চলতি (২০২২-২৩) অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রাজস্ব আদায়ে ভালো প্রবৃদ্ধি থাকলেও তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে তা গতি হারিয়েছে। ফলে অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রাজস্ব আয়ে প্রবৃদ্ধি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে।এই তিন মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬৭ হাজার ১০৪ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ।জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিলাস পণ্যের আমদানি নিরুৎসাহিত করার পর থেকেই রাজস্ব আয় কমতে শুরু করেছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির ফলে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষ কমিয়েছে কেনাকাটা। ফলে রাজস্ব আয়ের সবচেয়ে বড় খাত ভ্যাট থেকে উল্লেখযোগ্য আয় আসেনি। বতর্মানে দেশে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে। গত আগস্টে সেটি ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে পৌঁছেছিল।
এনবিআরের সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরে জুলাই-আগস্টে রাজস্ব আয় আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৩ শতাংশ বাড়তে দেখা গেছে। সেখানে সেপ্টেম্বর শেষে সেই প্রবৃদ্ধি কমে ১৫ শতাংশে নেমে এসেছে।চলতি অর্থবছরে এনবিআরের মাধ্যমে মোট রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। প্রথম প্রান্তিকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭১ হাজার ১৭৮ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আদায় কম হয়েছে ৪ হাজার ৭৪ কোটি টাকা।পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে আমদানি শুল্ক খাতে আদায় হয় ২২ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের এই সময়ে আদায় হয়েছিল ১৯ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। এ হিসাবে এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এ খাতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা কম আদায় হয়েছে। তিন মাসে আমদানি শুল্ক আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৫ হাজার ৪৩ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ভ্যাট আদায় হয়েছে ২৪ হাজার ৫৪৬ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে একই সময়ে আদায় হয় ২১ হাজার ৯৪ কোটি টাকা। ভ্যাটে এই সময়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ সম্পদের আরেকটি উৎস আয়কর আদায় হয়েছে ২০ হাজার ১০২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময় আদায় হয়েছিল ১৭ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ১৩ দশমিক ৮২ শতাংশ।আয়করে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ৩৯১ কোটি, আর ভ্যাটে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯৬ কোটি টাকা কম আদায় করতে পেরেছে এনবিআর।সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, যে হারে রাজস্ব আদায় হচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে বছর শেষে রাজস্ব আদায়ের তিন লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা কঠিন হবে।প্রান্তিকের পাশাপাশি সেপ্টেম্বর মাসেও রাজস্ব আদায়ে সামান্য প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এই মাসে সর্বমোট ২৬ হাজার ৮৩৩ রাজস্ব আদায় হয়েছে যা বিগত অর্থবছরের তুলনায় ৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি।