প্রাক্-বাজেট আলোচনা করপোরেট কর কমানোর কমানোর সুপারিশ মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির। প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর সমপর্যায়ে করপোরেট কর নামিয়ে আনার সুপারিশ করেছে তারা। এমসিসিআই আরও বলেছে, গত দুই বছরে করপোরেট কর ৫ শতাংশ কমানোর পরও অনুমোদিত ব্যয়ের বিধান ও উৎসে করের কারণে এর সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। কোনো ক্ষেত্রে করপোরেট কর ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ হয়ে যাচ্ছে।
গতকাল বুধবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে প্রাক্-বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে এমসিসিআই নেতারা এই বাজেট প্রস্তাব দিয়েছেন। এমসিসিআইয়ের সভাপতি সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি দল গতকাল এই বাজেট আলোচনায় অংশ নেয়। এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম এতে সভাপতিত্ব করেন। সেগুনবাগিচার এনবিআর সম্মেলনকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। এমসিসিআই প্রতিনিধিদলে ছিলেন সংগঠনের সাবেক সভাপতি নিহাদ কবির, সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর প্রমুখ।
এমসিসিআইয়ের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ব্যবসায়ীরা করপোরেট করহার ৫ শতাংশ কমানোর সুবিধা পাচ্ছি না। বাস্তবে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি ও প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে করহার নির্দিষ্ট থাকে না—ক্ষেত্রবিশেষ তা ৪০-৫০ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে যায়। নানা ক্ষেত্রে উৎসে করের কারণে এটি হয়।’
এ ছাড়া ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের কর ছাড় দেওয়ার সুপারিশ করেছে এমসিসিআই। তবে করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ টাকা অপরিবর্তিত রেখে করহার পুনর্বিন্যাস করার প্রস্তাব করেছে এমসিসিআই। এমসিসিআইয়ের প্রস্তাব হলো, করমুক্ত আয়সীমার পরবর্তী প্রথম ৫ লাখ টাকার জন্য ৫ শতাংশ, পরের ৫ লাখ টাকার জন্য ১০ শতাংশ, পরের ১০ লাখ টাকার ১৫ শতাংশ, পরের ২০ লাখ টাকার জন্য ২০ শতাংশ ও বাকি টাকার জন্য ২৫ শতাংশ আয়কর আরোপ। এ ছাড়া সারচার্জের সীমা ৩ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ কোটি টাকা করার সুপারিশও করেছে তারা।
প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের রিটার্ন দাখিল না করলে কোম্পানির খরচ হিসাবে দেখানোর বিধান বাতিলের সুপারিশ করেছে এমসিসিআই। এমসিসিআই মনে করে, কর্মীর ব্যক্তিগত রিটার্ন জমার সঙ্গে কোম্পানির সম্পর্ক নেই। কর্মীর নিতান্ত ব্যক্তিগত তথ্যাবলি কোম্পানির সঙ্গে আদান-প্রদান অযৌক্তিক।
কোনো প্রতিষ্ঠান তার পণ্য বা সেবার প্রচার ও প্রসারের জন্য এখন টার্নওভারের দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত প্রমোশনাল ব্যয় করতে পারে। এমসিসিআই তা উন্নীত করে ৫ শতাংশ করার দাবি করেছে। এমসিসিআই বলেছে, বিদেশি কোম্পানিগুলো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বাংলাদেশে যে বড় ধরনের আয় করছে, তাতে করারোপ করার জন্য স্থানীয় এজেন্ট নিয়োগের বিধান প্রবর্তন করা উচিত।
এমসিসিআইয়ের বাজেট প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বর্তমানে স্থানীয় শিল্পের উৎপাদন পর্যায়ে ব্যবহার্য পণ্যের ওপর ক্ষেত্রবিশেষে ৫-১৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। সম্পূরক শুল্কের মৌলিক নীতি হচ্ছে, তা মূলত বিলাস পণ্য ও সামাজিকভাবে অনাকাঙ্ক্ষিত ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ পণ্যের ওপর আরোপ করা হয়, যা ওই পণ্যের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করে। সর্বসাধারণের ব্যবহার্য পণ্য, অবকাঠামো ও শিল্প যন্ত্রপাতি সুরক্ষা দেয়—এমন পণ্যে সম্পূরক শুল্ক আরোপ ন্যায়নীতির পরিপন্থী।