ইআরডি-র প্রতিবেদন অনুযায়ী বাড়ছে দেশি-বিদেশি ঋণের ঝুঁকিজুন নাগাদ আয়কর রিটার্ন ৪৫ লাখে উন্নীত হবেউল্কা গেমসের কর ফাঁকির ৫০ কোটি টাকা আদায়ে ব্র্যাক ব্যাংকে এনবিআরবাজেটের আকার কমানোর পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলইরানের তেল রফতানিতে বাধা নেই
No icon

নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের চেয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়ে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মুদ্রানীতির কাঠামোতে এবার বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এখন থেকে রিজার্ভ মানির মাধ্যমে মুদ্রা সরবরাহ বাড়ানো-কমানোর পরিবর্তে সুদহার করিডোর ব্যবস্থায় মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এ ছাড়া গ্রাহক পর্যায়ে এখনকার মতো আর ৯ শতাংশ সুদহারের সীমা থাকবে না। এরকম বিভিন্ন বিষয় যুক্ত করে আগামী রোববার বেলা ৩টায় মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।

গতকাল রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি প্রণয়ন কমিটির বৈঠকে এসব নিয়ে আলোচনা হয়। এই কমিটির সভাপতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। তাঁর সভাপতিত্বে কমিটির সদস্য চার ডেপুটি গভর্নর, বিএফআইইউর প্রধান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ, গবেষণা বিভাগের নির্বাহী পরিচালক ও মুদ্রানীতি বিভাগের পরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে। এর আগে গত ২১ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি প্রণয়ন কমিটির আরেকটি বৈঠক হয়। এর পর থেকে মুদ্রানীতি বিষয়ে অর্থনীতিবিদ, সাবেক ও বর্তমান ব্যাংকার, ভোক্তাদের নিয়ে কাজ করে এমন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মাঝে কয়েকটি অর্থবছরে একবার করে মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হলেও আইএমএফের শর্তের আলোকে ফের দু বার করে তা ঘোষণা হচ্ছে।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, মুদ্রানীতির কাঠামোতে পরিবর্তনের মাধ্যমে মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এ ক্ষেত্রে আন্তঃব্যাংক লেনদেনে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ সুদহারের একটি করিডোর দেওয়া হবে। নির্ধারিত সুদহারের বেশি দিয়ে কোনো ব্যাংক ধার নিতে পারবে না। আবার কোনো ব্যাংক সর্বনিম্ন সুদহারের নিচে নামতে পারবে না। সর্বনিম্ন হারের নিচে নামতে চাইলে তা ব্যাংকে ধার না দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়ে নেবে। আবার গ্রাহক পর্যায়ে সুদহার নির্ধারণের নতুন ব্যবস্থাকে বলা হবে শর্ট টার্ম মুভিং এভারেজ রেট সংক্ষেপে স্মার্ট। ছয় মাস মেয়াদি ট্রেজারি বিলের ছয় মাসের গড় সুদহারের ভিত্তিতে যা নির্ধারিত হবে। ছয় মাস মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সঙ্গে আপাতত সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ সুদ নেওয়ার সুযোগ রাখা হবে। প্রতি মাস শেষে স্মার্ট রেট ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। সে আলোকে ব্যাংকগুলো সুদহার নির্ধারণ করবে। ট্রেজারি বিলের সুদ বাড়লে-কমলে তখন ফ্লোর রেট বাড়বে বা কমবে। বর্তমানে ছয় মাস মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সুদহার রয়েছে ৭ শতাংশের আশপাশে। এর মানে নতুন ব্যবস্থায় সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা ১০ শতাংশের কাছাকাছিই থাকবে। ব্যাংক এর ওপরে যেতে পারবে না। চাইলে এর চেয়ে কম সুদে ঋণ বিতরণ করতে পারবে।

মুদ্রানীতি প্রণয়ন কমিটির আলোচনায় বলা হয়, দেশে এখনকার মূল সংকট মূল্যস্ফীতি। গত মে মাসে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ শতাংশ ছুঁইছুঁই, যা ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। দেশে এই মূল্যস্ফীতির অন্যতম কারণ আমদানিনির্ভরতা। এর সঙ্গে মনস্তাত্ত্বিক কিছু বিষয়ও আছে। যেমন, চাহিদা-সরবরাহের বিষয়টি না দেখে শুধু পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের খবরেই দর বেড়ে তিন গুণ হয়েছে। আবার ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরুর খবরে কেজিতে ২০ টাকা কমেছে দাম। এ ধরনের সমস্যা সমাধানে আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় উৎপাদন বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হবে। এ জন্য কম সুদের বিভিন্ন পুনঃঅর্থায়ন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। প্রয়োজনে নতুন কর্মসূচি চালু করা হবে।

জানা গেছে, জাতীয় বাজেটের আলোকে মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশ এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৭ শতাংশ অর্জনের আশাবাদের কথা বলা হবে। তবে মুদ্রা সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা এমনভাবে রাখা হবে, যাতে করে প্রবৃদ্ধির চেয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে জোর দেওয়ার বার্তা থাকবে।

এ ছাড়া আইএমএফের শর্তের আলোকে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ে এক দর চালুর ঘোষণা থাকবে। বর্তমানে রেমিট্যান্সে ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা, রপ্তানিতে ১০৭, ব্যাংকগুলোর কাছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিক্রি দর ১০৬ এবং নগদ ডলারে আরেক রকম দর নির্ধারিত আছে। এতে আমদানিতে ডলারের দরে অনেক পার্থক্য তৈরি হয়। আগামীতে এতগুলো দর থাকবে না। ডলার বেচাকেনার মধ্যে সর্বোচ্চ পার্থক্য হবে ২ শতাংশ। এটিকেই ডলারের বাজারভিত্তিক দর বলা হবে।