১০। বিশেষ ব্যবস্থাসমূহ
১০.১। সংকুচিত ভিত্তিমূল্য (প্রকৃত মূল্য সংযোজনের বা নির্ধারিত মূল্য সংযোজনের হার) :
পণ্য বা সেবা সরবরাহের বিনিময়ে প্রাপ্ত পূর্ণ মূল্যের উপর মূসক আরোপ করা এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে উপকরণ কর রেয়াত গ্রহণ করা বিশ্বব্যাপী মূল্য সংযোজন কর ব্যবস্থার একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য। কিন্তু, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, এমন অনেক ব্যবসায়ী আছেন যাদের পক্ষে উপকরণ কর রেয়াত নেয়ার জন্য যে পদ্ধতিতে হিসাব সংরক্ষণ করতে হয় বা যে সব দলিলাদি রাখতে হয়, তা তাদের পক্ষে রাখা সম্ভব হয় না। এই ধরণের সমস্যা নিরসনের জন্য বিশ্বের অনেক দেশে বিশেষ ধরনের ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।
সংকুচিত ভিত্তিমূল্যের উপর মূসক প্রদান এ ধরনের একটি সহজীকৃত বিশেষ পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে পণ্যের মোট মূল্যের (উপকরণ মূল্য + মূল্য সংযোজন) পরিবর্তে মূল্য সংযোজনের পরিমাণকে বিবেচনায় রাখা হয়। সহজ ভাষায় বলতে গেলে সংকুচিত ভিত্তিমূল্য পদ্ধতি হচ্ছে এমন একটি পদ্ধতি যে পদ্ধতিতে কোন পণ্য/সেবার মোট মূল্যের একটি অংশকে করযোগ্য মূল্য হিসেবে ধার্য করা হয় এবং ঐ আংশিক মূল্যের উপর ১৫% হারে মূসক পরিশোধ করতে হয়। বাংলাদেশের মূসক ব্যবস্থায় কতিপয় সেবার ক্ষেত্রে এ পদ্ধতিতে মূসক পরিশোধের বিধান রয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কোন নির্মাণ সংস্থার নির্মাণ কাজের করযোগ্য মূল্য ১,০০,০০০/-টাকা হলে, এক্ষেত্রে এই মূল্যের উপর ১৫% হারে ১৫,০০০/- টাকা মূসক পরিশোধযোগ্য। কিন্তু এই সেবার ক্ষেত্রে উপকরণ কর রেয়াত গ্রহণের অসুবিধা বিবেচনা করে সরকার নির্মাণ সংস্থার ক্ষেত্রে করযোগ্য মূল্য ১,০০,০০০/- টাকার পরিবর্তে ৩৬,৬৭০/- টাকা ধার্য করায় অর্থাৎ নির্মাণ কাজের করযোগ্য মূল্যের ৩৬.৬৭% এর উপর মূসক পরিশোধের সুবিধা প্রদান করল। এই সুবিধা পাওয়ার প্রেক্ষিতে নির্মাণ সংস্থাকে ১,০০,০০০/- টাকার ৩৬.৬৭% অর্থাৎ ৩৬,৬৭০/- টাকার উপর ১৫% হারে ৫,৫০০/- টাকা মূসক পরিশোধ করতে হবে। অন্য কথায় বলা যায়, ১,০০,০০০/- টাকার উপর ৫.৫% হারে মূসক পরিশোধ করতে হবে অর্থাৎ নীট মূল্য সংযোজন করের হার ৫.৫%।
