৯। উপকরণ কর
৯.১। উপকরণ কর রেয়াত গ্রহণ:
মূসক ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে একজন নিবন্ধিত করদাতা তার সরবরাহকৃত পণ্য বা সেবার উপর প্রদেয় মূসক(উৎপাদ কর) এর বিপরীতে উক্ত পণ্য বা সেবায় ব্যবহৃত উপকরণের উপর পরিশোধিত মূসক (উপকরণ কর) ফেরত নিতে পারেন। এই ফেরত নেয়াই কর রেয়াত গ্রহণ।
করযোগ্য পণ্য বা সেবা সরবরাহের সাথে সংশ্লিষ্ট পণ্য/সেবাই উপকরণ। উপকরণের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে-
-পণ্য প্রস্তুতকরণের জন্য আমদানীকৃত বা বাংলাদেশের ভেতর থেকে সংগৃহীত সকল কাঁচামাল
-পুনঃ বিক্রয়ের জন্য আমদানীকৃত বা ক্রয়কৃত যে কোনো পণ্য
-ল্যাবরেটরী রিএজেন্ট, ল্যাবরেটরী ইকুইপমেন্ট এবং ল্যাবরেটরী এ্যাকসেসরীজ; -যে কোন গ্যাস, জ্বালানী হিসেবে ব্যবহৃত যে কোন পদার্থ -মোড়ক সামগ্রী -সেবা (টেলিফোন, বিদ্যুৎ ইত্যাদি)
-যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ
একজন নিবন্ধিত ব্যক্তি উপকরণের উপর যে মূসক প্রদান করেন তা-ই উপকরণ কর । উল্লেখ্য, উপকরণের উপর পরিশোধিত সম্পূরক শুল্ক ও টার্নওভার কর রেয়াত গ্রহণ করা যায় না।
কবল মূসক নিবন্ধিত করদাতা করযোগ্য পণ্য বা সেবা সরবরাহের বিপরীতে উপকরণ কর রেয়াত গ্রহণ করতে পারেন। অব্যাহতিপ্রাপ্ত পণ্য বা সেবা সরবরাহের ক্ষেত্রে উক্ত পণ্য বা সবায় ব্যবহৃত উপকরণের উপর কোনো কর রেয়াত পাওয়া যায় না।
উপকরণ কর রেয়াত গ্রহণের পূর্বে যে উপকরণের উপর কর রেয়াত গ্রহণ করা হবে তা নিবন্ধিত করদাতার ব্যবসা অঙ্গনে থাকতে হবে এবং এ উপকরণ ক্রয় সংক্রান্ত চালানপত্র বা বিল অব এন্ট্রি তার নিজ নামে এবং তার দখলে থাকতে হবে।
ব্যবসায় অঙ্গনে উপকরণ প্রবেশের পর, ক্রয় হিসাব রেজিস্টারে এন্ট্রি দেয়ার পরবর্তী ২ (দুই) করমেয়াদের মধ্যে উপকরণ কর রেয়াত গ্রহণ করতে হবে।
মাসিক দাখিলপত্রে মোট প্রদেয় উৎপাদ কর হিসাব করে তা থেকে মোট উপকরণ কর বাদ
দেয়া হয়; উৎপাদ করের পরিমাণ উপকরণ করের চেয়ে বেশী হলে অতিরিক্ত কর নীট কর হিসাবে সরকারী কোষাগারে জমা প্রদান করতে হয়; অন্যদিকে, উৎপাদ করের পরিমাণ উপকরণ করের কম হলে পরবর্তী করমেয়াদে তা জের হিসাবে প্রদর্শন করা হয়।
৯.২। যে সব ক্ষেত্রে উপকরণ কর রেয়াত গ্রহণ করা যায় না:
একান্তভাবে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ক্রয় করা হলেও বা শুধুমাত্র করযোগ্য পণ্য বা সেবা সরবরাহের সাথে সম্পৃক্ত হলেও কতিপয় ক্ষেত্রে উপকরণ কর রেয়াত গ্রহণ করা যায় না।
যেমন-
(১) অব্যাহতিপ্রাপ্ত পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত উপকরণের উপর পরিশোধিত মূল্য সংযোজন কর;
(২) টার্ণওভার করের আওতাভুক্ত করদাতার নিকট হতে সংগৃহীত উপকরণের উপর পরিশোধিত টার্ণওভার কর;
(৩) পণ্য উৎপাদন বা সেবা প্রদানে ব্যবহৃত উপকরণের উপর পরিশোধিত সম্পূরক শুল্ক ;
(৪) প্রথমবার ব্যতীত অন্য কোন দফায় পুনঃ ব্যবহারযোগ্য মোড়কের উপর পরিশোধিত মূল্য সংযোজন কর;
