বিশ্বব্যাংকের সহজে ব্যবসা সূচক বা ইজ অব ডুয়িং বিজনেসে উন্নতির জন্য কোম্পানি নিবন্ধনের ব্যয় কমাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এখন থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত মূলধনের কোম্পানি নিবন্ধনে কোনো টাকাই লাগবে না। আগে এ ক্ষেত্রে প্রতি ১০ হাজার টাকার জন্য ১০০ টাকা নিবন্ধন মাশুল দিতে হতো। নিবন্ধন ব্যয় কমিয়ে গত মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। এর আগে ২০১৬ সালে সরকার কোম্পানি নিবন্ধনের ব্যয় বাড়িয়ে দিয়েছিল। এতে পরের বছর ডুয়িং বিজনেসে বাংলাদেশের একধাপ অবনতি ঘটে। এ বছর ডুয়িং বিজনেসে উন্নতির জন্য সংস্কারের শেষ সময় ৩০ এপ্রিল। এর আগেই নিবন্ধন ব্যয় কমিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। নিবন্ধন ব্যয় কমাতে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) অনেক দিন ধরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়ে আসছে। জানতে চাইলে সংস্থাটির নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম বলেন, শুধু কোম্পানি নিবন্ধনের ব্যয় নয়, এবার অনেক সংস্কার হয়েছে। বিশ্বব্যাংক মাঠপর্যায়ে জরিপ করে যদি এসব সংস্কারের সুফল দেখতে পায়, তাহলে এ বছর বাংলাদেশ ২০-২৫ ধাপ উন্নতি করবে আশা করা যায়। তিনি বলেন, যেসব সংস্কার হচ্ছে, তার সুফল মিলবেই। কথা হলো, সেটা কতটা দ্রুত পাওয়া যায়।
বিশ্বব্যাংকের ইজ অব ডুয়িং বিজনেসে ১৮৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১৭৬তম। ২০২১ সালের মধ্যে এ ক্ষেত্রে দুই অঙ্ক, অর্থাৎ কমপক্ষে ৯৯তম অবস্থানে আসতে চায় বাংলাদেশ। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কোনো দেশে বিনিয়োগ পরিকল্পনার ক্ষেত্রে ডুয়িং বিজনেসে উন্নতির বিষয়টি বিবেচনায় নেন বলে মনে করা হয়।
এদিকে কোম্পানি নিবন্ধনের ১৯টি ক্ষেত্রে ব্যয় কমিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। নতুন প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, কোম্পানির নামিক শেয়ার মূলধন অনধিক ২০ হাজার টাকা হলে নিবন্ধনের জন্য ফি বা মাশুল লাগবে না। এ ক্ষেত্রে আগে ৭০০ টাকা মাশুল ছিল। ২০ হাজার থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত মূলধনের কোম্পানিও বিনা ফিতে নিবন্ধন করা যাবে। আগে এ ক্ষেত্রে মাশুল ছিল প্রতি ১০ হাজারে ১০০ থেকে ৩৫০ টাকা।
এভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ৫০ থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত নিবন্ধন ব্যয় কমানো হয়েছে। ডিজিটাল সার্টিফিকেট সরবরাহ ব্যয় ১ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে বিনা মূল্যে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে। বিডার পরিচালক তৌহিদুর রহমান খান বলেন, বিশ্বব্যাংকের হিসাবে দেশে ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে ব্যয় মাথাপিছু আয়ের সাড়ে ২১ শতাংশ। নিবন্ধন ব্যয় কমার ফলে তা ৫ শতাংশে নেমে আসবে। এটি ডুয়িং বিজনেসে উন্নতিতে ভূমিকা রাখবে।
আরও যেসব সংস্কার
ডুয়িং বিজনেসে উন্নতির জন্য ২০১৮ সালে বেশ কিছু বিষয়ে সংস্কার করেছে বাংলাদেশ। এ বছর এসব সংস্কারের সঙ্গে আরও কিছু যোগ হবে এবং আগের সংস্কারগুলোর সুফল মাঠপর্যায়ে মিলবে বলে আশা করছে বিডা।
নতুন সংস্কারের মধ্যে রয়েছে নির্মাণকাজের অনুমতির ক্ষেত্রে ১৬টি প্রক্রিয়া থেকে কমিয়ে ৪টি করা হয়েছে। কোম্পানি আইন সহজ করা হয়েছে এবং একক মালিকানার কোম্পানি খোলার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ভূমি নিবন্ধন সহজ করা, রপ্তানির ইএক্সপি ফরম অনলাইনে পূরণ করাসহ বেশ কিছু সংস্কারের কথা জানিয়েছে বিডা।