জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেছেন, করপোরেট করহার কমালে আমাদের যে রাজস্ব ঘাটতি হবে, সেই পথ থেকে বেরিয়ে আসার কথা কেউ বলছেন না। আমরা কমাতে চাই, তবে রাজস্ব ঘাটতি বাড়িয়ে নয়। সোমবার বিকেলে এনবিআর সম্মেলন কক্ষে প্রাক-বাজেট আলোচনায় বিভিন্ন সংগঠন নেতাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এসব কথা বলেন। সভায় বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড), বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা) ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) প্রতিনিধিরা অংশ নেন। মোশাররফ বলেন, করপোরেট কর হার কমালে আমাদের রাজস্ব ঘাটতি বাড়বে, সেই বিষয়টি সবার মাথায় রাখতে হবে। কারণ, দেশের জাতীয় বাজেটের আকার দিন দিন বড় হচ্ছে। সেই অনুসারে আমাদের রাজস্ব যাতে বাড়ে সেই কাজ করতে হবে।
দেশে বিনিয়োগের সুযোগ বাড়াতে আগামী অর্থবছর থেকে করপোরেট কর হার কমানোর দাবির প্রেক্ষিতে এনবিআর চেয়ারম্যান আরো বলেন, আসন্ন অর্থবছরের বাজেটে আপনারা অনেকেই করপোরেট কর কমানোর ব্যাপারে জোর দাবি জানাচ্ছেন। আমরা এই কর হার কমাবো সেটা বলছি না, তবে করপোরেট কর হার কমালে আমাদের যে রাজস্ব ঘাটতি হবে, সেই পথ থেকে বেরিয়ে আসার কথা কেউ বলছেন না। ঘাটতি কমিয়ে করপোরেট কর হার কীভাবে কমাবো- সেই বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ করছি। এ কাজে আপনাদের সহায়তা দরকার।
আয়কর মুক্ত সীমা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেকেই ব্যক্তি শ্রেণির সর্বোচ্চ কর হার ২০ থেকে ২৫ শতাংশ করার কথা বলছেন। আবার আয়কর মুক্ত সীমা বাড়ানোর দাবি করছেন। আয়কর মুক্ত সীমা আড়াই লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে তিন লাখের ওপরে করার দাবি জানাচ্ছেন।
আমাদের দেশে আয়কর হার অনেক বেশি। যা সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ। কিন্তু আমি দেখছি, অনেক দেশের তুলনায় এ হার কম।
তিনি বলেন, রাজস্ব কমবে- এমন কোন কাজ করা যাবে না। তবে আয়করের আওতা বাড়ানো গেলে আপনাদের দাবি রাখা যেতে পারে। আমরা কাজ করছি, কীভাবে আপনাদের দাবি রাখা যায় সে বিষয়ে। সেই জন্য আমরা আয়করের আওতা বাড়াতে চাচ্ছি। আশা করছি, এটা বাড়ানো গেলে আপনাদের দাবি পূরণ করা যাবে।’
ভ্যাট প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, নতুন ভ্যাট চালুর সঙ্গে সঙ্গে আমরা অটোমেশনে যেতে চাই। সেই লক্ষে অটোমেশন কাজ চলছে। আমরা আপনাদের উন্নয়নে সব সময় অনেক সুযোগ সুবিধা দিয়ে আসছি। আমাদের পলিসির কারণে আজ গার্মেন্টস রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া শিল্প উন্নয়নে কর অবকাশসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
প্রাক-বাজেট আলোচনায় আয়কর-এ ৪১টি, শুল্কে ৪২টি এবং ভ্যাটে ৪৪টি দাবি রাখেন বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড)।
এসব দাবিগুলোর মধ্যে উল্লেখ্য যোগ্য হলো- ব্যক্তির আয়কর মুক্ত সীমা বাড়ানো, করপোরেট করের সীমা বাড়ানো, ট্যাক্স পেয়ার কার্ড সুবিধা প্রদান, কাঁচামাল আমদানির ওপরে অগ্রীম আয়কর প্রত্যাহার, করনীতি সহজ, ইনকাম কর ফরম সহজ, ভ্যাট হার কমানো, সার্বজনীন ভ্যাটের ন্যায় হ্রাসকৃত প্রত্যেকটি ভ্যাট হারের জন্য রেয়াতের ব্যবস্থা থাকা গুরুত্বপূর্ণ দাবি রাখেন।
এসময় জোন ডেভেলপার ও ইউনিট বিনিয়োগকারীদের জন্য আর্থিক প্রণোদনার পাঁচটি দাবি রাখে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)।
অপরদিক ইপিজেডে বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রথম দুই বছর কর অব্যাহতি সুবিধার দাবি রাখেন বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা)। এর পরের দুই বছর (৩য় ও ৪র্থ বছর) ৫০ শতাংশসহ পঞ্চম বছরে ২৫ শতাংশ কর অব্যাহতি দাবি করেন বেপজা। এছাড়া এ খাতের উন্নয়নে কর সংক্রান্ত বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ দাবি রাখেন তারা।