বঙ্গবন্ধুর নামে থাকা প্রতিষ্ঠানে অনুদানে করছাড় বাতিল করছে সরকারখেজুর আমদানিতে শুল্ক-কর কমলদেশে উৎপাদিত প্রসাধনীতে করের বোঝা, আমদানিতে ছাড়ভোজ্যতেল আমদানিতে কমলো ভ্যাটখেজুর আমদানিতে শুল্ক ও অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহারের সুপারিশ
No icon

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ডিজিটাল বাণিজ্য উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ হচ্ছে

ডিজিটাল কমার্স বা ই–কমার্স খাতে একের পর এক কেলেঙ্কারির পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রথমে চিন্তা করেছিল একটা ডিজিটাল বাণিজ্য আইন করবে। ঘোষণা দিয়ে করেছিল আইনের একটা খসড়াও। কিন্তু সেই চিন্তা বাদ হয়ে গেছে ৯ মাস আগে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এখন বলছে, ডিজিটাল বাণিজ্য আইন নয়, বরং এখন করা হবে ডিজিটাল বাণিজ্য উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন।

প্রস্তাবিত আইনটির অধীন একটি কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে, যার নাম হবে ডিজিটাল বাণিজ্য উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। আইন পাসের পর যে কর্তৃপক্ষ হবে, তার কাছ থেকে লাইসেন্স নিয়েই দেশে ই-কমার্স বা ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে হবে বলে জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে আইনটির প্রাথমিক খসড়ার ওপর আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক রয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), ডাক বিভাগ, তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), এফবিসিসিআই, বেসিস, ইক্যাব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়কে (বুয়েট) বৈঠকে প্রতিনিধি পাঠানোর জন্য অনুরোধ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। 

ডিজিটাল বাণিজ্যপ্রতিষ্ঠানের নিয়মিত অনলাইন কার্যক্রম ও সরেজমিন পরিদর্শন এবং ডিজিটাল বাণিজ্যেও দেশি উদ্যোক্তাদের বাজার সম্প্রসারণ ও রপ্তানি বাড়াতে প্রস্তাবিত এই কর্তৃপক্ষ কাজ করবে। ডিজিটাল বাণিজ্য ও ই-কমার্স সংক্রান্ত যেকোনো অভিযোগের অনুসন্ধান বা তদন্ত করার পাশাপাশি ওই কাজে সহায়তার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নিতে পারবে এই কর্তৃপক্ষ।

প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, ডিজিটাল কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানগুলোর নিবন্ধন দেবে ডিজিটাল বাণিজ্য উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। প্রতারণামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করলে আবার সেই নিবন্ধন বাতিলের ক্ষমতাও থাকবে এই কর্তৃপক্ষের হাতে।

জরিমানার বিধানগুলো

খসড়ায় বলা হয়েছে, প্রতারণার অপরাধে মামলা ও জরিমানা করতে পারবে কর্তৃপক্ষ। মিথ্যা তথ্য দিয়ে পণ্য বিক্রি করলে অনলাইন বিক্রেতার জন্য দুই বছরের কারাদণ্ড, অনাদায়ে ১০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হচ্ছে।

নির্ধারিত সময়ে পণ্য বা সেবা সরবরাহ না করলে মূল্যের তিন গুণ জরিমানা ও অনাদায়ে তিন মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড; নিষিদ্ধ পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে তিন বছর কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা; অনুমতি ছাড়া ডিজিটাল বা গিফট কার্ড, ওয়ালেট, ক্যাশ ভাউচার করলে ছয় মাস কারাদণ্ড বা দুই লাখ টাকা জরিমানা; ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে লটারি আয়োজন করলে দুই বছর কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা করার কথা আইনে বলা হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়েছে, এ আইনের যেকোনো ধারা লঙ্ঘনে দায়েরকৃত মামলা প্রথম শ্রেণির বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট আদালত বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রট আদালতে বিচার্য হবে। ফৌজদারি কার্যবিধিতে যা-ই থাকুক, বিধিমালায় বর্ণিত সব অপরাধ জামিনযোগ্য হবে।

এ আইনের অধীন গঠিত ‘ডিজিটাল বাণিজ্য উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ ডিজিটাল বাণিজ্যের সামগ্রিক তদারকির পাশাপাশি এর নিবন্ধন, অভিযোগ, তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা এবং আদালতে মামলা দায়ের ও জরিমানার এখতিয়ার পাবে।

কর্তৃপক্ষ আরও কী করবে

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সরকারের একজন অতিরিক্ত সচিবকে চেয়ারপারসন করে গঠন করা হবে ‘ডিজিটাল বাণিজ্য উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’। থাকবেন যুগ্ম সচিব পর্যায়ের তিনজন সদস্য। এর কেন্দ্রীয় দপ্তর হবে ঢাকায়। সরকার চাইলে ঢাকার বাইরে এক বা একাধিক শাখা কার্যালয় স্থাপন করতে পারবে। কর্তৃপক্ষের অধীন থাকবে একটি পরামর্শক কাউন্সিল।

এই কর্তৃপক্ষ ই-কমার্স বা ডিজিটাল বাণিজ্যের প্রসার, শৃঙ্খলা রক্ষা, বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তি ও অপরাধ প্রতিরোধের তদারক করবে। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ও আমদানিনিষিদ্ধ পণ্য ও সেবা কেনাবেচা ও সংরক্ষণ হয় কি না; কোনো ওষুধপণ্য মোড়কে সঠিক ব্যবহারবিধি, উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ছাড়া অনলাইনে বিক্রি হয় কি না; অসত্য ও অতিরঞ্জিত বিজ্ঞাপন বা বিক্রয় প্রস্তাব দিয়ে ক্রেতা ও গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা হয় কি না—এর সব কটি তদারক করবে কর্তৃপক্ষ।

জানতে চাইলে ইক্যাবের সভাপতি শমী কায়সার প্রথম আলোকে বলেন,কর্তৃপক্ষ করার উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। এটার দরকার আছে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, একই কাজ বা দায়িত্ব যেন বহু প্রতিষ্ঠানের ওপর না বর্তায়।