলেন, শুল্ক আরোপ ঠেকাতে সরকারের প্রতি তাঁর পরামর্শ ট্রাম্প প্রশাসন চীন ও ভারতের ক্ষেত্রে কী সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে, সে বিষয়ে খোঁজখবর রাখতে হবে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দরকষাকষির বিষয়ও চালিয়ে যেতে হবে।