সিগারেটে কার্যকর করারোপ না করায় রাজস্ব হারিয়েছে সরকারআরও এক মাস বাড়ল রিটার্ন জমার সময়এনবিআর আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের যাত্রা শুরুনকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির ওপর শুল্ক কমানোর দাবিঅনলাইনে ৯৬ ঘণ্টা ভ্যাট কার্যক্রম বন্ধ থাকবে
No icon

চাঙ্গা হবে আবাসন ও শেয়ারবাজার

আসছে বাজেটে শেয়ারবাজার ও আবাসন খাত চাঙ্গা করতে ব্যাপক প্রণোদনা থাকছে। ঈদুল ফিতরের পর আগামী ১৩ জুন আসন্ন ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে এ ঘোষণা দেবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত নীতিনির্ধারক সূত্রে জানা যায়, দেশের আবাসন খাত দীর্ঘকাল নানান সমস্যায় জর্জরিত। সরকার এ খাতের বিকাশ দেখতে চায়। জমির মূল্য অত্যধিক। ফ্ল্যাটের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। এ পরিস্থিতির জন্য সরকারের দুর্বল নীতিকে দায়ী করেন আবাসন খাতের উদ্যোক্তারা। ফলে বাজেটে জমি ও ফ্ল্যাট নিবন্ধন ফিসহ আরও কিছু সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে। আবাসন মাত্রাতিরিক্ত নিবন্ধন ফির কারণে জমি ও ফ্ল্যাট বেচাকেনায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন ক্রেতারা। এ ছাড়া ফ্ল্যাট ক্রয়ে অপ্রদর্শিত তথা কালো টাকা সাদা করার সুযোগ থাকার পরও অতিরিক্ত কর থাকায় তেমন আগ্রহী হচ্ছেন না ক্রেতারা। নিবন্ধন ফি অতিরিক্ত থাকার কারণে এ খাতে ব্যাপক দুর্নীতিও হচ্ছে। সরকার প্রকৃত রাজস্ব এখান থেকে পাচ্ছে না। এমন প্রেক্ষাপটে এবারের বাজেটে ফ্ল্যাট ও জমির নিবন্ধন ফি কমানোসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমে আবাসন খাতকে চাঙ্গা করার প্রচেষ্টা থাকছে।

সূত্র জানায়, বর্তমানে গেইন ট্যাক্স স্ট্যাম্প ফি, স্থানীয় ও মূল্য সংযোজন করসহ গড়ে ফ্ল্যাটের মোট নিবন্ধন ফি ১৪ থেকে ১৬ শতাংশ। অন্যদিকে জমির ক্ষেত্রে ১৭ শতাংশ। ডিড ভ্যালু বা দলিলের মোট মূল্যের ওপর এই ফি দেন ক্রেতারা। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, জমি ও ফ্ল্যাটের নিবন্ধন ফি বর্তমানের চেয়ে কমিয়ে অর্ধেক করা হচ্ছে। এখন ফ্ল্যাট ক্রয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রয়েছে। প্রচলিত আয়কর আইনের ১৯ এর ৫বি ধারায় এ সুযোগ বহাল আছে। নিয়ম অনুযায়ী এলাকাভেদে ফ্ল্যাটে প্রতি বর্গফুটে নির্ধারিত কর দিলে ক্রেতার আয় বা বিনিয়োগের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয় না। তবে ক্রেতারা মাত্রাতিরিক্ত করের কারণে ফ্ল্যাট কিনতে উৎসাহী হচ্ছেন না। ফলে কালো টাকা সাদা করার বিদ্যমান সুযোগটিও কাজে আসছে না। নীতিনির্ধারক সূত্রে জানা যায়, সরকার চাচ্ছে ক্রেতারা কম দামে ফ্ল্যাট পাক। সবার জন্যই একটু ভালোভাবে বসবাস করার সুযোগ তৈরি হোক। সে জন্য বাজেটে নির্ধারিত করের পরিমাণ কমানো হচ্ছে।

