কর অব্যাহতি পেল গ্রামীণ ব্যাংক ও আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনশুল্ক কমানোর খবরে কমছে চিনির দরদর পতনের শীর্ষে তসরিফা ইন্ডাস্ট্রিজিলাল তালিকামুক্ত হলো পাকিস্তানি সব পণ্যশতভাগ শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দেবে চীন
No icon

মধ্যবিত্তের ওপর চাপ বাড়বে

আসন্ন ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট নিয়মিত করদাতাদের ওপর চাপ বাড়াবে। রাজস্বের বিশাল লক্ষ্যমাত্রা আদায়ে মধ্যবিত্তের জীবন ধারণের প্রতিটি পর্যায় থেকে কড়ায়-গণ্ডায় হিসাব কষে রাজস্ব আদায়ের ছক এঁকেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ জন্য এনবিআরের প্রশাসনিক ও আইনগত সংস্কারের প্রস্তাব দেবেন প্রথমবারের মতো বাজেট ঘোষণা দিতে যাওয়া অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অবশ্য প্রাক-বাজেট আলোচনায় অর্থমন্ত্রী ও এনবিআর চেয়ারম্যান নতুন করারোপ না করার অঙ্গীকার করেছেন, বাজেটে এর প্রতিফলনও থাকবে। কিন্তু নতুন করারোপ না করলেও ব্যক্তিশ্রেণীর করমুক্ত আয়সীমা অপরিবর্তিত রাখা, নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের কারণে কিছু পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় মধ্যবিত্ত শ্রেণীকে করের চাপ সইতেই হবে বলে মনে করছেন এনবিআর সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, আগামী বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ধরা হয়েছে, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৬ দশমিক ২৫ শতাংশ বেশি। আগের বছরগুলোতে রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি ৩০ শতাংশের বেশি ধরা হলেও পরে সেটি সংশোধন করা হয়।

নতুন বাজেটে রাজস্ব প্রবৃদ্ধি কম ধরা হলেও তা সংশোধন না করে শতভাগ আদায় করতে চায় এনবিআর। এ জন্য করজাল বাড়ানো ও আদায় কার্যক্রমকে গতিশীল করার উদ্যোগ বাজেটে নেয়া হবে।

আগামী বছর করদাতাদের কাছ থেকে ১ লাখ ১৫ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা আয়কর আদায় করা হবে, যদিও আয়করের যৎসামান্য ব্যক্তিশ্রেণীর করদাতারা দিয়ে থাকেন। ভ্যাট থেকে ১ লাখ ১৭ হাজার ৬৭১ কোটি টাকা আদায় করা হবে, যার পুরোটাই দেশের ভোক্তাদের দিতে হবে।

আগামী বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণীর করদাতার করমুক্ত আয়সীমা আড়াই লাখ টাকা অপরিবর্তিত রাখা হচ্ছে। গত ৪ বছর ধরে ব্যক্তি করদাতার করমুক্ত আয়সীমা আড়াই লাখ টাকায় আটকে আছে, এ সময় মূল্যস্ফীতির গড় ছিল ৫ শতাংশ। করমুক্ত সীমা আড়াই লাখ টাকায় স্থির রাখার উদ্দেশ্য হচ্ছে নতুন করদাতার সংখ্যা বাড়ানো।

এই সীমা বৃদ্ধি করার দাবি উঠে আসছিল বিভিন্ন মহল থেকে। কিন্তু মধ্যবিত্তের বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ব্যয়, খাদ্যসামগ্রী, বিদ্যুৎ-গ্যাসের দামসহ অন্য খরচ বাড়লেও আগের নিয়মেই এলাকাভেদে বছরে সর্বনিু ৩-৫ হাজার টাকা কর দিতে হবে। নিয়মিত রিটার্ন জমা না দিলে আয়কর ফাইল অডিটে ফেলবে কর বিভাগ।

কর আদায় নিশ্চিত করতে আগে থেকেই আইনগত সংস্কার করেছে এনবিআর, এবারও সেই ধারা অব্যাহত থাকবে। চাকরিজীবীদের বেতন থেকে আয়কর কেটে বাকি অর্থ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠানোর বিধান চালু থাকবে। সুতরাং চাকরিজীবীদের কর ফাঁকি দেয়ার সুযোগ নেই।

বাজেটে আইনগত ও প্রশাসনিক সংস্কারের মাধ্যমে করদাতাদের করের আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলার ছক থাকবে। আর যারা করের আওতায় নেই তাদের খুঁজে বের করতে বাজেটে বিশেষ উদ্যোগ থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দিয়ে কর জরিপ চালানোর দিকনির্দেশনা দেবেন অর্থমন্ত্রী।

