জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন ও রাজস্ব আয় বাড়াতে তামাক কর এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স-আত্মা।মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান এফসিএমএর সঙ্গে এক বৈঠকে এই দাবি তুলে ধরেন প্রজ্ঞা ও আত্মার প্রতিনিধি দল।বৈঠকে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, সবাই কর কমাতে আসে, আর আপনারা কর বাড়াতে এসেছেন এজন্য ধন্যবাদ। আপনাদের সবগুলো সংস্কার প্রস্তাব যৌক্তিক। আসন্ন বাজেট তৈরিতে এগুলো বিবেচনায় আনবো এবং আইন সংশোধনে যথার্থ ভূমিকা রাখবো।বৈঠকে জানানো হয়, তামাক ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে কর বৃদ্ধির মাধ্যমে তামাক পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতি। তবে বাংলাদেশে তামাকপণ্য অত্যন্ত সস্তা ও সহজলভ্য এবং তামাক কর কাঠামো ত্রুটিপূর্ণ। এতে তরুণ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী তামাক ব্যবহারে বিশেষভাবে উৎসাহিত হচ্ছে। তামাক ব্যবহারের কারণে দেশে বছরে এক লাখ ৬১ হাজার মানুষ মারা যায়। তামাক ব্যবহারজনিত মৃত্যু ও অসুস্থতা বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকারের স্বাস্থ্য ব্যয়ও বাড়ছে।
মূল্যস্ফীতি এবং আয় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সব ধরনের সিগারেটের দাম বৃদ্ধি, নিম্নস্তরের সিগারেটের দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক খুচরা মূল্যের কমপক্ষে ৭০ শতাংশ করা এবং সিগারেটে বহুস্তর বিশিষ্ট অ্যাডভ্যালোরেম কর পদ্ধতির পরিবর্তে ইউনিফর্ম স্পেসিফিক বা মিক্সড (স্পেসিফিক ও অ্যাডভ্যালোরেম) কর পদ্ধতি প্রচলনের মাধ্যমে রাজস্ব বৃদ্ধি এবং জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে বলে আলোচনায় উঠে আসে।এসময় এনবিআরের তথ্য তুলে ধরে জানানো হয়, আইন শক্তিশালীকরণের সঙ্গে তামাকে রাজস্ব কমার কোনো সম্পর্ক নেই। ২০০৫ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাস হওয়ার পর পরবর্তী ২০০৫-০৬ এবং ২০০৬-০৭ অর্থবছরে সিগারেট খাতে রাজস্ব আয় বেড়েছে যথাক্রমে ১৭.৯৭ শতাংশ এবং ৩৭.৫২ শতাংশ। একইভাবে, ২০১৩ সালের সংশোধনীর পর পরবর্তী ২০১৩-১৪ এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সিগারেট খাতে রাজস্ব আয় বেড়েছে যথাক্রমে ২৫.৫১ শতাংশ এবং ৪৬.৫২ শতাংশ। সুতরাং তামাক কোম্পানিগুলোর তৎপরতায় বিভ্রান্ত না হয়ে খসড়া সংশোধনীটি দ্রুত পাস করতে এনবিআরকে সহায়তা প্রদানের অনুরোধ জানানো হয় বৈঠকে।বৈঠকে এনবিআর চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী, আত্মার আহ্বায়ক মতুর্জা হায়দার লিটন, সহ-আহ্বায়ক নাদিরা কিরণ ও মিজান চৌধুরী, প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের এবং কর্মসূচি প্রধান মো. হাসান শাহরিয়ার।