চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের কাজ শুরু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। গতকাল সোমবার এক পরিপত্র জারি করে অর্থ বিভাগ বলেছে, কোনো মন্ত্রণালয় ও বিভাগ অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ চাইতে পারবে না এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধন করতে হবে। সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে তাদের সংশোধিত বাজেটের প্রাক্কলন আগামী ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে অর্থ বিভাগে পাঠাতে বলা হয়েছে।
সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং আওতাধীন অধিদপ্তর, পরিদপ্তর, দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, সরকারি করপোরেশন, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট প্রণয়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট প্রাক্কলন (পরিচালন ও উন্নয়ন) প্রণয়ন শীর্ষক এ পরিপত্রে।
পরিপত্রে আরও বলা হয়েছে, সরকারের অগ্রাধিকার খাতগুলোর প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের মাধ্যমে সীমিত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে এবং চলতি অর্থবছরের বাজেট সুষ্ঠু ও সময়মতো বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের ৭৫ শতাংশ এবং পেট্রল, অয়েল, লুব্রিকেন্ট, গ্যাস ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ ব্যয় করা যাবে।
উন্নয়ন বাজেটের আওতায় মোটরযান, জলযান, আকাশযান ইত্যাদি সব ধরনের যানবাহন ক্রয় খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ ও ভূমি অধিগ্রহণ খাতে পরিচালন বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় সব ধরনের বৈদেশিক ভ্রমণ, কর্মশালা ও সেমিনারে অংশগ্রহণও বন্ধ থাকবে।
চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের আকার অবশ্যই মূল বাজেটে উল্লিখিত মোট ব্যয়সীমার (পরিচালন ও উন্নয়ন) মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। উন্নয়ন ব্যয়ের বাজেটের মধ্যে কোনো অর্থ অব্যয়িত থাকবে বলে মনে হলে ওই অব্যয়িত অর্থ কোনোভাবেই পরিচালন বাজেটে স্থানান্তর করা যাবে না বলে সতর্ক করা হয়েছে পরিপত্রে।
মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সংশোধিত পরিচালন ব্যয় প্রণয়নে কয়েকটি নির্দেশনা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে পরিপত্রে। বেতন-ভাতা খাতে ব্যয়ের হিসাব প্রণয়নে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের প্রকৃত ব্যয়ের হিসাব বিবেচনায় নিতে হবে। আর মূল বাজেটে ছিল না, এমন কোনো সম্পদ সংগ্রহের জন্য সংশোধিত বাজেটে অর্থ বরাদ্দ করা যাবে না। চলতি অর্থবছরে অর্থ বিভাগের অপ্রত্যাশিত ব্যয় ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে কোনো অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়ে থাকলে সংশোধিত বাজেটে তা উল্লেখ করতে হবে।
সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) প্রণয়নে ১৪ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে সংশোধিত এডিপিতে প্রকল্প সংখ্যা সীমিত রাখা, মূল সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দহীন কোনো প্রকল্প না রাখা, সরকারের কৌশলগত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের আলোকে অগ্রাধিকার বাছাই করে কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাদ দেওয়া, সংশোধিত এডিপির মূল অংশে বরাদ্দবিহীন কোনো প্রকল্প না রাখা ইত্যাদি।
চলতি অর্থবছরে বাস্তবায়ন কাজ শেষ হবে এমন সব প্রকল্পের বিপরীতে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান রাখার কথা বলা হয়েছে পরিপত্রে। আরও বলা হয়েছে, ধীরগতিসম্পন্ন প্রকল্প থেকে বরাদ্দ কমিয়ে দ্রুত বাস্তবায়ন গতিসম্পন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে প্রয়োজন অনুযায়ী বরাদ্দ দিতে হবে। বরাদ্দের ক্ষেত্রে কৃষি, কৃষিভিত্তিক শিল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন, ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা-উত্তর পুনর্বাসন সম্পর্কিত প্রকল্পগুলো অগ্রাধিকার পাবে। বৈদেশিক ঋণ বা অনুদানে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প এবং চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে এমন সব প্রকল্প সংশোধিত এডিপিতে অগ্রাধিকার পাবে। চলতি অর্থবছরের এডিপিবহির্ভূত যেসব প্রকল্প ইতিমধ্যে অনুমোদিত হয়েছে এবং যেসব প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, সেগুলো সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দসহ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। অননুমোদিত কোনো কর্মসূচি বা স্কিমের জন্য অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব করা যাবে না।