দশ পণ্যে রাজস্ব আহরণে ধসআমদানিনির্ভর নিত্যপণ্যের শুল্ককর যৌক্তিক হতে হবেমেট্রোরেলে ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার চায় আইপিডিস্বর্ণালংকারে ভ্যাট কমানোর দাবি বাজুসেরসিগারেটে কর বাড়ানোর আহ্বান এমপিদের
No icon

চুক্তি আছে কর অব্যাহতির, তবু দাবি করেছে কাস্টমস হাউজ

দেশের দ্বিতীয় এবং বেসরকারি খাতে একমাত্র এলএনজি সরবরাহকারী সংস্থা সামিট এলএনজি টার্মিনাল কোম্পানি (প্রাইভেট) লিমিটেড কর্তৃক আমদানিকৃত মালামালের মূল্যের ওপর শুল্ক ও করাদি পরিশোধের দাবি করেছে চট্টগ্রাম কাস্টস হাউজ। এজন্য প্রায় ৬২ লাখ টাকা বরাদ্দের জন্য অর্থ বিভাগকে চিঠি দিয়েছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। কিন্তু সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী সংস্থাটি ভ্যাট, ট্যাক্স, শুল্ক, সিডি, এসডি থেকে অব্যাহতি পেয়েছে। অর্থ বিভাগে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, কক্সবাজারের মহেশখালীতে ৫০০ এমএসসিএফডি ক্ষমতাসম্পন্ন দ্বিতীয় ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের জন্য গত ২০১৭ সালের ২০ এপ্রিল সামিট এলএনজি টার্মিনাল কোম্পানির সঙ্গে ইম্লিমেন্টেশন অ্যাগ্রিমেন্ট এবং টার্মিনাল ইউজ অ্যাগ্রিমেন্ট স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির ধারা ১৩ এর আলোকে সামিট এলএনজি টার্মিনাল কোম্পানি সব ধরনের ভ্যাট, ট্যাক্স, শুল্ক, সিডি, এসডি থেকে অব্যাহতি প্রাপ্ত হয়েছে।

এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্তৃক গত ২০১৭ সালের ২৮ নভেম্বর জারিকৃত এসআরও- এর শর্ত ছ-এ উল্লেখ আছে, পার্মানেন্ট ইমপোর্ট ক্যাটাগরিতে আমদানিকৃত পণ্যসমূহের ওপর প্রযোজ্য শুল্কের পরিমাণ প্রাক্কলন করে জ্বালানি খনিজ সম্পদ বিভাগ কর্তৃক আমদানি পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে অর্থ বিভাগ থেকে বরাদ্দ গ্রহণ পূর্বক শুল্ক পরিশোধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করতে হবে।

এ অবস্থায় সামটি এলএনজি টার্মিনাল কোম্পানি (প্রাইভেট) লিমিটেড কর্তৃক আমদানিকৃত পণ্য মূল্যের ওপর আদায়যোগ্য শুল্ক-করাদি পরিশোধের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ কর্তৃক জারিকৃত ১০টি দাবিনামার বিপরীতে অর্থ পরিশোধের লক্ষ্যে ৬১ লাখ ২৫ হাজার ৩৬১ টাকা বরাদ্দ চেয়েছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।

সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ যেটা দাবি করেছে তা তারা যৌক্তিকভাবেই চেয়েছে। অন্যদিকে যেহেতু শুল্ক,ভ্যাট মওকুফের বিষয়ে সামিট গ্রুপের সঙ্গে সরকারের চুক্তি হয়েছে। এখানে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির কাছে দাবিকৃত অর্থ সরকারকেই পরিশোধ করতে হবে। বিষয়টি দু-একদিনের মধ্যেই সুরাহা হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।

সামিট গ্রুপের সঙ্গে ভাসমান টার্মিনাল থেকে এলএনজি সরবরাহ সংক্রান্ত সরকারের সঙ্গে ২০১৭ সালে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই গত বছর আগস্টে ভাসমান টার্মিনাল থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রতিদিন ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, সামিটের ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ/টার্মিনাল) থেকে গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণের জন্য পাইপলাইনে বড় ধরনের সংযুক্তি কাজ হয়। সেদিন অন্তত ১২ ঘণ্টা পেট্রোবাংলা-এক্সিলারেট এনার্জিও এলএনজি জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ বন্ধ ছিল। এরপর সামিটের এলএনজি পরীক্ষামূলকভাবে সরবরাহ শুরু করে। টার্মিনালের পূর্ণ ক্ষমতার ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস পাইপলাইনে সরবরাহ শুরু হয়। টার্মিনালটির মালিকানার ৭৫ শতাংশ সামিট করপোরেশনের এবং বাকি ২৫ শতাংশ জাপানের মিত্সুবিশি করপোরেশনের। যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিলারেট এনার্জি ঠিকাদার কোম্পানি হিসেবে এটি ১৫ বছর পরিচালনা করবে।

পেট্রোবাংলার মালিকানাধীন দেশের প্রথম এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়। ওই টার্মিনালেরও দৈনিক ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করার ক্ষমতা রয়েছে। সব মিলিয়ে দেশ আমদানিকৃত এলএনজি থেকে প্রতিদিন ১০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস পাচ্ছে ।

জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে বর্তমানে দৈনিক ২৭৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস উৎপাদিত হচ্ছে। চাহিদা রয়েছে প্রায় ৪২৫ কোটি ঘনফুট গ্যাসের। অর্থাৎ প্রায় ১৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের সংকট রয়েছে। এ অবস্থায় পেট্রোবাংলা এবং সামিটের গ্যাসে ১০০ কোটি ঘনফুট ঘাটতি কমিয়েছে।

দেশের আবাসিক, শিল্প ও বাণিজ্য খাতে গ্যাসের চাহিদা ও জোগানে যে বড় ফারাক তৈরি হয়েছিল এলএনজি তা কমিয়ে আনছে। চলতি বছরের মধ্যেই এ ঘাটতি পুরোপুরি দূর করা যাবে বলে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে সরকার আর কোনো ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরপর স্থলভিত্তিক টার্মিনাল নির্মিত হবে। এ হিসেবে সামিটের টার্মিনালটিই দেশের দ্বিতীয় ও শেষ ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল। এ টার্মিনালে আমদানি করা এলএনজি থেকে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৫০ কোটি ঘনফুট প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ করা হবে। এভাবে ১৫ বছর চলার পর পেট্রোবাংলার কাছে টার্মিনালটির দায়িত্ব হস্তান্তর করবে সামিট গ্রুপ।