দেশের ছয়টি শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সম্ভাব্য কর ফাঁকি অনুসন্ধানে নেমেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এসব শিল্পগোষ্ঠী হলো– বেক্সিমকো, এস আলম, বসুন্ধরা, সামিট, নাসা এবং ওরিয়ন। এস আলম গ্রুপের সম্ভাব্য কর ফাঁকির বিষয়ে অনুসন্ধান আগে থেকে চলছিল। গত বুধবার এনবিআরে এক বিশেষ বৈঠকে বাকি পাঁচ শিল্পগোষ্ঠীর বিষয়ে অনুসন্ধান শুরুর সিদ্ধান্ত হয়।সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান। নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিএবির চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সামিট গ্রুপ আলোচিত নাম। এর চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। এ গ্রুপের আবাসন, ভোগ্যপণ্যসহ বিভিন্ন খাতে ব্যবসা রয়েছে। ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যানের নাম ওবায়দুল করিম। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম এবং তাদের প্রতিষ্ঠানের কর-সংক্রান্ত অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। ব্যাংক লেনদেনের তথ্য এবং কর নথিতে দেখানো সম্পদের পাশাপাশি বেনামি সম্পদও খোঁজা হচ্ছে। এর আগে সাইফুল আলম ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব তলব করে কর অঞ্চল-১৫। এনবিআর জানিয়েছে, বিভিন্ন পন্থায় বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনকারী সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কর ফাঁকির বিশেষ অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করেছে সংস্থার সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি)। সিআইসি বর্তমান সময়ে প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদ পর্যালোচনা এবং সুনির্দিষ্ট গোপন তথ্যের ভিত্তিতে সম্ভাব্য কর ফাঁকি দেওয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের একটি তালিকা করেছে। তাদের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়ে বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, সঞ্চয় অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সাবেক মন্ত্রীসহ অনেকের ব্যাংক হিসাব তলব ও স্থগিত করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, গত বুধবার এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান সিআইসি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে এসব শিল্পগোষ্ঠীর গত কয়েক বছরের আয়কর, ভ্যাট, কাস্টমস-সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে তদন্ত করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া এসব গোষ্ঠীর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের আমদানি ও রপ্তানি তথ্য পর্যালোচনা করা হবে।এদিকে গত জুন মাসে এনবিআরের এক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উঠে আসে যে, এস আলম ভেজিটেবল অয়েল এবং এস আলম সুপার এডিবল অয়েল ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকার ওপর ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। এস আলম গ্রুপের এ দুই প্রতিষ্ঠান ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে পরের তিন বছর ভ্যাট রিটার্নে কম বিক্রি দেখিয়ে ও ভোজ্যতেল উৎপাদনের উপকরণ কেনায়ও ভ্যাট ফাঁকির মাধ্যমে এ ফাঁকি দেয়। সম্প্রতি এস আলম গ্রুপের ১৮টি কোম্পানির ভ্যাট ফাঁকির পরিমাণ নিরূপণে চট্টগ্রাম কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট ২০ সদস্যের একটি তদন্ত দল গঠন করেছে। এ তদন্ত দলকে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া এ গ্রুপের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের রাজস্ব ফাঁকি ও অর্থ পাচারের বিষয়টিও খতিয়ে দেখছে এনবিআর।বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ১০ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন।