আগামী সপ্তাহ থেকে কার্যকর হচ্ছে বাংলাদেশ-ভুটান অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি বা প্রেফারেন্সিয়াল ট্রেড এগ্রিমেন্ট (পিটিএ)। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য শুরু হচ্ছে। ভুটানের বাজারে বাংলাদেশের ১০০ পণ্য শুল্কমুক্ত প্রবেশের সুবিধা পাবে। আর ভুটানের ৩৪টি পণ্য বিনা শুল্কে আসবে বাংলাদেশের বাজারে। দুই দেশই ইতোমধ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় থাকা পণ্যের তালিকা প্রকাশ করেছে। ২০২০ সালে ৬ ডিসেম্বর দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে পিটিএ সই করেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, করোনাসহ বিভিন্ন কারণে চুক্তি কার্যকরে দেরি হয়েছে। গত ১ জুলাই থেকে চুক্তিটি কার্যকরের উদ্যোগ ছিল।বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ) নূর মো. মাহবুবুল হক বলেন, আগামী সপ্তাহ থেকে ভুটানের সঙ্গে করা পিটিএ কার্যকর হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ চুক্তি শুধু বাংলাদেশ-ভুটানের বাণিজ্য দিয়ে বিবেচনা করা ঠিক হবে না। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপনে বাংলাদেশের যাত্রা হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। কারণ আগামীতে বাংলাদেশকে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এ ধরনের চুক্তিতে যেতে হবে। সে ক্ষেত্রে ভুটানের সঙ্গে চুক্তির অভিজ্ঞতা বাংলাদেশ কাজে লাগাতে পারবে। তাঁরা বলছেন, বাংলাদেশ ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হয়ে আসবে। এরপর আরও তিন বছর বিশ্ববাণিজ্যে এলডিসি হিসেবে সুবিধা পেলেও পরে আর পাবে না। তখন রপ্তানি বাণিজ্য ধরে রাখতে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নত করার ক্ষেত্রেও ভুটানের এ চুক্তি প্রভাব ফেলবে।
গত ৪ আগস্ট প্রকাশিত এনবিআরের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ভুটানে উৎপাদিত ও প্রক্রিয়াজাত করা দুধ, প্রাকৃতিক মধু, গমের আটা, আচার, ফলের জেলি, মোরব্বা, সয়াবিন থেকে তৈরি খাদ্যদ্রব্য, খনিজ ও বায়ুযুক্ত জল বা পানি, ভুসি, কোয়ার্টজাইট, সিমেন্ট ক্লিংকার, পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট, সাবান, কাঠের পার্টিকেল বোর্ড, ফেরো সিলিকন, লোহার রড ও বার এবং অমিশ্র ইস্পাত, অফিসে ও শোবার ঘরে ব্যবহার করার জন্য কাঠের আসবাবপত্র আমদানির ওপর থেকে আমদানি শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। এসব পণ্যের বাইরে ভুটানের আলুবীজ, আপেল, কমলাসহ বিভিন্ন ফল ও সবজি, বিভিন্ন ধরনের পাথর, জিপসাম, লাইমস্টোন, ক্যালসিয়াম কার্বোনেট, বিলেট ইত্যাদি বাংলাদেশের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে।
বাংলাদেশের যেসব পণ্য ভুটানের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশ সুবিধা পাবে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- বিভিন্ন ধরনের তৈরি পোশাক, পার্টিকেল বোর্ড, আনারস, পেয়ারা ও কমলার জুস, গ্রিন টি, পানি, শুকনা মাছ, কনডেন্সড মিল্ক, আলু, রুটি ও বিস্কুট, সিমেন্ট, শ্যাম্পু, বিভিন্ন ধরনের সাবান, বিভিন্ন ধরনের পাইপ, প্লাস্টিক পণ্য, বস্তা, ব্যাগ, টেবিলওয়্যার, কিচেনওয়্যার, বিভিন্ন ধরনের কার্পেট, পাদুকা, টাইলস, সিআই শিট, লোহার রড, অ্যালুমিনিয়াম দরজা, জানালা, বিভিন্ন ধরনের ফ্যান, ইলেকট্রিক ট্রান্সফরমার, ব্যাটারি, বৈদ্যুতিক তার, হাত ঘড়ি, দেয়াল ঘড়ি, আসবাবপত্র, টুথ ব্রাশ ইত্যাদি।বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, পিটিএ করার ফলে প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ রাজস্ব হারাবে বেশি। তবে দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের লাভ হবে। বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ খুব কম। ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ ভুটানে রপ্তানি করেছে প্রায় ১০০ কোটি টাকার পণ্য। ভুটান থেকে বাংলাদেশে আমদানি হয়েছে ৩২৯ কোটি টাকার পণ্য।