দশ পণ্যে রাজস্ব আহরণে ধসআমদানিনির্ভর নিত্যপণ্যের শুল্ককর যৌক্তিক হতে হবেমেট্রোরেলে ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার চায় আইপিডিস্বর্ণালংকারে ভ্যাট কমানোর দাবি বাজুসেরসিগারেটে কর বাড়ানোর আহ্বান এমপিদের
No icon

বিনিয়োগ করে যেভাবে কর কমাবেন

কর কম দেওয়ার পথ খোঁজেন সবাই। অনেকে অবৈধ পথও খোঁজেন। কিন্তু আপনি কি জানেন, আপনার পুরো আয় এনবিআরের কর নথিকে দেখিয়ে আগের চেয়ে কম কর দিতে পারেন। এ জন্য অবশ্য কিছু খাতে বিনিয়োগ করতে হবে। খরচ বাঁচিয়ে কিছুটা সঞ্চয় করে বিনিয়োগ করুন। বছর শেষে কর কমে যাবে। নিজের লাভের কথা চিন্তা করে একটু কৌশলী তো হতেই হবে। এবার দেখা যাক, আপনি কর কমাবেন কীভাবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কিছু খাত বলে দিয়েছে, যেখানে বিনিয়োগ করলে অনেক টাকা কর ছাড় বা কর রেয়াত পাবেন। সেটা কীভাবে? উত্তর হলো, একজন করদাতা তাঁর বছরের পুরো আয়ের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারেন। অবশ্য এর বেশি বিনিয়োগ করলে অতিরিক্ত অংশের জন্য কর রেয়াত মিলবে না। একজন বিনিয়োগকারী করদাতার বার্ষিক আয় ১৫ লাখ টাকার কম হলে মোট বিনিয়োগের বিপরীতে ১৫ শতাংশ কর ছাড় মিলবে। আর বার্ষিক আয় ১৫ লাখ টাকার বেশি হলে ১০ শতাংশ হারে কর ছাড় পাওয়া যাবে। অবশ্যই মনে রাখতে হবে, আপনি কর রেয়াত সুবিধা পেতে সর্বোচ্চ দেড় কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে পারবেন।

এবার একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। ২০১৯-২০ করবর্ষে অর্থাৎ জুলাই থেকে জুন মাস পর্যন্ত আপনি ১০ লাখ টাকা উপার্জন করেছেন। বাসাভাড়া, যাতায়াত, চিকিৎসাসহ বেশ কিছু খাতে ছাড় হিসাব করে ধরে নিলাম, এটাই আপনার করযোগ্য আয়। সংসার খরচ বাঁচিয়ে, ঈদের বোনাসের টাকা রেখে দিয়ে আপনি দুই লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনেছেন। এ ছাড়া আরও ৫০ হাজার টাকা অফিসের ভবিষ্য তহবিলে বা প্রভিডেন্ট ফান্ডে রেখেছেন। সব মিলিয়ে আপনি আড়াই লাখ টাকা বিনিয়োগ করে ফেলেছেন। তাহলে এবার দেখি, আপনি যদি সঞ্চয়পত্র না কিনতেন কিংবা প্রভিডেন্ট ফান্ডে টাকা না রাখতেন, তাহলে আপনাকে এ বছর কত কর দিতে হতো। প্রথম তিন লাখ টাকার ওপর কোনো কর নেই। তার মানে, বাকি সাত লাখ টাকার ওপর কর বসবে। প্রথম এক লাখ টাকার জন্য ৫ শতাংশ হারে ৫ হাজার টাকা কর হলো। পরের তিন লাখ টাকার জন্য ১০ শতাংশ হারে ৩০ হাজার টাকা কর ধার্য হবে। এর পরের তিন লাখ টাকার জন্য কর বসবে ১৫ শতাংশ হারে অর্থাৎ ৪৫ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে আপনার কর হলো ৮০ হাজার টাকা।

এবার আপনি কর রেয়াত নেবেন। কীভাবে নেবেন, সেটা দেখা যাক। আপনার করযোগ্য আয় ১০ লাখ টাকা। আপনি আপনার আয়ের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত অর্থাৎ আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ কর রেয়াত পাবেন। আপনি সেই আড়াই লাখ টাকার সমপরিমাণ অর্থ ইতিমধ্যে সঞ্চয়পত্র ও প্রভিডেন্ট ফান্ডে বিনিয়োগ করেছেন। বিনিয়োগের পুরো টাকাই কর রেয়াত পাবেন। আপনার আয় ১৫ লাখ টাকার কম। তাই আপনি আড়াই লাখ টাকার ১৫ শতাংশ অর্থাৎ সাড়ে ৩৭ হাজার টাকা কর ছাড় পাবেন।

আপনার মোট করের পরিমাণ ৮০ হাজার টাকা। সেখান থেকে বিনিয়োগের বিপরীতে কর রেয়াত হিসেবে সাড়ে ৩৭ হাজার টাকা বাদ দিতে হবে। এর মানে, এ বছর আপনাকে মাত্র সাড়ে ৪২ হাজার টাকা কর দিতে হবে। শুধু পরিকল্পনা করে বিনিয়োগের কারণে আপনার অনেক টাকা বেঁচে গেল।

যেখানে-সেখানে বিনিয়োগ করে আপনি কর ছাড় নিতে পারবেন না। এনবিআর কর ছাড় নেওয়ার জন্য নয়টি খাত ঠিক করে দিয়েছে। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলে কর ছাড় মেলে, এটি সচেতন করদাতারা জানেন। এমন আরও আটটি খাত আছে। এগুলো হলো, স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার, স্টক, মিউচুয়াল ফান্ড বা ডিবেঞ্চার ক্রয়; জীবনবিমার প্রিমিয়াম; সরকারি কর্মকর্তাদের প্রভিডেন্ট ফান্ড বা ভবিষ্য তহবিলের চাঁদা; স্বীকৃত ভবিষ্য তহবিলে নিয়োগকর্তা ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর চাঁদা; কল্যাণ তহবিল ও গোষ্ঠীবিমার তহবিলে চাঁদা; সরকার অনুমোদিত ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ এবং সুপার অ্যানুয়েশন ফান্ডে চাঁদা। আর ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ডিপোজিট প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ডিপিএস করলেও কর রেয়াত পাবেন। এসব পেনশন স্কিমে বার্ষিক সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকার ওপর এই কর ছাড় দেওয়া আছে।

এই নিয়ম অনুসরণ করে আপনি দান করেও কর ছাড় পেতে পারেন। অনেকেই বিভিন্ন খাতে দান করেন। একটু ভেবেচিন্তে করলে নিজের কর কমিয়ে ফেলতে পারবেন। সরকার ১৩টি খাতে দান করলে কর ছাড় দিয়েছে। এগুলো হলো জাতির জনকের স্মৃতি রক্ষার্থে নিয়োজিত জাতীয় পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান; জাকাত তহবিল; জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) অনুমোদিত দাতব্য হাসপাতাল; প্রতিদ্বন্দ্বীদের কল্যাণে স্থাপিত প্রতিষ্ঠান, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর; আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক; আহছানিয়া ক্যানসার হাসপাতাল; ঢাকা আহছানিয়া মিশন ক্যানসার হাসপাতাল; এশিয়াটিক সোসাইটি; আইসিডিডিআরবি; সিআরপি; মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষার্থে নিয়োজিত জাতীয় পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান এবং সরকার অনুমোদিত জনকল্যাণমূলক বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।