২। চূড়ান্ত ভোক্তাই মূসক পরিশোধ করেন:
নিবন্ধিত করদাতা যে মূল্যে তার পণ্য বা সেবা সরবরাহ করেন সেই মূল্যের উপর নির্দিষ্ট হারে মূসক পরিশোধ করেন। পণ্যের উৎপাদন থেকে বিতরণ ব্যবস্থার প্রতিটি স্তরে যখনই পণ্যের হাত বদল হয়, তার প্রতিটি ক্ষেত্রে মূসক পরিশোধিত হয়ে থাকে। সেবা প্রদানের ক্ষেত্রেও তাই। যদিও বিক্রয় মূল্যের সাথে ক্রয়মূল্যের পার্থক্যই মূল্য সংযোজন, তথাপি বিক্রয় মূল্যের উপর নির্ধারিত হারে মূসকের পরিমাণ হিসেব করতে হয়। তবে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই (যে ক্ষেত্রে কর রেয়াত গ্রহণ করা যায়) করদাতা প্রদেয় মূসক থেকে তার সরবরাহকৃত পণ্য বা সেবায় ব্যবহৃত উপকরণ ক্রয় বা আমদানীর ক্ষেত্রে যে মূসক পরিশোধ করেছেন তা বাদ দিয়ে অবশিষ্ট মূসক সরকারের ট্রেজারীতে জমা করেন। একজন ব্যবসায়ী তার পণ্য/সেবা বিক্রয়ের উপর যে মূসক প্রদান করেন তাকে বলা হয় উৎপাদ কর। আর তিনি তার পণ্য/সেবা তৈরীতে ব্যবহৃত উপকরণ ক্রয়ের জন্য যে মূসক দিয়ে এসেছেন তাকে বলা হয় উপকরণ কর। এ দুটির পার্থক্যের পরিমাণ মূসক করদাতা কর্তৃক পরিশোধিত হয়। প্রতিটি স্তরে, এই পরিমাণ মূসকই সরকারের কোষাগারে জমা দেয়া হয়। চূড়ান্ত ভোক্তার উপরই করের আপতন বর্তায়।
একটি উদাহরণের সাহায্যে এই ধারণাটি বোঝানো যেতে পারেঃ
একজন সিমেন্ট প্রস্তুতকারক ক্লিংকার আমদানি পূর্বক সিমেন্ট তৈরি করে তা ডিলারের কাছে বিক্রয় করলেন ১৫,৭৫০ টাকা + মূসক দিয়ে।
ওই ডিলার ১৪% মূল্য সংযোজন করে উক্ত সিমেন্ট একজন মিডিয়াম হোলসেলারের কাছে বিক্রি করলেন ১৭,৯৫৫ + মূসকসহ মূল্যে।
অত:পর মিডিয়াম হোলসেলার ঐ সিমেন্ট পুনরায় ১৪% মূল্য সংযোজন করে খুচরা বিক্রেতার নিকট বিক্রয় করলেন ২০৪৬৮.৭০ + ১৫% মূসকসহ মূল্যে। খুচরা বিক্রেতা পুনরায় ক্রয়মূল্যের সাথে ১৪% মূল্য সংযোজন করে চূড়ান্ত ভোক্তার নিকট বিক্রয় করবেন ২৩,৩৩৪.৩২ + ১৫% মূসকসহ মূল্যে। এই ক্ষেত্রে ভ্যাট পরিশোধিত হবে নিম্নোক্তভাবেঃ
১ আমদানি মূল্য ১০,০০০/- টাকার সাথে ৭.৫% কাস্টমস ডিউটি যোগ করে
২ মূল্য সংযোজন = ট্রান্সপোর্ট, শ্রমিক, মেশিনারী অবচয়, ওভারহেড ইত্যাদি খরচসহ অন্যান্য সকল খরচ ও মুনাফা
৩ উপকরণ মূল্যের সাথে ১৪% মূল্য সংযোজন ধরে
এক্ষেত্রে ক্লিংকার আমদানিপূর্বক সিমেন্ট উৎপাদককে তার বিক্রয়ের উপর ১৫% হারে ২৩৬২.৫০ টাকা মূসক আদায় করে উপকরণ কর ৬১২.৫০ টাকা রেয়াত গ্রহণের পর সরকারকে নীট মূসক ৭৫০ টাকা জমা দিতে হবে। ডিলারকে তার বিক্রয়ের উপর ২৬৯৩.২৫ টাকা মূসক আদায় করে উপকরণ কর ২৩৬২.৫০ টাকা রেয়াত গ্রহণের পর সরকারকে নীট ৩৩০.৭৫ টাকা মূসক প্রদান করতে হবে। হোলসেলারকে তার বিক্রয়ের মূল্যের উপর ১৫% হারে ৩০৭০.৩১ টাকা মূসক আদায় করে উপকরণ কর ২৬৯৩.২৫ টাকা রেয়াত গ্রহণের পর অবশিষ্ট ৩৭৭.০৬ টাকা মূসক সরকারকে জমা দিতে হবে। তেমনি খুচরা বিক্রেতাকে তার বিক্রয় মূল্যের উপর ১৫% হারে ৩৫০০.১৫ টাকা মূসক আদায় পূর্বক উপকরণ কর ৩০৭০.৩১ টাকা রেয়াত গ্রহণ করে সরকারকে ৪২৯.৮৪ টাকা মূসক জমা দিতে হবে। এখানে সরকারী কোষাগারে মোট মূসক জমা হচ্ছে আমদানি পর্যায়ে পরিশোধিত মূসক ১৬১২.৫০ টাকা এবং বিক্রয় পর্যায়ে পরিশোধিত মূসক ১৮৮৭.৬৫ টাকা মোট ৩৫০০.১৫ টাকা। খুচরা বিক্রেতার কাছ থেকে যিনি ক্রয় করেছেন সে ক্রেতার উপর এই মোট মূসক ৩৫০০.১৫ টাকার ভার পড়ছে, কারণ ঐ ক্রেতা এখানে চূড়ান্ত ভোক্তা। অর্থাৎ এই প্রক্রিয়ায়, ব্যবসার প্রতিটি স্তরে সংযোজিত মূল্যের উপর প্রদেয় মূসকের পুরো ভার পড়ে চূড়ান্ত ভোক্তার উপর।