সঞ্চয়পত্রের সুদ কমানোর চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে। সরকার এই সুদহার সমন্বয়ের লক্ষ্যে একটি কমিটিও গঠন করেছে । ওই কমিটি সঞ্চয়পত্রের সুদহারে কী ধরনের সমন্বয় করা যায় কিংবা এ খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অনিয়ম রয়েছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখবে। শনিবার জাতীয় সঞ্চয় সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া কমিটি গঠনের এ তথ্য জানিয়ে সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেন, সুদহার সমন্বয় ও সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে অনিয়ম খতিয়ে দেখাসহ সার্বিক বিষয়ে কাজ করতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সুপারিশে যদি সুদহার কিছুটা কমানো হয়, তবুও তা ব্যাংকের সুদহারের চাইতে বেশি থাকবে। যাতে ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারীরা লাভবান হন।
বর্তমানে সঞ্চয়পত্রে সুদের হার ব্যাংকের চাইতে বেশি। ফলে বিনিয়োগকারীরা ব্যাংকের বদলে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করছেন। এ কারণে এ খাত থেকে সরকার যে পরিমাণ অর্থ ঋণ করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এ খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ তার চাইতে অনেক বেশি। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের হিসাবে, চলতি অর্থবছরে মোট ঋণের যে লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে, অর্থবছরের ছয় মাসেই তার চেয়ে বেশি অর্থ বিনিয়োগকারীরা এ খাতে বিনিয়োগ করেছেন। সাধারণ মানুষের এ বিনিয়োগ সরকারের জন্য ঋণ। বেশি ঋণ হলে সরকারের সুদ বাবদ খরচও বেড়ে যায়।
বর্তমানে পাঁচ বছর মেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষে সুদহার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ, পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশন সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ, পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ, তিন বছর মেয়াদি মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১১ দশমিক শন্য ৪ শতাংশ ও তিন বছর মেয়াদি ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ বিদ্যমান। কিন্তু ব্যাংকগুলোর আমানতের সুদের হার এই হারের চাইতে কম। তবে ব্যাংকাররা অভিযোগ করে আসছেন, যাদের উদ্দেশ্যে সরকার সঞ্চয়পত্রের সুযোগ রেখেছে, কিংবা যাদের কথা চিন্তা করে এ খাতের সুদের হার কমানো হচ্ছে না, বাস্তবে সরকারের সে উদ্দেশ্য সফল হচ্ছে না। কেননা সাধারণ মানুষের চাইতে একটি বিশেষ শ্রেণি এ খাতে বিনিয়োগ করে সুবিধা নিচ্ছে।
রাজধানীর পল্টনে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ভবনে জাতীয় সঞ্চয় সপ্তাহ ২০১৯ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সঞ্চয় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শামছুন্নাহার বেগমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সঞ্চয় সমৃদ্ধির সোপান এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এবং গ্রাহক সেবার মান উন্নয়নে গতকাল থেকে দেশব্যাপী শুরু হওয়া জাতীয় সঞ্চয় সপ্তাহ চলবে আগামী ১ মার্চ পর্যন্ত।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগকারীদের জন্য করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (ই-টিআইএন) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এতে ই-টিআইএনধারীর সংখ্যা বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
সঞ্চয় সপ্তাহ উপলক্ষে শনিবার সকালে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সামনে থেকে সঞ্চয় সপ্তাহের বিভিন্ন শ্লোগান সম্বলিত ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। সঞ্চয় সপ্তাহ উপলক্ষে র্যালি, সভা-সেমিনার, ব্যানার-ফেস্টুন, সঞ্চয় স্কিমের হ্যান্ডবিল বিতরণ ও সঞ্চয় উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম চলবে।