অবৈধ ও কালো টাকার মালিকরা প্রায়ই ব্যাংক ব্যবস্থাকে পাশ কাটিয়ে বাড়িতে বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা করছে। এসব অর্থ নানা অবৈধ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। সরকারও কোনো রাজস্ব পাচ্ছে না এসব অর্থ থেকে। অবৈধ এসব অর্থের অধিকাংশই ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটে করা হচ্ছে। এ কারণে নোট দুটি বাতিলের প্রস্তাব উঠেছে। এর আগে ভারতও অনুরূপ পদক্ষেপ নিয়েছিল। সম্প্রতি দেশে ক্যাসিনো, জুয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকের বাসা, অফিসে প্রশাসন অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ উদ্ধার করেছে। এতে আটক করা হয়েছে একাধিক ব্যক্তিকে। উদ্ধার হওয়া কোটি কোটি টাকা আয়ের কোনো উৎস বলতে পারছে না আটককৃত ব্যক্তিরা। কালোবাজারি, মাদক, জুয়া, ঘুষ, দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে এসব জমানো অর্থ। অবৈধভাবে আয়ের সব টাকাই বাড়িতে জমিয়ে রাখছে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। অভিযানে দেখা গেছে, উদ্ধার হওয়া অর্থের মধ্যে বেশির ভাগ ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট।
ভারত সরকার দেশের এই অবৈধ জমানো টাকা মূল স্রোতে বা বিনিয়োগে নিয়ে আসতে ২০১৬ সালের নভেম্বরে ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল করে। নরেন্দ্র মোদি সরকার এই বিশাল সফলতা পায় সব অবৈধ আয় করা নগদ অর্থ বিনিয়োগে নিয়ে আসাতে। ভারতে ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষেত্রে লেনদেন অনেকাংশে দুই বড় মানের নোটের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়ে থাকে। এসব বড় নোট বাতিল করার ফলে রেকর্ডবিহীন ব্যবসা-বাণিজ্যের লেনদেনের ক্ষেত্রে বড় সফলতা পেয়েছে। এ ক্ষেত্রে ফলত ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে লেনদেনের বিস্তৃতি বেড়েছে। আর এতে আয়ের ওপর আরোপনীয় কর বিশেষ করে আয়কর ও মূল্য সংযোজন কর পরিশোধে বাধ্য হচ্ছে লেনদেনকারীরা। এর বাইরে বেআইনিভাবে প্রাপ্ত বা আয়কর ফাঁকি দিয়ে ব্যাংক ব্যবস্থার বাইরে গৃহে রক্ষিত সম্পদ দুর্নীতি, ঘুষের অর্থ সাধারণত বড় নোট যথা ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট করে রাখা হয়ে থাকে। ভারত সরকার বড় অঙ্কের টাকার নোট বাতিল করার পর এসব দুর্নীতিবাজের অবৈধ সঞ্চয় আহরণ ও রক্ষাকরণের সুযোগ সীমিত হয়ে গেছে।
জানতে চাইলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যানে ড. আব্দুল মজিদ বলেন, অবৈধভাবে উপার্জন করেছে যারা, তাদের সব টাকা ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট হয়ে বাসাবাড়িতে স্তূপ হয়েছে, সিন্দুকে রেখেছে। এসব অর্থ বিনিয়োগে আনতে বড় নোট বাতিল করা হবে দেশের অর্থনীতির একটি বড় অর্জন। নির্দিষ্ট সময় দিয়ে ঝটিকা ঘোষণার মাধ্যমে এসব নোট বাতিল করার সময় এসেছে। শুধু বাতিল অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের জন্য নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা উচিত। ওই সময়ের মধ্যে জরিমানা-কর দিয়ে অর্থ ব্যাংক ব্যবস্থায় জমা করা না হলে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এমন ঘোষণা দিলে যারা বাসাবাড়িতে টাকা জমিয়েছে সব বের হয়ে যাবে। ২০০৮ সালে এমন একটি ঘোষণা দিয়ে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা বাড়তি কর আদায় করা হয়েছিল। ১০ শতাংশ বাড়তি কর হিসেবে এই টাকা আয় করা হয়েছিল। মূল অর্থ ছিল অনেক বেশি। আমাদের অর্থনীতি আরো বেশি গতিশীল হবে ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নিলে।