(৫) করযোগ্য পণ্য উৎপাদন বা করযোগ্য সেবা প্রদানের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত হলেও
কান দালান-কোঠা বা অবকাঠামো বা স্থাপনা নির্মাণ, সুষমীকরণ, আধুনিকীকরণ, প্রতিস্থাপন, সম্প্রসারণ, পুনঃসংষ্কারকরণ ও মেরামতকরণ, সকল প্রকার আসবাবপত্র, ষ্টেশনারী দ্রব্যাদি, এয়ারকন্ডিশনার, ফ্যান, আলোক সরঞ্জাম, জনারেটর ইত্যাদি ক্রয় বা মেরামতকরণ, স্থাপত্য পরিকল্পনা ও নক্শা ইত্যাদির সাথে সংশ্লিষ্ট পণ্য এবং সেবার উপর পরিশোধিত মূল্য সংযোজন কর;
(৬) করযোগ্য পণ্য উৎপাদন বা সরবরাহ বা করযোগ্য সেবা প্রদানের সাথে সম্পৃক্ত, বিধি দ্বারা নির্ধারিত, বিভিন্ন পণ্য ও সেবা এবং তার উপর পরিশোধিত মূল্য সংযোজন করের হারের অতিরিক্ত মূল্য সংযোজন কর;
(৭) ভ্রমণ, আপ্যায়ন, কর্মচারীর কল্যাণ ও উন্নয়নমূলক কাজের ব্যয়ের বিপরীতে পরিশোধিত মূল্য সংযোজন কর;
(৮) পণ্যের করযোগ্য মূল্য ভিত্তির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত নয় এমন উপকরণের বিপরীতে পরিশোধিত মূল্য সংযোজন কর; এবং নির্ধারিত পরিমাণ মূল্য সংযোজনের ভিত্তিতে মূসক প্রদানকারী ব্যবসায়ী কর্তৃক ক্রয়কৃত উপকরণের উপর পরিশোধিত উপকরণ কর;
(৯) সংকুচিত মূল্যভিত্তির সেবা প্রদানকারী কর্তৃক ক্রীত উপকরণের উপর পরিশোধিত মূল্য সংযোজন কর;
(১০) ট্যারিফ মূল্যের ভিত্তিতে পণ্য সরবরাহকারী কর্তৃক ক্রীত উপকরণের উপর পরিশোধিত মূল্য সংযোজন কর;
(১১) পণ্যের সরবরাহকারী, ব্যবসায়ী বা সেবা প্রদানকারীর নিবন্ধন সংখ্যা ব্যতীত অন্য
কোন নিবন্ধন সংখ্যা সম্বলিত বিল অব এন্ট্রি বা চালানপত্রে উল্লিখিত উপকরণ কর;
(১২) অন্যের অধিকারে, দখলে, তত্ত্বাবধানে রক্ষিত পণ্যের উপর পরিশোধিত মূল্য সংযোজন কর ;
(১৩) ক্রয় হিসাব পুস্তকে অন্তর্ভুক্ত নয় এমন উপকরণের ওপর পরিশোধিত মূসক;
(১৪) ব্যাংক গ্যারান্টির মাধ্যমে খালাসকৃত উপকরণ এর ওপর পরিশোধিত মূসক ব্যাংক গ্যারান্টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত রেয়াত নেয়া যাবে না;
(১৫) এক লক্ষ টাকা বা তদূর্ধ্ব মূল্যের উপকরণ ব্যাংকিং বা ইলেক্ট্রনিক মাধ্যম ব্যতীত নগদে ক্রয় করলে এরূপ উপকরণের ওপর পরিশোধিত মূসক।
৯.৩। আংশিকভাবে রেয়াতযোগ্য উপকরণ কর :
উপকরণ হিসাবে ব্যবহৃত কিছু সেবার বিপরীতে পরিশোধিত কর ১০০% উপকরণ কর হিসাবে রেয়াত গ্রহণ করা যায় না। এসব সেবার ক্ষেত্রে কি পরিমাণ উপকরণ কর রেয়াত পাওয়া যাবে তা নিম্নে দেখানো হলো : বীমা, গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিতরণের উপর পরিশোধিত মূসকের ৮০% রেয়াতযোগ্য। নিম্নোক্তক্ষেত্রে পরিশোধিত মূসকের ৬০% রেয়াতযোগ্য : -টেলিফোন, টেলিপ্রিন্টার, ফ্যাক্স ও ইন্টারনেট -ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স -ক্লিয়ারিং ও ফরোয়ার্ডিং এজেন্ট -ওয়াসা -অডিট, একাউন্টিং ফার্ম -যোগানদার -আইন পরামর্শক -সিকিউরিটি সার্ভিস -পরিবহন ঠিকাদার -ঋণপত্র
