সিগারেটে কার্যকর করারোপ না করায় রাজস্ব হারিয়েছে সরকারআরও এক মাস বাড়ল রিটার্ন জমার সময়এনবিআর আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের যাত্রা শুরুনকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির ওপর শুল্ক কমানোর দাবিঅনলাইনে ৯৬ ঘণ্টা ভ্যাট কার্যক্রম বন্ধ থাকবে
No icon

আরও কর সুবিধা চায় ব্যাংক খাত

আসন্ন বাজেটে ব্যাংক খাতে আরও কর সুবিধা দেয়ার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশনকে ব্যয় দেখিয়ে তা থেকে কর অব্যাহতি দেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। বিষয়টি বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ঋণের সুদহার কমানোর কথা বলে চলতি অর্থবছরের বাজেটে কর্পোরেট কর কমিয়ে নেন ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু পরে সে অঙ্গীকার পূরণ করেননি। উদ্যোক্তাদের সিঙ্গেল ডিজিটে ব্যাংক ঋণ দিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাও বাস্তবায়ন করেননি। এ অবস্থায় নিরাপত্তা সঞ্চিতিকে ব্যয় দেখিয়ে কর অব্যাহতি নিলে ব্যাংকের মুনাফা আরও বাড়বে। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় রোববার কর অঞ্চল-১ আয়োজিত অংশীজন রাজস্ব সংলাপে ব্যাংকের নির্বাহীরা উল্লিখিত কর সুবিধা দাবি করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। কর অঞ্চল-১-এর কমিশনার নাহার ফেরদৌসী বেগমের সভাপতিত্বে সংলাপে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান অসৎ কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির হুশিয়ারি দেন। সেই সঙ্গে তিনি কর আদায় বাড়ানোর তাগিদ দেন। তিনি বলেন, কর আদায় না বাড়ালে সরকার ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেবে। এ ঋণ নেয়ার ফলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কমে যাবে।

সংলাপে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহতাব জাবিন ও ডিবিবিএলের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট শহীদুল্লাহ বলেন, মন্দ ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে শতভাগ প্রভিশন রাখতে হয়। আয়কর বিভাগ এই প্রভিশনকে আয় হিসেবে গণ্য করে ট্যাক্স আদায় করে। এতে মন্দ ঋণের বিপরীতেও উচ্চহারে কর্পোরেট কর দিতে হয়, যা ব্যাংকের মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, মন্দ ঋণের বিপরীতে প্রভিশন রাখা হয়। প্রভিশনকে খরচ হিসেবে বিবেচনা করলে ব্যাংকের সব আয় করের আওতায় আসবে না। তারপরও বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। রাজস্ব কর্মকর্তাদের উদ্দেশে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, প্রত্যেক কর্মকর্তাকে রাজস্ববান্ধব ও সৎ হতে হবে। নিজের নয়, দেশের স্বার্থে কাজ করতে হবে। কোনো ধরনের অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। প্রয়োজনে অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শাস্তি দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই, যাতে করদাতাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলায়। মোশাররফ হোসেন বলেন, করের আওতা বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে করহার কমিয়ে আওতা বাড়ানো হবে। এ নিয়ে পর্যালোচনার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি এ নিয়ে বিচার-বিবেচনা করছে। এ ছাড়া করদাতা বৃদ্ধির জন্য বাড়ি, ফ্ল্যাটসহ অন্যান্য খাতে জরিপ শুরু হয়েছে। তথ্য সংগ্রহের সময় করদাতাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ভীতি নয়, বন্ধুত্বের আচরণ করে করদাতা বাড়াতে চাই। নিবন্ধন কর কমানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে জানিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, অনেকেই সম্পত্তি কিনে রাখে। এক সময় এর দাম অনেক বেড়ে যায়। কিন্তু বৃদ্ধি করা দাম অনুযায়ী কর আদায় হয় না। এ জাতীয় সম্পত্তি থেকে কীভাবে কর আদায় করা যায়, সেটি চিন্তা-ভাবনা করা হবে। পাশাপাশি সম্পত্তি রেজিস্ট্রেশন ফি অনেক বেশি। অর্থমন্ত্রী রেজিস্ট্রেশন ফি সুষম করতে কমিটি করে দিয়েছেন। আয়কর না দেয়ার যতগুলো কারণ আছে, তা অনুসন্ধানের চেষ্টা চলছে মন্তব্য করে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, অফিসের সংখ্যা বৃদ্ধি ও জনবল বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ৬ মাসের মধ্যে আরও বিস্তৃত আকারে এনবিআর কার্যক্রম পরিচালনা করবে। তখন করদাতার সংখ্যা আরও বাড়বে।

চেয়ারম্যান বলেন, কর-জিডিপির হার অন্যান্য দেশের তুলনায় কম। দেশে ১৬ কোটি মানুষ হলেও সরাসরি এক কোটি মানুষও কর দেয় না। তবে উৎসে করসহ হিসাব করলে করদাতার সংখ্যা কোটি হবে। রিটার্ন দেয় ২০ লাখের কম, যা লজ্জার। এ সংখ্যা বাড়াতে হবে। সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। কর-জিডিপির হার না বাড়ালে উন্নয়ন করা দুরূহ হয়ে পড়বে। সে জন্য কর-জিডিপি বাড়াতে হবে।