চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর রাজস্ব আহরণে ঘাটতির পরিমাণ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে ১ লাখ ৫১ হাজার ১০০ কোটি টাকা লক্ষ্যের বিপরীতে এনবিআর রাজস্ব আহরণ করেছে ১ লাখ ১৭ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের জন্য রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা। এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন-২০১২ বাস্তবায়ন না হওয়ায় ভ্যাট আহরণ পদ্ধতিতে পুরোপুরি অনলাইন চালু করা যায়নি। এলএনজি ও প্রাকৃতিক গ্যাসের ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট অব্যাহতি দেয়ায় এনবিআর বড় ধরনের রাজস্ব হারিয়েছে। পাশাপাশি মোবাইল ফোন, অটোমোবাইল, ইন্টারনেটসহ বেশকিছু খাতে ভ্যাট ছাড় দেয়ায় কয়েক হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ কম হয়েছে। ব্যাংকিং খাতে করপোরেট কর কমানো এবং মূলধনি যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্ক কমানোর কারণে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আহরণ হয়নি। পাশাপাশি নির্বাচনের কারণে মাঠপর্যায়ে অভিযান পরিচালনা ব্যাহত হওয়াও রাজস্ব আহরণে প্রভাব ফেলেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে রাজস্ব আহরণের ভ্যাট খাত লক্ষ্য পূরণে সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে আছে। ভোক্তাপর্যায়ে আহরিত এ খাত থেকে ৬০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে রাজস্ব এসেছে ৪৬ হাজার ২৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ খাতটিতে এনবিআর ১৩ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা ঘাটতিতে পড়েছে। যদিও এ সময়ে এনবিআর ভ্যাট সচেতনতা বাড়াতে ভ্যাট সপ্তাহ, ভ্যাট দিবসসহ নানামুখী কর্মসূচির পাশাপাশি ভ্যাট ফাঁকি রোধে মাঠপর্যায়ে বেশকিছু অভিযানও পরিচালনা করে। অন্যদিকে প্রায় দেড় লাখ নতুন ই-বিআইএনের মাধ্যমে অনলাইনে ভ্যাট আহরণ প্রক্রিয়া শুরু করেছে সংস্থাটি।
ভ্যাটের পর সবচেয়ে বেশি ১১ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা ঘাটতি তৈরি হয়েছে আমদানি-রফতানি পর্যায়ের শুল্ক খাতে। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ৪৮ হাজার ১০০ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এ খাত থেকে রাজস্ব এসেছে ৩৬ হাজার ৭৭২ কোটি টাকা। এ সময়ে খাতটি থেকে রাজস্ব প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ১৮ শতাংশ। অর্থবছরের প্রথমার্ধে মূলধনি যন্ত্রাংশ আমদানি কম হওয়া ও কয়েকটি কাস্টম হাউজে আমদানিকৃত বৃহৎ ট্যারিফের পণ্য খালাস না হওয়ায় শুল্ক আহরণ লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী হয়নি। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় চিনি, গুঁড়ো দুধ, সয়াবিন তেল, সিমেন্টের ক্লিংকার, ওষুধ, আপেল, কমলাসহ বেশকিছু পণ্যেরও আমদানি কমেছে।
আয়কর মেলা, আয়কর সপ্তাহ, আয়কর ক্যাম্প আয়োজনসহ রাজস্ব আহরণ বাড়াতে নানামুখী উদ্যোগ থাকলেও রাজস্ব আহরণে লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে আয়কর খাতও। সবচেয়ে বেশি ১১ দশমিক ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি থাকলেও অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে এ খাতে লক্ষ্যমাত্রা থেকে রাজস্ব কম এসেছে ৭ হাজার কোটি টাকা। জুলাই-জানুয়ারি সময়ে আয়কর ও ভ্রমণ কর খাতে ৪৩ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এনবিআর আহরণ করেছে ৩৫ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি।
রাজস্ব আহরণের প্রবৃদ্ধি বিচারেও ৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে সংস্থাটি। চলতি অর্থবছরে ৩৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও প্রথম সাত মাসে এনবিআরের অর্জন ৭ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। গত অর্থবছরে যেখানে একই সময়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ। এর আগে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে রাজস্ব আহরণে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
উল্লেখ্য, রাজস্ব খাতে বড় সংস্কার না আনলেও ৩১ দশমিক ৬১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে চলতি অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকার রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ভ্যাট খাতে ৩২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। রাজস্ব আহরণের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খাত আয়করে ২৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে ১ লাখ ২ হাজার কোটি ও শুল্কে ২৮ শতাংশ বাড়িয়ে ৮৪ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।