চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) বাজেট বাস্তবায়ন হার গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দশমিক ৬ শতাংশ কমেছে। টাকার হিসেবে দু'মাসে সরকার ব্যয় করেছে ৩৭ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা। এটি মোট বাজেটের ৭ দশমিক ১ শতাংশ। গত বছরে একই সময়ে মোট বাজেটের ৭ দশমিক ৭ শতাংশ ব্যয় করা হয়। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের বৈঠকে উঠে এসেছে বাজেট বাস্তবায়ন হারের এমন চিত্র। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। আরও জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের আকার হচ্ছে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯১ কোটি টাকার মধ্যে প্রথম দু'মাসে বাজেট ঘাটতি দেখা হয়েছে ২ হাজার ৩৬১ কোটি টাকা। অথচ গত বাজেটে একই সময়ে ঘাটতি না হয়ে উদ্বৃত্ত ছিল ৪ হাজার ২৬২ কোটি টাকা। অপরদিকে বাজেটের ঘাটতি পূরণে বৈদেশিক সহায়তার ব্যবহারও কমেছে। জুলাই-আগস্টে ৭০৯ কোটি টাকার সহায়তা সংগ্রহ করা হয়।
গত বছর একই সময়ে সহায়তা পাওয়া গেছে ৮৩৯ কোটি টাকা। বৈদেশিক সহায়তা নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, সহায়তার ব্যবহার কমলেও সরকারি খাতের ব্যয় বেড়েছে। বাজেটে বৈদেশিক সহায়তার মোট লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৩ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা।
জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বাজেট) হাবিবুর রহমান বলেন, বাজেট বাস্তবায়ন হার টাকার হিসাবে ভালো হয়েছে। গত বছরর মতো এবার বাজেটের অর্থ ব্যয় হয়েছে। এ বছর বাজেট বাস্তবায়নের মতো সব ধরনের পরিবেশ অনুকূলে রয়েছে। আশা করি বাস্তবায়ন হার আরও বাড়বে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, প্রথম দু'মাসে বাজেট বাস্তবায়ন কমে যাওয়া দিয়ে এখনই পুরোপুরি মূল্যায়ন করা সম্ভব হবে না।
তবে এ মুহূর্তে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের দিকে নজর দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, বিদেশি সহায়তা ব্যবহার কমেছে। এদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। কারণ পাইপলাইনে ৪ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের মতো জমা আছে। প্রতি তিন মাস অন্তর বাজেট বাস্তবায়ন হার জাতীয় সংসদে প্রকাশ করা হয়।
বর্তমান সরকারের তৃতীয় মেয়াদের এটি প্রথম বাজেট। প্রথম প্রান্তিকের রিপোর্ট খুব শিগগিরই জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হবে। সেই লক্ষ্যে হিসাব-নিকাশ চূড়ান্ত করছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
চলতি বাজেটে অনুন্নয়নসহ অন্যান্য ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ২ লাখ ৭৭ হাজার ৯৩৪ কোটি টাকা। এ অর্থ দিয়ে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা, প্রণোদনা ও ভর্তুকি, ঋণের সুদ এবং সেবা খাতে ব্যয় করা হয়ে থাকে। তথ্য মতে, প্রথম দুই মাসে এসব ক্ষেত্রে ব্যয় করা হয়েছে ৩১ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরের মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। রাজস্ব আদায়ে প্রধান হাতিয়ার হিসেবে এবার নতুন ভ্যাট আইনকে কাজে লাগানো হচ্ছে।
কিন্তু এরপরও কাক্সিক্ষত হারে রাজস্ব আহরণ হয়নি প্রথম তিন মাসে। অর্থবছরের প্রথম তিন মাস জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬২ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। প্রকৃত আদায় হয়েছে ৪৭ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা। তিন মাসে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৯০৬ কোটি টাকা।
পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) তথ্য মতে, অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের হার বেড়ে ১৪ দশমিক ২৫ শতাংশ হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে এই হার ছিল ১৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ উন্নয়ন বাজেটের অর্থ বয় করতে পেরেছে ৩০ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা। গত বছর খরচ হয়েছিল ২৪ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা। সূত্র মতে, ঘাটতি মেটাতে এ বছর ব্যাংক থেকে সরকার আগের বছরের তুলনায় বেশি ঋণ করছে।
বাজেটে চলতি অর্থবছরের জন্য ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ধার করার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্য থেকে মাত্র পৌনে পাঁচ মাসেই ৪২ হাজার ৬০৭ কোটি টাকা নিয়ে ফেলেছে সরকার। সঞ্চয়পত্র থেকে খুব বেশি টাকা সংগ্রহ করছে না সরকার।
ফলে এ সময় সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে গেছে ৬৫ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অর্থবছরের শুরুতে যে বাজেট ঘোষণা করা হয় বছর শেষে গিয়ে পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারে না। গত কয়েক বছরের বাস্তবায়ন চিত্রে সেটিই ফুটে উঠেছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, বাজেট বাস্তবায়নে সঠিক মনিটরিংয়ের অভাব এবং বাস্তবায়নে দুর্বল সক্ষমতা।