ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বড় ব্যবসায়ের ওপর বৈশ্বিক সর্বনিম্ন কর ১৫ শতাংশে নির্ধারণের একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। কয়েক মাস ধরে রাজনৈতিক মতপার্থক্য চলার পর অবশেষে গত বৃহস্পতিবার ইইউর নেতারা পরিকল্পনাটি চূড়ান্তভাবে অনুমোদন করেছেন। আগামী বছরের (২০২৩ সাল) শেষ দিকে বৈশ্বিক ন্যূনতম এই করহার কার্যকর হবে।
বিশ্বের প্রায় ১৪০টি দেশকে নিয়ে এই যুগান্তকারী চুক্তি সই হবে। এর লক্ষ্য হলো, কোম্পানিগুলোকে আকৃষ্ট করার জন্য সরকারগুলো যেভাবে প্রতিযোগিতা করে কর কমিয়ে থাকে, তা বন্ধ করা।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন এটাকে একটি ঐতিহাসিক চুক্তি, যা এমনকি খেলার ক্ষেত্রেও সাহায্য করে বলে প্রশংসা করেছেন।
করপোরেট ট্যাক্স বা কর সাধারণত একটি কোম্পানির লাভের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়। তবে প্রায়ই তারা তাদের অফিস কোথায় নিবন্ধিত হয়েছে বা তারা তাদের ব্যবসায়ে কীভাবে বিনিয়োগ করেছে, এর ওপর নির্ভর করে কম অর্থ তথা কর প্রদানের সুযোগ নিয়ে থাকে।
অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কোঅপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ওইসিডি) নির্দেশনায় সদ্য অনুমোদিত পরিকল্পনাটি তৈরি করা হয়। এতে যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি ইইউ অর্থনীতির জোরালো সমর্থন রয়েছে।
২৭ দেশের ট্রেডিং ব্লক বা বাণিজ্য অঞ্চল ইইউর ন্যূনতম কর বাস্তবায়নের উদ্যোগ কয়েক মাস বিলম্বিত হয়েছে। কারণ, এ বিষয়ে ইইউর সদস্যরাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ওজর-আপত্তিসহ রাজনৈতিকভাবে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছিল। আবার কোনো কোনো দেশ ব্লকিং টেকটিকস বা নতুন অঞ্চল গঠনের পথে হাঁটছিল। অবশেষে তারা সবাই ঐকমত্য হয়েছে।
ইইউর অর্থনৈতিক কমিশনার পাওলো জেন্টিলোনি বলেছেন, আজ (বৃহস্পতিবার) ইউরোপীয় ইউনিয়ন কর ন্যায্যতা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনি আরও বলেন, একটি বিশ্বায়িত অর্থনীতি যে চ্যালেঞ্জগুলো তৈরি করে, তা মোকাবিলার জন্য ন্যূনতম ট্যাক্সেশনই হলো চাবিকাঠি।
এমনকি এই সপ্তাহে পোল্যান্ড রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার মতো সম্পর্কহীন নীতির বিষয়ে তর্ক করার সময় এই পরিমাপের আনুষ্ঠানিক গ্রহণকে অবরুদ্ধ করে।
কিন্তু বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের সর্বশেষ শীর্ষ সম্মেলনের শেষের দিকে আলোচনা হয়েছে এবং আগামী বছরের শেষে ইউরোপজুড়ে ট্যাক্স কার্যকর হবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতারা বৈশ্বিক ন্যূনতম করপোরেট করহার নির্ধারণের এই সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছেন। এর মধ্যে জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ এটিকে আমার হৃদয়ের কাছাকাছি একটি প্রকল্প হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ জানান, তাঁর দেশ চার বছরেরও বেশি সময় ধরে ধারণাটি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল।
বিশ্বব্যাপী সর্বনিম্ন করপোরেট কর হলো ওইসিডি চুক্তির একটি অংশ, যা পিলার টু নামে পরিচিত। এর লক্ষ্য হলো, বড় কোম্পানিগুলো যেন করের ন্যায্য অংশ প্রদান করা নিশ্চিত করে।
ওইসিডির পিলার ওয়ান বা প্রথম স্তম্ভ হলো, কোম্পানির ওপর করারোপে জোর দেওয়া, যাতে তারা কর ফাঁকি সীমিত করার মাধ্যমে মুনাফা করে। এ জন্য প্রাথমিকভাবে ডিজিটাল কোম্পানিগুলোকে লক্ষ্য করা হয়েছে।