দুই পাতায় ২০টি তথ্য এবং সহনীয় পর্যায়ের অর্থ দিয়েই দেশের যেকোনো ব্যাংকে নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা যাবে। একই সঙ্গে ঋণ আবেদন পদ্ধতিতেও আসছে পরিবর্তন। আর এ নিয়ম খুব শিগগিরই চালু হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ বি এম রুহুল আজাদ। বুধবার সচিবালয়ে ব্যাংকগুলোতে ব্যবহৃত ফরম সহজিকরণের জন্য গঠিত কমিটির বৈঠকে বেশকিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংক, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, বিভিন্ন ব্যাংকের প্রতিনিধি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে কমিটির প্রধান আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ বি এম রুহুল আজাদ বলেন, বর্তমানে বিভিন্ন ব্যাংকে একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে গ্রাহকদের নানা ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয়। তা থেকে রেহায় দিতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিশেষ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মহোদয়ের নির্দেশনায় বিভিন্ন বিভাগের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে যে কমিটি গঠন করা হয়েছিল, সে কমিটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা সহজিকরণের বিষয়টি চূড়ান্ত করেছে।
তিনি বলেন, আমাদের সময় বেধে দেয়া হয়েছিল। এই সময়ের মধ্যেই আমরা বিষয়টি চূড়ান্ত করতে পেরেছি। এখন বিষয়টি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে। সেখান থেকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে আসার পরই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সহজিকরণের বিষয়টি বাস্তবায়ন করবে। তারাই ব্যাংকগুলোকে এ বিষয়ে নিদের্শনা দেবে। খুব শিগগির বিষয়টি কার্যকর হবে।
অতিরিক্ত সচিব রুহুল আজাদ বলেন, অ্যাকাউন্ট খোলার ফরম সহজিকরণের পাশাপাশি ঋণ আবেদন ফরমও সহজ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে ঋণের ধরনের ওপর যেমন ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ ঋণের ফরম আলাদা আলাদা হবে। বৃহৎ ঋণের ক্ষেত্রে অনেকগুলো জটিল বিষয় থাকে ফলে সেক্ষেত্রে ফরমও কিছুটা ভিন্ন হবে।
তিনি বলেন, আগের ফরমে এমন অনেক তথ্য দিতে হতো যা একাধিকবার উল্লেখ করতে হতো। যেমন স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, মেইল আইডি, মাসিক আয় ইত্যাদি। এসব এক জায়গায় উল্লেখ করলেই হবে।
ব্যাংক অ্যাকউন্ট খুলতে সর্বনিম্ন কত টাকা জমা দিতে হবে। এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারণ করে দেবে। আশা করছি সেটা সহনীয় পর্যায়েই থাকবে।
বৈঠক শেষে এ বিষয়ে একজন কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে বিভিন্ন ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট বা হিসাব খুলতে অনেকগুলো ফরম পূরণ করতে হয়। একই সঙ্গে দিতে হয় প্রায় একশ ধরনের বিভিন্ন তথ্য। যার মধ্যে অনেকগুলো আবার অপ্রয়োজনীয়। এবং বেশকিছু তথ্য আবার ব্যাংক কর্তৃক পূরণ করা প্রয়োজন। কিন্ত তা গ্রাহকের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়। এ অবস্থায় সবকিছু বাদ দিয়ে শুধুমাত্র ব্যাংকের হিসাব খোলার ফরম হবে দুই পাতার। এবং দিতে হবে সুনির্দিষ্ট মাত্র ২০টি তথ্য। সুনির্দিষ্ট এসব তথ্য পূরণ ও জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিক ব্যাংকের হিসাব খুলতে পারবেন। এতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের একজন হিসাবধারীর পরিচয় প্রদান প্রত্যায়নও প্রয়োজন হবে না।
তিনি বলেন, গত ২২ আগষ্ট মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সভাপতিত্বে বার্ষিক উদ্ভাবনী কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন বিষয়ক পর্যালোচনা সভায় ব্যাংকে ব্যবহৃত ফরমসমূহ সহজীকরণের উপায় নির্ধারণ জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে নির্দেশনা দেয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৫ সেপ্টেম্বর এ সম্পর্কিত একটি কমিটি গঠন করা হয়। এই নিয়ে কমিটি মাত্র তিনটি বৈঠকেই বিষয়টি চূড়ান্ত করতে পেরেছে।