৯.৪। করযোগ্য ও অব্যাহতিপ্রাপ্ত পণ্য/ সেবা একই সাথে উৎপাদন বা সরবরাহের ক্ষেত্রে
রেয়াতের বিধান:
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, অব্যাহতিপ্রাপ্ত পণ্য বা সেবার ক্ষেত্রে উপকরণ কর রেয়াত গ্রহণের সুযোগ নেই। কোনো করদাতা যদি একই সাথে করযোগ্য ও অব্যাহতিপ্রাপ্ত পণ্য বা
সেবা সরবরাহ করেন তবে তিনি করযোগ্য পণ্য বা সেবায় যে উপকরণ ব্যবহার করেছেন শুধু তার উপরই রেয়াত পাবেন। প্রতি করমেয়াদের মূসক দাখিলপত্রে অব্যাহতিপ্রাপ্ত পণ্য বা সেবায় ব্যবহৃত উপকরণের হিসাব দিতে হবে এবং চলতি হিসাবে প্রয়োজনীয় সমন্বয় করতে হবে।
৯.৫। ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংসপ্রাপ্ত উপকরণের ক্ষেত্রে কর রেয়াত:
ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংসপ্রাপ্ত বা অন্যকোনোভাবে সরবরাহের অনুপযোগী পণ্যের নিষ্পত্তির জন্য স্থানীয় মূল্য সংযোজন কর কার্যালয়ে আবেদন করতে হয়। প্রয়োজনীয় পরীক্ষান্তে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কর্মকর্তা এরূপ পণ্যের নিষ্পত্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রদান করবেন এবং তদানুযায়ী ধ্বংসপ্রাপ্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত পণ্যের ক্ষেত্রে উক্ত পণ্য প্রস্তুত করণে ব্যবহৃত উপকরণ বাবদ গৃহীত উপকরণ কর রেয়াত বাতিল হবে। এ মর্মে করদাতা চলতি হিসাব ও দাখিলপত্রে সমন্বয় করবেন।
৯.৬। অতিরিক্ত উপকরণ কর:
উপকরণ কর যদি উৎপাদ করের চেয়ে বেশী হয় তবে, যে পরিমাণে বেশী হবে তা করদাতার চলতি হিসাবে জের হিসাবে থেকে যাবে এবং তিনি পরবর্তী কর মেয়াদের প্রদেয় করের সাথে তা সমন্বয় করতে পারবেন।
উদাহরণস্বরূপ, কোনো মাসে যদি একজন করদাতার পরিশোধিত উপকরণ করের পরিমাণ ৭৫,০০০ টাকা এবং ঐ একই মাসে তার সরবরাহকৃত পণ্য/সেবার বিপরীতে প্রদেয় মূসকের (উৎপাদ করের) পরিমাণ ৬০,০০০ টাকা হয়, তবে সেই মাসে উক্ত করদাতার দাখিলপত্রে নীট প্রদেয় হিসাবে কোনো অংক প্রদর্শিত হবে না; বরং জের কলামে ১৫,০০০ টাকা থাকবে। এটা ধারাবাহিকভাবে অগ্রায়িত হবে এবং পরবর্তী মাসের দাখিলপত্রে তিনি তা থেকে প্রদেয় মূসক সমন্বয় করতে পারবেন। যে সব করদাতাদের উপকরণ কর
রেয়াতের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে বিশেষ করে যারা একই সাথে স্থানীয়ভাবে বিক্রি এবং রপ্তানি করেন তাদের ক্ষেত্রে, তাদের জন্য কর প্রত্যর্পণ পাওয়ার বিশেষ সুযোগ আছে।
৯.৭। কর প্রত্যর্পণ পদ্ধতি
নিবন্ধিত রপ্তানিকারকরগণ তাদের পণ্যের রপ্তানি সম্পন্ন হওয়ার পর দাখিলপত্রের ভিত্তিতে মূসক ও অন্যান্য শুল্ক করাদি প্রত্যর্পণ গ্রহণ করতে পারেন। প্রত্যর্পণ কম সময়ে পাওয়ার জন্য সরাসরি শুল্ক রেয়াত ও প্রত্যর্পণ পরিদপ্তরে (উঁঃু ঊীবসঢ়ঃরড়হ ্ উৎধনিধপশ ঙভভরপব-উঊউঙ) আবেদন করার বিধান রয়েছে। এ বিষয়ে মূসক ব্যবস্থায় প্রত্যর্পণ কার্যক্রম পুস্তিকা-১৫ দেখা যেতে পারে।