বেসরকারি এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে যাচ্ছে বেসরকারি পদ্মা ব্যাংক। বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) এক্সিম ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক্সিম ব্যাংকের এক পরিচালক গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আপাতত বেসরকারি পদ্মা ব্যাংককে আমাদের ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিগগিরই এ সিদ্ধান্ত অনুমোদনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদনের পর এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে।
এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছিল, স্বেচ্ছায় কিছু ব্যাংককে একীভূত করার সুযোগ দেওয়া হবে। চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলো চাইলে স্বেচ্ছায় একীভূত হতে পারবে। এরপর আগামী বছরের মার্চে নীতিমালা অনুযায়ী, যারা দুর্বল তালিকায় পড়বে, তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।
গত মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক জানিয়েছিলেন, ব্যাংক একীভূত করা হচ্ছে এমন আলোচনার মধ্যে ৪ মার্চ ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) একটি প্রতিনিধিদল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে দেখা করে। এ সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়ে দেয়, চলতি বছরের মধ্যে ৭ থেকে ১০টি দুর্বল ব্যাংক সবল বা ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে পারে। এ সময়ের মধ্যে দুর্বল ব্যাংকগুলো নিজেদের ইচ্ছায় একীভূত না হলে আগামী বছর থেকে তাদের চাপ দিয়ে একীভূত করা হবে।
মেজবাউল হক বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, দুর্বল ও সবল ব্যাংকের তালিকা রিসার্চের জন্য করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল স্টেবিলিটি ডিপার্টমেন্ট ব্যাংকগুলোর ছয়টি কম্পোনেন্ট নিয়ে এসব ব্যাংকের তালিকা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই গোপন প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ছয় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসহ ৩৮টি ব্যাংককে দুর্বল ব্যাংক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বর্তমানে দেশে তফসিলি ব্যাংকের সংখ্যা ৬১টি। তবে প্রতিবেদনে ৫৪ ব্যাংকের অবস্থা বিশ্লেষণ করা হয়। যেখানে ১২টি ব্যাংকের অবস্থান অত্যন্ত নাজুক, যার ৯টি ইতিমধ্যে রেড জোনে চলে গেছে। ইয়েলো জোনে রয়েছে ২৯টি ব্যাংক আর ৩টি ব্যাংকের রেড জোনের খুব কাছাকাছি অবস্থান। প্রতিবেদনটির বিচারে রেড জোনের ব্যাংকগুলো সবচেয়ে খারাপ (পুওর) এবং ইয়েলো জোনের ব্যাংকগুলো দুর্বল (উইক)। আর গ্রিন জোনের ব্যাংকগুলো ভালো মানের (গুড); অর্থাৎ দেশে এখন সবলের চেয়ে দুর্বল ব্যাংকের সংখ্যাই বেশি। প্রতিবেদনে লাল ও হলুদ জোনে থাকা ব্যাংকগুলোর বিশেষ মনোযোগ প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ভালো অবস্থায় রয়েছে প্রাইম ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, সীমান্ত ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, ব্যাংক আল ফালাহ, উরি ব্যাংক, এইচএসবিসি, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন, সিটি ব্যাংক এনএ, হাবিব ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া। রেড জোনে থাকা ব্যাংকগুলো হলো বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, ন্যাশনাল ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক ও এবি ব্যাংক। তিনটি ইয়েলো জোনে থাকলেও রেড জোনের কাছাকাছি থাকা ব্যাংকগুলো হলো বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল), সোনালী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক।
ইয়েলো জোন বা হলুদ সীমায় থাকা ২৯টির মধ্যে ২৬টি ব্যাংক হলো, আইএফআইসি ব্যাংক, মেঘনা ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, আল আরাফাহ, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা, গ্লোবাল ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, দ্য সিটি ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, সাউথ বাংলা, মধুমতি, ঢাকা ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক ও পূবালী ব্যাংক।