ইআরডি-র প্রতিবেদন অনুযায়ী বাড়ছে দেশি-বিদেশি ঋণের ঝুঁকিজুন নাগাদ আয়কর রিটার্ন ৪৫ লাখে উন্নীত হবেউল্কা গেমসের কর ফাঁকির ৫০ কোটি টাকা আদায়ে ব্র্যাক ব্যাংকে এনবিআরবাজেটের আকার কমানোর পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলইরানের তেল রফতানিতে বাধা নেই
No icon

৬ মাসে আদায় করতে হবে ১ লাখ ৯৮ হাজার ১৭৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা

কাটছাটের পরও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ৬ মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কে আদায় করতে হবে ১ লাখ ৮৩ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব। এনবিআর ৬ মাসে রাজস্ব আদায় করেছে ৯৮ হাজার ২৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। বাকি ৬ মাসে আদায় করতে হবে ১ লাখ ৯৮ হাজার ১৭৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এ কারণে রাজস্বের এই লক্ষ্য অর্জনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া স্বয়ং মাঠে নেমেছেন। এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, চলতি অর্থবছর ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকার বিপরীতে গত ৬ মাসে আদায় হয়েছে ৯৮ হাজার ২৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এই ৬ মাসের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে বাকি ৬ মাসে আদায় করতে হবে ১ লাখ ৯৮ হাজার ১৭৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এমন পরিস্থিতিতে অর্থমন্ত্রনালয়ে সংশোধিত বাজেটে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ১৫ হাজার কোটি টাকা কর্তনের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এই কাটসাঁটের পরেও ৬ মাসে ১ লাখ ৮৩ হাজার ১৭৩ কোটি ২৪ লাখ টাকার রাজস্ব এনবিআরকে আহরণ করতে হবে। গত জানুয়ারি মাসের রাজস্ব আহরণ কার্যক্রম বর্তমানে চলছে। ২৫ ফেব্রুয়ারির পর জানুয়ারির চিত্র পাওয়া যাবে। আর তাই এনবিআর চেয়ারম্যান বর্তমানে স্বয়ং বিভিন্ন কাস্টমস হাউস এবং ভ্যাটের কমিশনারেটগুলো পরিদর্শন করছেন।

অর্থমন্ত্রণালয়ে সংশোধিত বাজেটে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা কর্তনের প্রস্তাব পাঠানোর কথা উল্লেখ করে এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, অতীতের মতো রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করে কিছুটা কমিয়ে আনা হতে পারে। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) প্রায় ৪৩ শতাংশ বাড়তি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়। অথচ এনবিআরের রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি এর ধারে কাছেও নেই। গত জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ মাসে এনবিআরের রাজস্ব আদায় পূর্বের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে মাত্র ৬ শতাংশ বেড়েছে। ফলে গত ৬ মাসে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ে এত কম প্রবৃদ্ধি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সূত্র জানিয়েছে, গত পাঁচ বছরে কখনোই এত কম হারে রাজস্ব আদায় বাড়েনি। গত পাঁচ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ। সর্বশেষ গত অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৭ শতাংশ।

সূত্র জানিয়েছে, গত সাত মাসে মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ৬শ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে আদায় বেড়েছে ৫ দশমিক ৯৯ শতাংশ। আয়কর, ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) ও আমদানি শুল্ক-এ তিনটি খাত থেকে এনবিআর মোটাদাগে রাজস্ব আদায় করে থাকে। এর মধ্যে গত সাত মাসে শুল্ক ও ভ্যাট আদায়ের প্রবৃদ্ধিতে তলানিতে এনবিআর। এ দুটি খাতে আদায় বেড়েছে যথাক্রমে ৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ ও ৪ শতাংশ হারে। আলোচ্য সময়ে শুল্ক আদায় হয়েছে ৩৬ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা ও ৪৪ হাজার ৯৫৮ কোটি টাকা। আর ১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে আয়কর আদায় হয়েছে ৩৩ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা।

বর্তমান রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি সম্পর্কে এনবিআর চেয়ারম্যান মো: মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, অর্থবছরের প্রথমার্ধে কিছু প্রতিবন্ধকতা ছিল। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমদানি-রফতানি কমে যাওয়ায় কাস্টম হাউজগুলো লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী শুল্ক আহরণ করতে পারেনি। ভোটের কারণে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট আহরণে মাঠ পর্যায়ে বড় তদারকি বন্ধ ছিল। এখন কর্মকর্তাদের নতুন করে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। রাজস্ব আদায়ের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে অর্থবছর শেষে ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরিত হবে। তবে আমাদের লক্ষ্য থাকবে বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা।

২০১৭-১৮ অর্থবছরের শুরুতে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। পরবর্তীতে বছরের শেষ দিকে এসে তা কমিয়ে ২ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা করা হলেও বছর শেষে আদায় হয়েছিল ২ লাখ ৬ হাজার কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি হয়েছিল প্রায় ১৮ শতাংশ। এর আগের চার বছরে বছরের শুরুতে নেওয়া লক্ষ্যমাত্রা শেষদিকে এসে কমিয়ে আনা হতো। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ১ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি ছিল ১৯ শতাংশ।