এনবিআর সূত্রে জানা যায়, রাজধানী ঢাকার গুলশান, বনানী বারিধারাসহ অভিজাত এলকায় দুইশ বর্গমিটার পর্যন্ত প্রতি বর্গমিটারের জন্য নির্ধারিত পাঁচ হাজার টাকা ও দুইশ মিটারের ওপরে ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গমিটারে সাত হাজার টাকা কর দিলে ক্রেতার আয়ের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয় না। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম অভিজাত এলাকায় ঢাকার চেয়ে একটু কম অর্থাৎ প্রতি বর্গমিটারে চার হাজার ও পাঁচ হাজার টাকা নির্ধারিত আছে। এ ছাড়া জেলা পর্যায়ে ফ্ল্যাট কেনায় নির্ধারিত কর আরোপ আছে। তবে জেলা পর্যায়ে করের পরিমাণ ঢাকা ও চট্টগ্রামের চেয়ে কম। সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন বাজেটে ফ্ল্যাট কেনায় এলাকাভেদে বর্তমানে যে পরিমাণ কর আছে, তার চেয়ে কমপক্ষে গড়ে ২০ শতাংশ কমানো হচ্ছে। সরকার আশা করছে, কর কমালে ফ্ল্যাটের দাম সহনীয় হবে। তখন ক্রেতারা ফ্ল্যাট কেনায় আকৃষ্ট হবেন এবং এ খাতে বিনিয়োগ বাড়বে।

আবাসন খাতের মালিকদের সংগঠন রিহ্যাবের প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট লিয়াকত আলী ভূঁইয়া বলেন, এ খাতের সঙ্গে রঙ, ইট ও বালিসহ ২৫০টি সহায়ক শিল্প জড়িত। আবাসন খাত চাঙ্গা হলে এসব শিল্প গতিশীল হবে। এ জন্য দীর্ঘ মেয়াদে সস্তায় ঋণ দিতে হবে, কমাতে হবে নিবন্ধন ফি, সুযোগ দিতে হবে অপ্রদর্শিত আয়ের। বাংলাদেশ ল্যান্ড ডেভেলপার অ্যাসোসিয়েশন বা বিএলডিএর পরিচালক নাসির মজুমদার বলেন, উচ্চ ফির কারণে অনেকেই জমি রেজিস্ট্রেশন করছেন না। কিনে ফেলে রেখেছেন। ফি কমানো হলে তারা দ্রুত নিবন্ধন করবেন। এতে রাজস্ব আয় অনেক বেড়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।

শেয়ার বাজার :বর্তমানে স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানি বছরে যে পরিমাণ লভ্যাংশ ঘোষণা করে, তার সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্জিত আয় করমুক্ত। সূত্র জানায়, এবারের বাজেটে লভ্যাংশের অর্জিত আয়ে আরও ছাড় দেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে করমুক্ত সীমা বিদ্যমান পঁচিশ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে পঞ্চাশ হাজার টাকা করা হচ্ছে। কর ছাড়ের এ প্রস্তাব কার্যকর হলে বিনিয়োগকারীরা উপকৃত হবেন এবং শেয়ারবাজার চাঙ্গা হবে বলে আশা করছে সরকার। জানা যায়, তালিকাভুক্ত অনেক কোম্পানি মুনাফা করার পর তার শেয়ার হোল্ডারদের ঠিকমতো লভ্যাংশ দেয় না। আবার অনেক কোম্পানি আছে বছরের পর বছর লভ্যাংশ ঘোষণা করে না। এতে করে বিনিয়োকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এনবিআর সূত্র বলেছে, লভ্যাংশের অর্জিত আয়ে আরও কর ছাড় দিলে কোম্পানিগুলো বেশি করে মুনাফা দিতে উৎসাহিত হবে। এতে করে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কিনতে উৎসাহিত হবেন এবং বাজার চাঙ্গা হবে।

যোগাযোগ করা হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি আজিজুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে লভ্যাংশের (ডিভিডেন্ট) অর্জিত আয়ে কর ছাড়ের যে সীমা আছে, তা গ্রহণযোগ্য নয়। এই সীমা আরও বাড়াতে হবে। এটা করা হলে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা উৎসাহিত হবেন। ফলে সামগ্রিকভাবে শেয়ার বাজারে ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে। তিনি আরও বলেন, কোম্পানি মুনাফার ওপর কর দেওয়ার পর অবশিষ্ট মুনাফা থেকে শেয়ার হোল্ডারদের নির্দিষ্ট হারে লভ্যাংশ (ডিভিডেন্ট) দেওয়া হয়। এই লভ্যাংশের ওপর ফের কর কেটে রাখা হয়। এ ক্ষেত্রে দ্বৈত কর দেওয়ার যে নিয়ম আছে, তা পরিহার করতে হবে। এটা করলে বিনিয়োগকারীরা আরও উৎসাহিত হবেন বলে মনে করেন তিনি। এ ছাড়া শেয়ারবাজার দীর্ঘদিন খারাপ থাকার কারণে ইতিমধ্যে বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এসব পদক্ষেপে বাজারে তারল্য সংকট কমার কথা। কিছু ক্ষেত্রে শেয়ার নিয়ে কারসাজিও বন্ধ হবে।