ইআরডি-র প্রতিবেদন অনুযায়ী বাড়ছে দেশি-বিদেশি ঋণের ঝুঁকিজুন নাগাদ আয়কর রিটার্ন ৪৫ লাখে উন্নীত হবেউল্কা গেমসের কর ফাঁকির ৫০ কোটি টাকা আদায়ে ব্র্যাক ব্যাংকে এনবিআরবাজেটের আকার কমানোর পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলইরানের তেল রফতানিতে বাধা নেই
No icon

লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও বাড়ে রাজস্ব সংগ্রহের বোঝা

জাতীয় বাজেটের সিংহভাগ অর্থের জোগান আসে রাজস্ব আয় থেকে। সে হিসেবে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরে প্রতি বছর উত্থাপন করা হয় নতুন অর্থবছরের বাজেট। কিন্তু বছর শেষে দেখা যায়, রাজস্ব আদায়ে বড় ঘাটতি থেকে যায়। বাজেট ডকুমেন্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাজেটে ঘোষিত এনবিআরের আওতাধীন রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও প্রতিবছরই লক্ষ্যমাত্রা বাড়াচ্ছে সরকার। সদ্য বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আদায়ে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৪ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩ লাখ ২৫ হাজার ২৭২ দশমিক ৩৭ কোটি টাকা।রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের পর থেকেই বড় একটি ঘাটতি থাকবে বলে জানিয়ে আসছিলেন অর্থনীতিবিদরা। রাজস্ব আদায়ের তিনটি খাতই অর্থাৎ কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়করে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছে এনবিআর।

রাজস্ব আদায়ের তিন খাতের মধ্যে আমদানি ও রপ্তানি পর্যায়ে ঘাটতির পরিমাণ ১৯ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা। এ খাতে ১ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৯১ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা। একই সময়ে স্থানীয় পর্যায়ে মূসক আদায়ে ঘাটতি ১৬ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। এ খাতে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। এছাড়া আয়কর ও ভ্রমণ কর আদায়ে ঘাটতি ৯ হাজার ১৭৮ কোটি টাকা। এ খাতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ২২ হাজার ১০০ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার ৯২১ কোটি টাকা।এদিকে শুল্ক আদায়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও সমস্যা চিহ্নিত করেছে এনবিআর। বাধাগুলোর মধ্যে রয়েছে শুল্ক ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়নে গৃহীত কার্যক্রমে ধীরগতি, সঠিক এইচএস কোডে শুল্কায়ন না করা এবং প্রশিক্ষিত জনবলের অপ্রতুলতা। আর এসব কারণে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী শুল্ক আদায় সম্ভব হচ্ছে না। যথাযথ শুল্ক আদায়ের ক্ষেত্রে এগুলো বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ ও সমস্যা বলে মনে করে এনবিআর। তবে এগুলো ছাড়াও উচ্চ লক্ষ্যমাত্রার রাজস্ব আহরণ, বকেয়া আদায়, রিট মামলার ব্যবস্থাপনা, জনবলের স্বল্পতা, ভৌত অবকাঠামো ও যানবাহন স্বল্পতা ইত্যাদির কারণেও শুল্ক আদায় কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। শুল্ক আদায়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও সমস্যা চিহ্নিত করতে গিয়ে সম্প্রতি এমন অভিমত ব্যক্ত করেছে এনবিআরের শুল্ক আদায় বিভাগ। তবে সমস্যা সমাধানে বেশ কয়েকটি পরিকল্পনাও হাতে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে শুল্ক খাতের এক লাখ এক হাজার ৬৭৩ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৯১ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা।এক্ষেত্রে ঘাটতির পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। তবে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও এর আগের অর্থবছরের (২০২১-২২) তুলনায় প্রবৃদ্ধির হার ২ দশমিক ৫৬ শতাংশ।এদিকে চলতি অর্থবছরে শুল্ক খাতে মোট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ১১ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে সম্পূরক শুল্ক খাতে ৬০ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা (সমাপ্ত অর্থবছরের মূল বাজেটে এ খাতে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৮,৫২৪ কোটি টাকা ও সংশোধিত বাজেটে ৫৩,৬৭৫ কোটি টাকা), আমদানি শুল্ক খাতে ৪৬ হাজার ১৫ কোটি টাকা (সমাপ্ত অর্থবছরের মূল ও সংশোধিত বাজেটে এ খাতে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৩,৯৯৪ কোটি টাকা), রপ্তানি শুল্ক খাতে ৬৬ কোটি টাকা ও আবগারি শুল্ক খাতে চার হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা (সমাপ্ত অর্থবছরের মূল বাজেটে এ খাতে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪,১২৭ কোটি টাকা ও সংশোধিত বাজেটে ৩,৯৪১ কোটি টাকা) আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।