বিনিয়োগের সীমাবদ্ধতা কাটাতে গত এক দশকের ওপর বাংলাদেশের অগ্রগতি ধীর। নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ পরিষেবা নিশ্চিতে প্রচেষ্টা থাকলেও অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, অর্থায়নের সীমিত পণ্য, আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতা, বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর অন্যায্য করের বোঝা এবং দুর্নীতি বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগে অন্যতম বাধা। বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ২০২৫ সালে বিবৃতিতে এমন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।এতে বলা হয়েছে, বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়নে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রচেষ্টা এখনও বাস্তবায়নের প্রাথমিক পর্যায়ে। ধীরগতির ও দুর্নীতিগ্রস্ত বিচার ব্যবস্থা (সংস্কারাধীন) এবং বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা ব্যবসায়িক চুক্তির বাস্তবায়ন এবং ব্যবসায়িক বিরোধের সমাধানের পথে বাধা।মেধাসম্পদ (আইপিআর) এবং শ্রম অধিকার ইস্যুতে বিধিবিধান বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যকর উদ্যোগ নেই। সরকার মেধাসম্পদ সংরক্ষণে যথেষ্ট সম্পদ বরাদ্দ করছে না। যদিও বাংলাদেশ গত দশকে তৈরি পোশাক কারখানার অগ্নি ও ভবন নিরাপত্তায় উন্নতি করেছে। তবে শ্রমিকরা সংগঠিত হওয়া এবং যৌথ দরকষাকষিতে তাদের অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে আইনি বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন।
২০২৪ সালে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং উচ্চ আমদানির ফলে বাংলাদেশের ব্যালেন্স অব পেমেন্ট ভারসাম্যে উল্লেখযোগ্য ঘাটতি দেখা দেয়। মোট বৈদেশিক মুদ্রার মজুত ২০২১ সালের আগস্টে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের সর্বোচ্চ থেকে ২০২৪ সালে ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে, ২০২৫ সালের মার্চ মাসে তা সামান্য পুনরুদ্ধারের ফলে ২০ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে। অন্তর্বর্তী সরকার বিদেশি বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করে, শেখ হাসিনা আমলের এমন দুটি পদ্ধতি অপসারণের জন্য কাজ করছে। এগুলো হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রদেয় বৈদেশিক মুদ্রার পরিশোধ বিলম্ব করা এবং বাংলাদেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা স্থানান্তরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদনের প্রয়োজনীয়তা।ব্যাংকিং কেলেঙ্কারির কারণে বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি দেখা দেয়। বেশ কয়েকটি প্রথম সারির ব্যাংক ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে বড় অঙ্কের ও সন্দেহজনক ঋণ দেয়, যারা পরবর্তী সময়ে ঋণখেলাপি হয়। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে খেলাপি ঋণ বেড়ে ২৮ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার হয়। অন্তর্বর্তী সরকার আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে এই খাতকে সামঞ্জস্য করার জন্য ব্যাংকিং খাতের সংস্কারকে অগ্রাধিকার দিয়েছে।
২০২৩ সালে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ জোরদার করার জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণ গ্রহণ করে বাংলাদেশ। সংস্থাটির নির্বাহী সভা বর্ধিত ঋণ সুবিধার অধীনে ৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার এবং স্থিতিস্থাপকতা ও টেকসই সুবিধার অধীনে ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার অনুমোদন করে। সাতটি কিস্তির চতুর্থ কিস্তি ২০২৫ সালের জুন মাসে পাওয়ার কথা ছিল। এ কিস্তি পেতে আইএমএফের সুপারিশের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সংস্কার বাস্তবায়নের অঙ্গীকার ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু রাজস্ব থেকে জিডিপি অনুপাতিক প্রয়োজনীয় সংস্কার বাস্তবায়ন না হওয়ায় সংস্থাটি চতুর্থ ঋণের কিস্তি স্থগিত করে।২০১৩ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের গড় বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের ২০২৫ সালের এপ্রিলের পূর্বাভাস অনুসারে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৩ শতাংশ হবে বলে ধারণা করা হয়েছে।