সংকুচিত ভিত্তিমূল্যে কর প্রদানকারী বিক্রেতা কর্তৃক উপকরণ কর রেয়াত গ্রহণের কোন সুযোগ নেই। কারণ, এই সংকুচিত ভিত্তিমূল্যের ক্ষেত্রে হিসাব এমনভাবে করা হয়েছে যে, একজন ব্যবসায়ী উপকরণ কর রেয়াত গ্রহণ করে যে পরিমাণ নীট মূসক সরকারী কোষাগারে জমা দিতেন, সংকুচিত মূল্যভিত্তিতে প্রদেয় মূসকের পরিমাণও তাই। তবে, সংকুচিত ভিত্তিমূল্যের কোন সেবাপ্রদানকারী যদি নিজের জন্য সুবিধাজনক মনে করেন তবে তিনি সংকুচিত মূল্যভিত্তির পরিবর্তে মোট করযোগ্য মূল্যের উপর ১৫% মূসক প্রদান করতে পারবেন এবং রেয়াত নিতে পারবেন। এটি একটি স্বেচ্ছাধীন ব্যবস্থা। অর্থাৎ, যেসব সেবারক্ষেত্রে এই সংকুচিত মূল্যভিত্তি নির্ধারিত আছে, সেসব ব্যবসায় নিয়োজিত করদাতারা ইচ্ছা করলে মূসকের স্বাভাবিক পদ্ধতিতে মূসক পরিশোধের সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন।
১০.২। আমদানীর ক্ষেত্রে ব্যবসায়ী মূসক উৎসে কর্তন/ অগ্রিম আদায়:
বাণিজ্যিক আমদানীকারক কর্তৃক আমদানীকৃত পণ্যের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ী মূসক আমদানি পর্যায়ে উৎসে কর্তনের বিধান আছে। এই ব্যবস্থায় আমদানীকৃত পণ্য পাইকারী/খুচরা বিক্রয় পর্যায়ে যে মূসক প্রদেয় হয় তা আমদানী পর্যায়ে অগ্রিম/ উৎসে আদায় করা হয়। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আমদানীকৃত পণ্যের মূসক আরোপযোগ্য মূল্যের সাথে আরো ২০% মূল্য সংযোজন করে অগ্রিম মূসক আদায় করা হয়ে থাকে।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আমদানি পর্যায়ে কোন পণ্যের মূসক আরোপযোগ্য মূল্য ১০০/- টাকা হলে ১০০/- টাকার সাথে ২০% অর্থাৎ ২০/- টাকা যোগ করে ২০/- টাকার উপর ১৫% হারে অথবা ১২০ টাকার উপর ৩% হারে ব্যবসায়ী মূসক অগ্রিম/ উৎসে আদায় করতে হবে। নিম্নবর্নিত আমদানির ক্ষেত্রে ব্যবসায়ী মূসক অগ্রিম/ উৎসে কর্তনযোগ্য বা আদায়যোগ্য নয়- সরকারী, আধা-সরকারী প্রতিষ্ঠান, স্বায়ত্ত্বশাসিত সংস্থা, জাতিসংঘভুক্ত সংস্থা, দূতাবাস, বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত ব্যক্তি ও সংস্থা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিজেদের ব্যবহারের জন্য আমদানিকৃত পণ্য, ১০০% রপ্তানিযোগ্য শিল্প প্রতিষ্ঠান ও ডিপ্লোমেটিক বন্ডেড ওয়্যার হাউস কর্তৃক আমদানিকৃত পণ্য, সরকারী, আধা-সরকারী ও স্বায়ত্ত্বশাসিত সংস্থা, ব্যাংক-বীমা ও এনজিও-তে দরপত্রের বা কার্যাদেশের ভিত্তিতে যোগানদার হিসাবে সরবরাহের উদ্দেশ্যে আমদানিকৃত পণ্য, মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক আমদানিকৃত পণ্য, সরকারী প্রজ্ঞাপনের আওতায় ত্রান হিসাবে আমদানিকৃত পণ্য, অন্ধ ও বধিরদের জন্য আমদানিকৃত পণ্য, সাময়িকভাবে আমদানিকৃত পণ্য ও মাননীয় সংসদ সদস্য কর্তৃক অব্যাহতি সুবিধার আওতায় আমদানিকৃত গাড়ি অথবা জীপের ক্ষেত্রে।
কোনো প্রস্তুতকারক বাণিজ্যিক আমদানিকারকের নিকট থেকে কোনো উপকরণ ক্রয় করলে তিনি উক্ত উপকরণের উপর পরিশোধিত মূসক, তার কাছে প্রয়োজনীয় দলিলাদি থাকা সাপেক্ষে, রেয়াত হিসাব গ্রহণ করতে পারেন।
