ইআরডি-র প্রতিবেদন অনুযায়ী বাড়ছে দেশি-বিদেশি ঋণের ঝুঁকিজুন নাগাদ আয়কর রিটার্ন ৪৫ লাখে উন্নীত হবেউল্কা গেমসের কর ফাঁকির ৫০ কোটি টাকা আদায়ে ব্র্যাক ব্যাংকে এনবিআরবাজেটের আকার কমানোর পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলইরানের তেল রফতানিতে বাধা নেই
No icon

ঋণখেলাপিদের ধরতে সংশোধন হবে ব্যাংক কোম্পানি আইন : অর্থমন্ত্রী

ঋণখেলাপিদের ধরতে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় হওয়ার কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সচিবালয়ে গতকাল আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সঙ্গে বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী বলেন, ঋণখেলাপিদের উচ্চ আদালতে যাওয়া ও খেলাপি ঋণ দীর্ঘদিন আটকে রাখা রুখতে কোম্পানি আইন সংশোধন করা হবে। একই সঙ্গে ব্যাংকিং খাতের নানা অনিয়ম বন্ধে উদ্যোগ নেয়া হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রায় ২ ঘণ্টা বৈঠক করেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাত আমাদের কাছে অন্যান্য খাতের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। কারণ এ খাতে কিছু সমস্যা আছে। আমরা সমস্যা মোকাবেলা করে সামনে এগিয়ে যেতে চাই। আমরা ব্যাংকিং খাতের টার্ন অ্যারাউন্ড (ঘুরে দাঁড়ানো) চাই। এজন্য এ বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। বৈঠকে এ খাতের নানা সমস্যার কথা উঠে এসেছে। ব্যাংকিং খাতকে স্বচ্ছ ও শক্তিশালী খাতে রূপান্তর করতে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ ও করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে খেলাপি ঋণই এখানে প্রধান সমস্যা। নন-পারফর্মিং লোনের যে কথা বলা হচ্ছে, এটা লম্বা সময় ধরে চলে আসছে, এটি ১৩ শতাংশ। এটি ৭ থেকে ৮ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। বিদ্যমান আইনের কারণেই খেলাপি ঋণ যথাযথভাবে আদায় করা যাচ্ছে না। আইনে কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে। তাই সবার আগে আইনটি সংশোধন করতে হবে।

আইন সংশোধনের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বিদ্যমান আইনে খেলাপি ঋণ আদায়ের বিষয়ে দিকনির্দেশনা রয়েছে। তবে যেকোনো প্রতিষ্ঠান উচ্চ আদালতে গিয়ে সহজেই আদায় প্রক্রিয়ার ওপর স্থগিতাদেশ নিয়ে আসতে পারছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করব। খেলাপিরা যেন আদালতে না গিয়ে ব্যাংকারদের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে খেলাপি ঋণ পরিশোধ করেন এমন ব্যবস্থা রাখা হবে। ১৯৭২ সালে ব্যাংকিং খাত যে আইনের অধীনে পরিচালিত হয়েছে তাকে ভিত্তি ধরেই বিদ্যমান আইন সংশোধন করা হবে। তবে বিধি প্রণয়নের মাধ্যমে খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া গেলে সেটিই সবার আগে করা হবে।

খেলাপি ঋণ আদায়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগের বিষয়ে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, সরকারি-বেসরকারি কোনো ব্যাংকের টাকাই বেহাত হোক তা চাই না। কারণ এ টাকা জনগণের। জনগণের টাকা বেহাত হতে দেব না। কী কারণে, কার কারণে ঋণ নেয়া টাকা বেহাত হচ্ছে তা খুঁজে বের করা হবে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কেউ ঋণখেলাপিদের সহযোগিতা করছে কিনা, তাও খুঁজে বের করা হবে। কারো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এজন্য মন্ত্রণালয় থেকে কমিটি গঠন করা হবে। কমিটি নিরীক্ষার মাধ্যমে ব্যাংকের টাকা বেহাত হওয়ার কারণ খুঁজে বের করবে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের আরো বেশি যোগ্য হতে হবে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকিং খাত অত্যন্ত সংবেদনশীল। এখানে অর্থনীতির জ্ঞানের পাশাপাশি কারিগরি ও তথ্যপ্রযুুক্তির জ্ঞান অত্যন্ত জরুরি। এ বিভাগের সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা ব্লক চেইন টেকনোলজি ব্যবহার করে আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেব।

সুদের হার বেশি উল্লেখ করে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, স্প্রেড (ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধান) বেশি হলে আমানত ফেরত আসে না এসব বিষয় বিবেচনা করতে হবে। যত কম সুদে আমানত নেয়া যাবে, তত কম সুদে ঋণ দেয়া যাবে। বর্তমানে সুদের হার অনেক বেশি হওয়ায় বিনিয়োগ চাহিদা অনুযায়ী হচ্ছে না। কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও বেসরকারি খাতকে এগিয়ে নিতে সুদের হার কমিয়ে আনা হবে।

বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ২৫ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি স্বাক্ষর: বিশ্বব্যাংকের কাছে বাজেট সহায়তা পাচ্ছে বাংলাদেশ। এর অংশ হিসেবে গতকাল সংস্থাটির সঙ্গে ২৫ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি সই হয়েছে। তবে আগামী তিন বছরে ধাপে ধাপে ৭৫ কোটি ডলার দেবে সংস্থাটি। চলতি অর্থবছরের জন্য দেয়া অর্থ জব ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিট নামের কর্মসূচি বাস্তবায়নে ব্যয় করা হবে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মনোয়ার আহমদ ও বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফান। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, আমাদের ৬০ শতাংশ কর্মক্ষম জনশক্তি রয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশ জনসংখ্যার বোনাস-কাল ভোগ করতে পারবে। দেশের অর্থনীতি সঠিক পথেই আছে। আগে ওঠা-নামা থাকলেও এখন ধারাবাহিক উন্নতি হচ্ছে। নির্বাচনী ইশতেহারে প্রধানমন্ত্রী যেভাবে তরুণদের কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা আমরা বাস্তবায়ন করব।

চিমিয়াও ফান বলেন, গত দুই দশকে প্রবৃদ্ধি অর্জন, দারিদ্র্য নিরসন, মানবসম্পদ উন্নন হয়েছে ব্যাপক। তবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হচ্ছে বাংলাদেশের জন্য অন্যতম চ্যালেঞ্জ। কেননা প্রতি বছর দুই মিলিয়ন তরুণ কর্মবাজারে প্রবেশ করছে। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে তিনিটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের অভাব, মানসম্মত কর্মসংস্থানের অভাব এবং কর্মসংস্থানে নারীদের পিছিয়ে থাকা।