ভ্যাট অডিট প্রক্রিয়া থেকে সরে আসতে যাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকরদাতাদের মধ্যে ভীতি তৈরি করা যাবে নাযাদের আয়কর রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক২০২৪-২৫ অর্থবছরে রপ্তানির লক্ষ্য সাড়ে ৫৭ বিলিয়ন ডলার এস আলমের লাখ কোটি টাকা ঋণ, ব্যাংকে জমা ২৬ হাজার কোটি
No icon

এস আলমের লাখ কোটি টাকা ঋণ, ব্যাংকে জমা ২৬ হাজার কোটি

বিতর্কিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম, তাঁর পরিবারের সদস্য এবং তাঁদের প্রতিষ্ঠানের নামে কেবল ছয়টি ব্যাংকেই বিপুল অঙ্কের নগদ টাকার সন্ধান মিলেছে। এ অর্থের পরিমাণ প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা। এস আলম, তাঁর স্ত্রী ফারজানা পারভীন, ভাই আবদুল্লাহ হাসানসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে এই টাকা ব্যাংকগুলোতে জমা আছে। এসব ব্যাংকের পাঁচটিই এস আলম গ্রুপের সরাসরি মালিকানায় অথবা নিয়ন্ত্রণে ছিল।জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর অঞ্চল-১৫ এর এক অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে এস আলম গ্রুপের এ বিপুল অর্থের সন্ধান মিলেছে। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ওই কর অঞ্চলের কর্মকর্তারা ব্যাংকে জমা পুরো অর্থ কর বিভাগের আয়ত্তে আনার উদ্যোগ নিয়েছেন। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরপরই কর অঞ্চল-১৫ এস আলম পরিবারের সদস্য ও তাঁদের প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব তলব করেছিল। সাধারণত ফাঁকি দেওয়া কর আদায় করার লক্ষ্যে হিসাব তলব করে থাকে কর বিভাগ।কর অঞ্চল-১৫ এর তদন্ত দল সূত্রে জানা গেছে, গত পাঁচ বছরে ছয়টি ব্যাংকে থাকা এস আলম গ্রুপের মালিকপক্ষ ও প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন হিসাবে প্রায় ১ লাখ ৯ হাজার কোটি টাকা ঢুকেছে (ডিপোজিট হয়েছে) বলে অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে। এর বেশির ভাগই ঋণের অর্থ হিসেবে জমা হয়েছে। এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে নামে-বেনামে ঋণ নিয়ে টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে। ২০২০ সালের পর থেকে শুধু এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেডের একাধিক হিসাবেই ঢুকেছে ৮৩ হাজার ৭০৬ কোটি টাকা।

যে ছয়টি ব্যাংকে এস আলম গ্রুপের বিপুল অঙ্কের টাকার সন্ধান মিলেছে, সেগুলো হলো ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, আল আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক। এর মধ্যে এক্সিম ব্যাংক ও আল আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক ছাড়া বাকি চারটি ব্যাংকই সরাসরি এস আলম গ্রুপের মালিকানায় ছিল। এ ছাড়া আল আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকও ছিল এই গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে। ছয়টি ব্যাংকের পর্ষদই বাতিল করে নতুন পর্ষদ গঠন করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে চলে যান। ওই সরকারের আমলে যেসব ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিশেষ সুবিধা পেয়েছে, তাদের অন্যতম ছিল এস আলম গ্রুপ। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে ও রাষ্ট্রীয় প্রশ্রয়ে এস আলম ও তাঁর পরিবার গত এক দশকে ব্যাংক দখলসহ নানা ধরনের আর্থিক অপরাধ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংকগুলো থেকে নামে বেনামে অর্থ বের করে তা পাচার করা হয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মোস্তফা কে মুজেরী বলেন, বিগত সরকারের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ব্যাংক লুটপাট হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের পর্ষদ লুটপাটে সহায়তা করেছে; কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক নীরব ছিল। এই তিন পক্ষের মধ্যে অনৈতিক চক্র তৈরি হয়েছিল। এস আলম গ্রুপ যখন ব্যাংক থেকে টাকা সরিয়ে নিচ্ছিল, তখন বাধা দেওয়ার কেউ ছিল না। কারণ, সব পক্ষই সুবিধা পেত।মোস্তফা কে মুজেরী আরও বলেন, কর ফাঁকির তদন্তের মাধ্যমে এস আলম গ্রুপসহ জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে পারলে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের কাজ করার সাহস পাবে না।