করোনা সংক্রমণ এড়াতে এবার জাতীয় আয়কর মেলার আয়োজন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবে করদাতাদের সুবিধায় প্রতিটি কর অঞ্চলে মেলার মতো পরিবেশ বজায় রেখে আয়কর রিটার্ন জমাসহ রাজস্বসেবা প্রদানের চেষ্টা করা হয়েছে। গতকাল সোমবার কয়েকটি কর অঞ্চল ঘুরে আয়কর রিটার্ন জমাসহ রাজস্বসংক্রান্ত সেবা প্রদানের এমন চিত্র দেখা যায়। সকাল ১১টায় সরেজমিনে কর অঞ্চল-৮-এর কার্যালয়ে প্রবেশ করতেই সারি সারি বুথ দেখা যায়। এসব বুথে করোনা ব্যাধি থেকে বাঁচতে স্বাস্থ্য সুরক্ষার সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট দূরত্বে বুথগুলো করা হয়েছে। সকাল ৯টার আগেই বেশির ভাগ বুথে সংশ্লিষ্ট কর অঞ্চলের কর্মকর্তারা উপস্থিত হয়ে বিকেল ৫টা বা ৬টা পর্যন্ত সেবা প্রদান করেছেন। কর্মকর্তারা বুথের এক পাশে ছিলেন। অন্য পাশে করদাতারা লাইন করে একজন একজন করে সেবা নিয়েছেন। সেবা নিতে আসা করদাতাদের অনেকে বুথের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে আয়কর রিটার্ন ফরম নিয়েছেন। এরপর কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় তা পূরণ করেছেন। আয়, ব্যয় ও সম্পদের হিসাবের পর কত টাকার কর হয়েছে তা-ও অনেক কর্মকর্তা হিসাব কষে করদাতাদের জানিয়ে দিয়েছেন। কোন ব্যাংকে গিয়ে কর জমা দিতে হবে, আশপাশে কোথায় কোন ব্যাংক আছে সে পরামর্শও বুথে উপস্থিত কর্মকর্তারা করদাতাদের দিয়েছেন। রিটার্ন জমায় সহযোগিতার পাশাপাশি ইটিআইএন প্রদানসহ রাজস্ববিষয়ক বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবও কর্মকর্তারা করদাতাদের দিয়েছেন।
করদাতাদের বেশির ভাগ আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪-এর ৮২বিবি ধারা অনুযায়ী সর্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে আয়কর রিটার্ন দাখিল করে থাকেন। অর্থাৎ করদাতা নিজেই নিজের আয়, ব্যয় ও সম্পদের হিসাব আয়কর ফরমে উল্লেখ করে থাকেন। আমাদের দেশে বেশির ভাগ করদাতা আয়কর রিটার্নে তথ্য উল্লেখ করতে আয়কর আইনজীবীর সহযোগিতা নিয়ে থাকেন। কর অঞ্চলের বিভিন্ন বুথে সাধারণ করদাতাদের পাশপাশি অনেক করদাতার পক্ষে তাঁদের আইনজীবীদের আয়কর রিটার্ন জমা দিতে দেখা গেছে। এ ক্ষেত্রে করদাতা নিজে উপস্থিত না হয়ে আইনজীবীকে নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি দিয়ে রিটার্ন জমা ও কর প্রদানের কাজটি করিয়ে থাকেন।
রাজস্ব প্রদানে উৎসাহিত করতে কর অঞ্চলের মধ্যে বিভিন্ন স্লোগান লেখা রংবেরঙের প্ল্যাকার্ড, ব্যানার টানানো আছে। কর অঞ্চলে মধ্যে উৎসবমুখর পরিবেশ বজায় রাখার চেষ্টা করা হয়েছে।
এই চিত্র শুধু কর অঞ্চল-৮-এর নয়, কর অঞ্চল-৬ ও কর অঞ্চল-১-এ গিয়েও একই ধরনের পরিবেশ দেখা যায়। এসব কর অঞ্চলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্তরিকতার সঙ্গে করদাতাদের আয়কর রিটার্ন জমাসহ রাজস্বসংক্রান্ত অন্যান্য সেবা প্রদান করছেন।
এনবিআর করনীতি সদস্য আলমগীর হোসেন বলেন, করোনার কারণে আয়কর মেলা না হলেও বিভিন্ন কর সার্কেলে আয়কর মেলার মতো পরিবেশ বজায় রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। আশা করি এতে করদাতারা সুফল পাবেন।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ বলেন, ২০১০ সাল থেকে আয়কর মেলা আয়োজন করা হয়। শুরু থেকেই এই মেলা ব্যাপক সাড়া ফেলে। করদাতাদের অনেকে সারা বছর অপেক্ষায় থেকে এই মেলায় রিটার্ন জমা দেন। আন্তরিক ও হয়রানিমুক্ত পরিবেশে রিটার্ন জমাসহ রাজস্বসংক্রান্ত সব সেবা পাওয়া যায় বলেই দিন দিন মেলা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
কর অঞ্চলগুলোতে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত আয়কর রিটার্ন জমা দিতে আসা করদাতার সংখ্যা বেশি থাকে। দুপুরে কিছুটা কমলেও বিকেল ৪টার দিকে আবারও করদাতার সংখ্যা বাড়ে। এখানে আসা করদাতাদের সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে রিটার্ন জমাসহ অন্যান্য সেবা নিতে দেখা যায়। তবে গত বছরের তুলনায় এবার করোনার কারণে আয়কর রিটার্ন দিতে আসা করদাতার সংখ্যা তুলনামূলক কম বলে জানান এনবিআরসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
নিয়মিত রিটার্ন জমার শেষ সময় ৩০ নভেম্বর। করদাতা যে কর সার্কেলের আওতায় আছেন সেখানকার উপকর কমিশনারের অনুমতি নিয়ে এই সময়ের পরেও রিটার্ন জমা দেওয়ার সুযোগ আছে। চলতি করবর্ষে করদাতার আয়, ব্যয় ও সম্পদের পরিমাণ এনবিআর নির্ধারিত ফরমে উল্লেখ করে হিসাব কষে ব্যাংকে গিয়ে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হয়। এই প্রক্রিয়াকে আয়কর রিটার্ন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বাড়িভাড়া, যাতায়াত ও চিকিৎসা ভাতা বাদ দিয়ে তিন লাখ পর্যন্ত বার্ষিক আয়ের ক্ষেত্রে করদাতাদের কোনো কর দিতে হবে না। মহিলা ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে আয়করসীমা তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা। আয়, ব্যয় ও সম্পদের প্রকৃত তথ্য গোপন করা হলে বা মিথ্যা তথ্য দেওয়া হলে রাজস্ব আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য করা হয়। এ ক্ষেত্রে এনবিআর প্রয়োজন মনে করলে মামলা করার আইনি অধিকার রাখে।