বাজেটের আকার কমানোর পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলইরানের তেল রফতানিতে বাধা নেইদশ পণ্যে রাজস্ব আহরণে ধসআমদানিনির্ভর নিত্যপণ্যের শুল্ককর যৌক্তিক হতে হবেমেট্রোরেলে ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার চায় আইপিডি
No icon

ব্যাংকঋণের সর্বোচ্চ সুদহার বেড়ে হয়েছে ১২.৪৩ শতাংশ

ব্যাংকের ৯-৬ সুদহার তুলে নেওয়ার পর ঋণের সুদহার বেড়ে এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। ফেব্রুয়ারি মাসের জন্য নির্ধারিত ব্যাংকঋণের সুদের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৪৩ শতাংশ। গত জুনে সুদহারের ৯-৬ ব্যবস্থা উঠে যাওয়ার পর এটিই ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার। ব্যাংকঋণের সুদহার নির্ধারণে গত বছরের জুন থেকে স্মার্ট বা সিক্স মান্থস মুভিং অ্যাভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল ব্যবস্থা চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সরকারের ট্রেজারি বিলের ছয় মাসের গড় সুদহারের ভিত্তিতে এ সুদ নির্ধারিত হচ্ছে। প্রতি মাসের শুরুতে বাংলাদেশ ব্যাংক স্মার্ট সুদহার প্রকাশ করে।

সর্বশেষ জানুয়ারি শেষে স্মার্ট রেট বেড়ে হয়েছে ৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ। এর সঙ্গে বাড়তি ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ যুক্ত করে ঋণের সুদহার নির্ধারণ করতে পারে ব্যাংকগুলো। সেই হিসাবে চলতি ফেব্রুয়ারির জন্য ঋণের সুদ বেড়ে হয়েছে ১২ দশমিক ৪৩ শতাংশ, যা গত সাত মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। 

তবে ব্যাংক চাইলেই পুরোনো গ্রাহকদের কাছে এখনই বেশি সুদ নিতে পারবে না। এ জন্য অপেক্ষা করতে হবে। একাধিক ব্যাংকার জানান, স্মার্ট রেটের ভিত্তিতে বর্তমানে প্রতি মাসে যে সুদহার নির্ধারিত হচ্ছে, তা নতুন গ্রাহককে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে কখনো কখনো কার্যকর করা যাচ্ছে। কিন্তু পুরোনো গ্রাহকের বেলায় এ বাড়তি সুদহার তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর করা হয় না। কারণ, পুরোনো ঋণের সুদহার ছয় মাস পরপর সমন্বয় করা হয়। গত জুনে চালু হওয়ার সময় স্মার্ট সুদের হার ছিল ৭ দশমিক ১০ শতাংশ, গত ডিসেম্বরে বেড়ে হয়েছিল ৮ দশমিক ১৪ শতাংশ।

ব্যাংকাররা বলছেন, অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বর্তমানে ঋণের চাহিদা অনেক কম। সুদহার বৃদ্ধির ধাক্কাও এ চাহিদাকে আরও কমিয়ে দিচ্ছে। এর আগে ৯-৬ সুদহারের কারণে ব্যাংকগুলোর আমানত সংগ্রহও কমে গিয়েছিল। এখন সুদের হার উঠে যাওয়ায় আমানতেও কিছুটা গতি ফিরেছে। এ কারণে ঋণের পাশাপাশি আমানতের সুদহারও বাড়ছে। কোনো কোনো ব্যাংক এখন আমানত সংগ্রহে ১০ শতাংশের বেশি সুদ দিচ্ছে। তারল্যসংকটে থাকা কোনো কোনো ব্যাংক ১২ শতাংশ সুদেও আমানত নিচ্ছে।

নতুন করে সুদহার বাড়তে থাকায় এ চাহিদায় আরও কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। প্রতি মাসে নতুন করে ঋণের সুদহার নির্ধারণ করা হলেও প্রকৃতপক্ষে ব্যাংকগুলোকে সুদহার নির্ধারণ করতে হয় ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে। ফলে বাড়তি সুদহার সব গ্রাহকের কাছ থেকে আদায় করা সম্ভব হয় না।

এদিকে সাধারণ ঋণের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো স্মার্ট রেটের সঙ্গে ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ বাড়তি সুদ যুক্ত করলেও প্রি-শিপমেন্টে রপ্তানি ঋণ এবং কৃষি ও পল্লিঋণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদ যোগ করা যায়। এর বাইরে এসএমই ঋণের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো এ সুদহারের বাইরে অতিরিক্ত ১ শতাংশ হারে সেবামাশুল নিতে পারে। নতুন বছরের প্রথম দিনেই দেশে ব্যাংকঋণের সুদহার বেড়ে ১১ দশমিক ৮৯ শতাংশে উঠেছিল। এই হার বিদায়ী ২০২৩ সালে ছিল সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৪৭ শতাংশ। 

এর আগে ২০২০ সালের এপ্রিলে ব্যাংকঋণের সুদ সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল। এরপর মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় রেখে মেয়াদি আমানতের সুদহারও বেঁধে দেওয়া হয়, সে হার ছিল ৬ শতাংশ। এ কারণে দীর্ঘদিন দেশের ব্যাংক খাতে ঋণ ও আমানতের ক্ষেত্রে সুদহার ৯-৬–এ সীমাবদ্ধ ছিল। পরে যা ব্যাংক খাতে ৯-৬ হিসেবে পরিচিতি পায়।