লাল তালিকামুক্ত হলো পাকিস্তানি সব পণ্যশতভাগ শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দেবে চীনঅনলাইনে ২০ হাজার আয়কর রিটার্ন দাখিলভ্যাট অডিট প্রক্রিয়া থেকে সরে আসতে যাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকরদাতাদের মধ্যে ভীতি তৈরি করা যাবে না
No icon

সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে কর রেয়াত কমছে

সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে আয়কর রেয়াত কমানো হচ্ছে। মূলত সরকারের ঋণ ব্যবস্থাপনার ঝুঁকি ও ব্যয় হ্রাসের লক্ষ্যে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ জন্য আগামী অর্থবছরের বাজেটে অর্থবিলের মাধ্যমে আয়কর অধ্যাদেশে সংশোধনী আনা হবে। ক্যাশ অ্যান্ড ডেট ম্যানেজমেন্ট (সিডিএমসি) কমিটির গত ৫ ডিসেম্বর সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় সঞ্চয়পত্রে কর রেয়াত যৌক্তিকীকরণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভায় অর্থ সচিব আবদুর রউফ তালুকদারের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন হিসাব মহানিয়ন্ত্রক, ডাক অধিদফতর, সঞ্চয়পত্র অধিদফতর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রতিনিধিরা। সভায় বলা হয়, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারীরা একদিকে যেমন উচ্চহারে সুদ পাচ্ছেন, অন্যদিকে আয়কর রেয়াত পাচ্ছেন। এক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীরা ডাবল বেনিফিট পাচ্ছেন। এ ধরনের দ্বৈত সুবিধাপ্রাপ্তি আয়কর রেয়াত যৌক্তিকীকরণের মাধ্যমে হ্রাস করা যেতে পারে, যা এক ধরনের সামাজিক ও আর্থিক সমতার নীতিকে সমুন্নত রাখার প্রয়াস। এর পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআরকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআরের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সঞ্চয়পত্রে কর রেয়াত কমানো হবে। তবে অর্থবছরের মাঝামাঝি রেয়াতি সুবিধা যৌক্তিকীকরণ করা হলে জটিলতার সৃষ্টি করবে, যা ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের হয়রানি বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই এনবিআর আগামী অর্থবছরের বাজেটে রেয়াতি সুবিধা যৌক্তিকীকরণ করবে।

বর্তমানে সঞ্চয়পত্রসহ ৯ খাতে বিনিয়োগ এবং ১৩ খাতে দান করলে কর রেয়াত পাওয়া যায়। এসব খাতে একজন করদাতা তার মোট বার্ষিক আয়ের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ বা দান করে রেয়াত পেতে পারেন। এর বেশি বিনিয়োগ বা দান করলে অতিরিক্ত অংশের জন্য কর রেয়াত মিলবে না।

করদাতার বার্ষিক আয় ১৫ লাখ টাকার কম হলে মোট বিনিয়োগ ও দানের বিপরীতে ১৫ শতাংশ কর ছাড় মিলবে। আর বার্ষিক আয় ১৫ লাখ টাকার বেশি হলে ১০ শতাংশ হারে কর ছাড় পাওয়া যাবে। সর্বোচ্চ দেড় কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ বা দান করে কর রেয়াতের সুযোগ নেয়া যাবে।

তথ্য মতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সরকার জাতীয় সঞ্চয় প্রকল্প থেকে গৃহীত ঋণের বিপরীতে সুদ বাবদ ২৪ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে। যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরের তুলনায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা বেশি। অন্যদিকে সরকারের ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণের বিপরীতে সুদ ব্যয় কমেছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ব্যাংকিং খাত নেয়া ঋণের বিপরীতে সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে ১২ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ২ হাজার কোটি টাকা কম।

সূত্র জানায়, ঋণ ব্যবস্থাপনায় ভারসাম্য আনতে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় বিনিয়োগের সীমা কমানো হয়েছে এবং কর রেয়াত সুবিধা কমানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আরেকটি কারণ হচ্ছে, ব্যাংক ঋণের সুদ হার নয়-ছয়ে& নামিয়ে আনতে সঞ্চয়পত্রের সুদ হার কমানো হচ্ছে।

এর অংশ হিসেবে ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের সুদ হার অর্ধেক করে ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ। এক বছর মেয়াদি ডাকঘর সঞ্চয়পত্রে সুদহার নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ শতাংশ, যা আগে ছিল ১০ দশমিক ২০ শতাংশ। দুই বছর মেয়াদের সঞ্চয়পত্রে সুদহার নির্ধারণ করা হয়েছে সাড়ে ৫ শতাংশ, আগে যা ছিল ১০ দশমিক ৭০ শতাংশ।

তিন বছর মেয়াদের সঞ্চয়পত্রে সুদের হার নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ শতাংশ, যা আগে ছিল ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। এর আগে চলতি বাজেটে সঞ্চয়পত্রে উৎসে কর ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ  বলেন, সঞ্চয়পত্রে সুদ হার বা কর রেয়াত সুবিধা কমানো সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। সঞ্চয়পত্র সামাজিক সহায়তা কর্মসূচির মতো, যেখানে মধ্যবিত্ত, নিুবিত্ত, বয়স্ক বা অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা সারাজীবনের জমানো অর্থ বিনিয়োগ করে কিছু অর্থ পান। পাকিস্তান আমল থেকেই এটি চালু ছিল। হঠাৎ করেই এ সুবিধা ছিনিয়ে নেয়া হলে এই গ্রুপটা কোথায় যাবে। বিদেশে বেকার, বয়স্ক বা অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের ভাতা দেয়া হয়। আমাদের দেশে সেই সুযোগ নেই। তাই সঞ্চয়পত্রের বিদ্যমান সুবিধা বহাল রাখা উচিত বলে মনে করি।