১০.৩। অভিন্ন মূল্যে পণ্য বিক্রয় :
কোন উৎপাদানকারী কর্তৃক উৎপাদন পর্যায়ে বা আমদানিকারক কর্তৃক সরবরাহ পর্যায়ে পণ্যের গায়ে বা ধারকে বা প্যাকেটে দৃশ্যমান স্থানে অনপনীয় কালিতে মূল্য মুদ্রিত থাকলে উক্ত মূল্যের উপর প্রথম সরবরাহকালে মূল্য সংযোজন কর পরিশোধ করা হলে, সরবরাহের অন্য কোনো পর্যায়ে নতুন করে আর মূসক প্রদান করতে হবে না। এজন্য যে ব্যবসায়ী এই প্রক্রিয়ায় মূসক প্রদান করতে চাইবেন তাকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে আবেদন করে অনুমতি গ্রহণ করতে হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে অনুমতি প্রাপ্তির পর স্থানীয় বিভাগীয় কর্মকর্তা উক্ত প্রতিষ্ঠানের পণ্যসমূহের মূল্য (খুচরা মূল্যসহ) অনুমোদন করবেন।
১০.৪। উৎসে মূসক কর্তন :
নিম্নলিখিত প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাকে কোন পণ্য/ সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে নির্ধারিত হারে মূসক উৎসে কর্তন করে তা সরকারী কোষাগারে জমা প্রদান করতে হবে ঃ -সরকারী ও আধা-সরকারী প্রতিষ্ঠান -স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান -এনজিও -ব্যাংক, বীমা ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান -লিমিটেড কোম্পানী -শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উক্ত উৎসে কর্তনকারী দপ্তর/প্রতিষ্ঠানসমূহ কর্তৃক সকল ক্রয়ের ক্ষেত্রে উৎসে মূসক কর্তন করতে হবে। এক্ষেত্রে : ক্স যে সকল ক্ষেত্রে সংকুচিত মূল্যভিত্তি নির্ধারিত আছে, সে সকল ক্ষেত্রে সংকুচিত মূল্যভিত্তিতে উৎসে কর্তন করতে হবে।যে সকল পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে ১৫% মূসক প্রযোজ্য, সে সকল ক্ষেত্রে যদি সরবরাহকারী পণ্য/ সেবা সরবরাহের সময় প্রকৃত মূসক-১১ চালানপত্র ইস্যু না করে, তাহলে উৎসে কর্তনকারী ১৫% হারেই উৎসে কর্তন করবে।
১৫% মূসক প্রদানপূর্বক মূসক-১১ চালানপত্র ইস্যু করে কোন পণ্য বা সেবা সরবরাহ প্রদান করা হলে সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত ৩% হারে উৎসে কর্তন করতে হবে।
সেবা আমদানির ক্ষেত্রে, যে ব্যাংকের মাধ্যমে সেবা মূল্য পরিশোধ করা হবে, উক্ত ব্যাংক কর্তৃক সেবা মূল্য পরিশোধকালে সেবা মূল্যের উপর ১৫% হারে মূসক কর্তন/ আদায় করা হবে।
সকল ক্ষেত্রেই উৎসে কর্তনকারী মূসক-১২খ ফরমে প্রত্যয়নপত্র ইস্যু করবেন। অতিরিক্ত ৩% কর্তনের ক্ষেত্রে পণ্য বা সেবা সরবরাহকারী পরবর্তীতে তার দাখিলপত্র বা চলতি হিসাবে সমন্বয় করে নিতে পারবেন।