বিশেষত ঢাকা ও চট্টগ্রামে যেসব বাড়ির মালিক রিটার্ন জমা দেন না, তাদের খুঁজে বের করে করের আওতায় আনা হবে। পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়ে আয়কর অফিস সম্প্রসারণ করা হবে। আগামী বছর ৮০ লাখ নতুন করদাতা তৈরির বিষয়ে বাজেটে রূপরেখা দেবেন অর্থমন্ত্রী।

অন্যদিকে আইনগত সংস্কারের অংশ হিসেবে ১ জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে এনবিআর। এ আইন বাস্তবায়ন হলে কিছু পণ্যের দাম বাড়তে পারে। নতুন আইনে ট্যারিফ ভ্যালু প্রথা বাতিল হবে। বর্তমানে উৎপাদন পর্যায়ে ৮৫টি পণ্যে ট্যারিফ মূল্য বহাল আছে।

এর মধ্যে গুঁড়া দুধ, গুড়া মসলা, বিস্কুট, কেক, রুটি, আচার, টমেটো সস, ফলের জুস, এলপি গ্যাস, নিউজপ্রিন্ট, সব ধরনের কাগজ, এলইডি লাইট, টিউব লাইট, চশমা, সানগ্লাস, নির্মাণসামগ্রী যেমন রড, ইট রয়েছে। নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হলে এসব পণ্যের ট্যারিফ মূল্য থাকবে না।

তখন প্রকৃত দামের ওপর ভ্যাট দিতে হবে, তাই এসব পণ্যের দাম কিছুটা বাড়তে পারে। অবশ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সংবেদনশীল পণ্যের তালিকা করেছে এনবিআর। রড, ওষুধ, ভোজ্যতেল, পেট্রোলিয়াম পণ্যের মতো ৮-১০টি পণ্যের জন্য ২ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ করা হবে।

এ ছাড়া চাল, ডাল, মুড়ি, চিড়া, চিনি, আখের গুড়, মাছ, মাংস, সবজি, তরল দুধ, মধু, বার্লি, ভুট্টা, সুজি, লবণের মতো খাদ্যপণ্যসহ মোট ১০৪৩টি আইটেমকে ভ্যাট অব্যাহতি তালিকায় রাখা হয়েছে। এসব পণ্য উৎপাদন ও বিপণন পর্যায়ে ভ্যাট দিতে হবে না।

যদিও বিনোদন, অবসরে সময় কাটানোর অনুষঙ্গে ভ্যাটের হানা দেয়া হবে। পরিবার-পরিজন নিয়ে অবসরে বাইরের রেস্টুরেন্টে খেতে গেলে অনেকে ভ্যাট দেন না বা দিলেও সেটা ব্যবসায়ীরা সরকারি কোষাগারে জমা দেয় না। জুলাই মাসের পর থেকে ১১টি পণ্য ও সেবায় ভ্যাট দিতে হবে।

এগুলো হচ্ছে- আবাসিক হোটেল; রেস্তোরাঁ ও ফাস্টফুড শপ; মিষ্টান্ন ভাণ্ডার, আসবাবপত্রের বিক্রয় কেন্দ্র; পোশাক বিক্রির কেন্দ্র ও বুটিক শপ; বিউটি পার্লার; ইলেকট্রনিক ও ইলেকট্রিক্যাল গৃহস্থালি সামগ্রীর বিক্রয় কেন্দ্র; কমিউনিটি সেন্টার; অভিজাত শপিং সেন্টারের আন্তর্ভুক্ত সব ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান; ডিপার্টমেন্টাল স্টোর; জেনারেল স্টোর ও সুপার শপ; বড় ও মাঝারি ব্যবসায়ী (পাইকারি ও খুচরা) প্রতিষ্ঠান; স্বর্ণকার ও রৌপ্যকার এবং স্বর্ণ-রৌপ্যের দোকানদার এবং স্বর্ণ পাইকারি। ভ্যাট আদায় বাড়াতে জুলাই থেকে ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্টারের (ইসিআর) বদলে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) ব্যবস্থা প্রবর্তন করবে এনবিআর।

প্রাথমিকভাবে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ১০ হাজার রেস্টুরেন্ট ও বিপণিবিতানে বিনা মূল্যে ইএফডি মেশিন সরবরাহ করা হবে। এরপর আরও ৯০ হাজার মেশিন সরবরাহ করা হবে। এই যন্ত্রের মাধ্যমে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বেচাকেনার তথ্য সরাসরি এনবিআরের সার্ভারে পৌঁছে যাবে। তখন চাইলে ক্রেতা ভ্যাট ফাঁকি দিতে পারবেন না।