করোনায় বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্ব অর্থনীতি বিপর্যস্ত। এ রকম পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আগামী ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করতে হচ্ছে। ফলে এবারের পরিস্থিতি অন্যবারের চেয়ে একেবারেই আলাদা। তাই বাজেটে ৪টি খাতে গুরুত্ব দিতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে- স্বাস্থ্য, কৃষি ও কর্মসংস্থান ও সামাজিক নিরাপত্তা। এছাড়াও অনুৎপাদনশীলখাতে ব্যয় কমপক্ষে ৫০ শতাংশ কমাতে হবে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) ভার্চুয়াল বাজেট ব্রিফিংয়ে শনিবার এসব প্রস্তাবনা দেয়া হয়। সংস্থাটি বলছে, রাজস্ব আয় বাড়তে করের আওতা বাড়াতে হবে। এছাড়াও কর ফাঁকি রোধ এবং বিদেশে অর্থ পাচার বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া উচিত। না হলে পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন। তবে মধ্যবিত্তদের সহায়তায় করমুক্ত আয়সীমা আড়াই লাখ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৩ লাখ টাকা করা এবং ন্যুনতম কর হার ১০ থেকে শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার সুপারিশ করেছে সিপিডি।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সংস্থাটির বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, গবেষনা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এবং সিনিয়র রিসার্স ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।
সিপিডি বলছে, পুরো দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ আছে। ফলে কর আহরণ না হওয়ায় কমছে সরকারের আয়। এরই মধ্যে আসছে নতুন অর্থবছরের বাজেট। আয় না বাড়লে ব্যয় বাড়নো অত্যান্ত চ্যালেঞ্জের। তাই সরকারের প্রশাসনিক ব্যয় কমাতে হবে। এরমধ্যে রয়েছে- গাড়ির পেছনে ব্যয়, ইউটিলিটি সেবা, অফিসের কাগজপত্র এবং আপ্যায়ন এসবখাতে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ কমানো উচিত। পাশাপাশি অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে এমন উৎপাদনশীল ব্যয়কে আসছে বাজেটে গুরুত্ব দিতে হবে। দরিদ্র মানুষের হাতে টাকা দিতে হবে, প্রণোদনা নিশ্চিত করতে হবে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদের। এক্ষেত্রে ব্যাপক কর্মসংস্থান তৈরি হয়, এমন খাতকে গুরুত্ব দিতে হবে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, এবারের বাজেটে মোট ৪টি খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সবার আগে স্বাস্থ্য। বর্তমানে এখাতে ব্যয় মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১ শতাংশেরও কম। বাংলাদেশে স্বাস্থ্য সেবায় মানুষ নিজের পকেট থেকে ৭০ শতাংশ ব্যয় করে। দক্ষিণ এশিয়ায় যা সবচেয়ে বেশি। কিন্তু সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা এখাতে জিডিপির ১ দশমিক ১২ শতাংশ ব্যয়ের কথা বলা হয়েছিল।
সিপিডি মনে করে, এবছর এখাতে জিডিপির ২ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া উচিত। দ্বিতীয়ত কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরত্ব দিতে হবে। করোনার পর অনেক মানুষ চাকরি হারাবে। তাই এদের জন্য নতুন কর্মসংস্থানে বাড়ানোর বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে যে সব শিল্পখাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়, সেখানে গুরুত্ব দেয়া উচিত। এখাতে ওইখাতে প্রণোদনা দিতে হবে, প্রকৃতই যারা ক্ষতিগ্রস্ত এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে।
তৃতীয়ত কৃষির বিকল্প নেই। কারণ জিডিপিতে কৃষির অবদান ১৩ শতাংশ। কিন্তু এখাতে ৪২ শতাংশ মানুষের কর্মসংস্থান। ফলে এখানে দ্রুতই কর্মসংস্থান বাড়ানো সম্ভব। এছাড়াও খাদ্য চাহিদা মেটাতে কৃষি উৎপাদন অপরিহার্য। সবশেষে নিন্ম আয়ের মানুষের সামাজিক নিরাপত্তা আরও জোরদার করতে। এক্ষেত্রে বন্টন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আয় বাড়ানোর ক্ষেত্রে করেও আওতা বাড়াতে হবে। বিশেষ করে কর ফাঁকি রোধে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া উচিত। কারণ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হওয়ায় করের হার আর বাড়ানো সম্ভব নয়। এছাড়াও গত বছরে দেশ থেকে ৫ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এই অর্থ পাচার বন্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে।