আয়কর পেশাজাবীদের (আইটিপি) মতো ভ্যাট পরামর্শক লাইসেন্স দেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ জন্য এনবিআরের নির্ধারিত ফরমে আগ্রহী প্রার্থীকে আবেদন করতে হবে। যে কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাস বা সমমানের ডিগ্রিধারী ব্যক্তি ভ্যাট পরামর্শক লাইসেন্সের জন্য পরীক্ষা দিতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে প্রার্থীকে ভ্যাট আইন ও বিধি, ভ্যাট অনলাইন সিস্টেম, হিসাববিজ্ঞান, বাংলা ও ইংরেজি, কাস্টমস আইন, উন্নয়ন সারচার্জ ও লেভি আইন এবং আমদানি-রফতানি নীতি ও বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইনের ওপর ১০০ নম্বরের লিখিত ও ৫০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা দিতে হবে।
ইতিমধ্যেই মূল্য সংযোজন কর পরামর্শক (লাইসেন্স) বিধিমালার খসড়া তৈরি করেছে এনবিআর। এতে লাইসেন্সের জন্য আবেদন পদ্ধতি, পরীক্ষা, লাইসেন্সের মেয়াদ ও লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গের শাস্তির বিস্তারিত উল্লেখ আছে।
জানা গেছে, বর্তমানে আয়কর এবং আমদানি খাতের পাশাপাশি ভ্যাটে সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে পরামর্শক বা কনসালট্যান্ট নিয়োগের নিয়ম রয়েছে। তবে আয়কর খাতে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকলেও মূল্য সংযোজন কর খাতে নেই। ফলে পরামর্শকের নামে অসংখ্যা ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এদের বেশির ভাগেরই সংশ্নিষ্ট বিষয়ে কাজের অভিজ্ঞতা নেই। তাই এনবিআর এমন ব্যক্তিদের ভ্যাট পরামর্শ হিসেবে নিবন্ধন দিতে চাচ্ছে, যাদের ভ্যাট আইনের ওপর অভিজ্ঞতা আছে।
এনবিআর সূত্র জানায়, নতুন ভ্যাট আইনের আওতায় ভ্যাট পরামর্শক লাইসেন্স দেয়া হবে। লাইসেন্সের বিধিমালার খসড়া তৈরি করা হয়েছে। এটি আরও পর্যালোচনা করা হচ্ছে। আগামী বাজেটে নতুন আইনের সঙ্গে বিধিমালাটি প্রণয়ন করা হবে।
খসড়া বিধিমালা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২৫ বছর বয়সী স্নাতক বা সমমানের ডিগ্রিধারী যে কেউ লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন। অবশ্য সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান থেকে চাকরিচ্যুত বা বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হলে আবেদনের অযোগ্য বিবেচিত করা হবে। লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে বয়স নির্ধারণে এসএসসি বা সমমানের সনদের সত্যায়িত কপি, তিন কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, শিক্ষাগত যোগ্যতা সনদের সত্যায়িত কপি ও পরীক্ষার ফি হিসেবে ৫০০ টাকার ট্রেজারি চালান নির্দিষ্ট অর্থনৈতিক কোডে জমা দিতে হবে।
আবেদনের পর প্রার্থীকে ১০০ নম্বরের লিখিত ও ৫০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রার্থীকে ভ্যাট আইন ও বিধি, ভ্যাট অনলাইন সিস্টেম, হিসাববিজ্ঞান, বাংলা ও ইংরেজি, কাস্টমস আইন, উন্নয়ন সারচার্জ ও লেভি আইন এবং আমদানি-রফতানি নীতি ও বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইনের ওপর পরীক্ষা দিতে হবে। পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের পাঁচ বছর মেয়াদি পরামর্শক লাইসেন্স ইস্যু করা হবে। মেয়াদ শেষে নির্দিষ্ট সময়ের ভিত্তিতে যথাক্রমে পাঁচ হাজার, সাত হাজার ও ১০ হাজার টাকা জমা দিয়ে লাইসেন্স নবায়ন করা যাবে।
এ ছাড়াও বিধিমালার আওতায় পরামর্শক সহকারী হিসেবে লাইসেন্স দেয়া হবে। মূলত এরা ভ্যাট পরামর্শকের সহকারী হিসেবে কাজ করতে পারবেন। এ জন্য পরামর্শক নিজস্ব প্যাডে এনবিআরে আবেদন করতে পারবেন। এইচএসসি বা সমমানের শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্নরা পরামর্শক সহকারী হতে পারবেন। এ জন্য সহকারীর শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, পাসপোর্ট সাইজের ছবি, জাতীয়তা সনদপত্রের সত্যায়িত কপি ও ৩০০ টাকার ট্রেজারি চালান আবেদনের সঙ্গে জমা দিতে হবে।
সহকারীর লাইসেন্সের মেয়াদ পাঁচ বছর থাকবে। একজন পরামর্শক তার লাইসেন্সের বিপরীতে পাঁচটি সহকারী লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন। শুনানিতে উপস্থিত হওয়া ছাড়া পরামর্শক সহকারী পরামর্শকের পক্ষে যাবতীয় সব কাজ করতে পারবে। অবশ্য কোনো কারণে পরামর্শকের লাইসেন্স স্থগিত বা বাতিল হলে সহকারীর লাইসেন্স স্থগিত বা বাতিল হবে।
পরামর্শক কী কী দায়িত্ব পালন করবেন, তার বিস্তারিত বিধিমালায় বলা আছে। দায়িত্বে বরখেলাপ করলে লঘু অপরাধের জন্য প্রতিবার ২৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড আরোপ করা হবে। তিনবার একই ধরনের অপরাধ করলে চতুর্থবার লাইসেন্স বাতিল বা স্থগিত করা হবে। আর পরামর্শক সহকারী অপরাধ করলে প্রতিবার ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দণ্ডিত করা হবে। তবে পরামর্শক সহকারী একই অপরাধ চতুর্থবার করলে তার লাইসেন্স স্থগিত না করে সরাসরি বাতিল করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভ্যাটনীতির সদস্য রেজাউল হাসান বলেন, এনবিআরে ভ্যাট পরামর্শক পদে অনেক আবেদন জমা পড়েছে। এগুলো নিষ্পত্তি করতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ২০১৬ সালে বিধিমালার আলোকে এসব প্রার্থীর পরীক্ষা নেয়ার জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ১ জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করা হবে। তখন নতুন আইনের অধীনে পরামর্শক-উপদেষ্টা নিয়োগের বিধিমালা জারি করা হবে। এ ক্ষেত্রে পুরনো বিধিমালাটি সংশোধন করে নতুন আঙ্গিক দেয়া হবে।