তথ্য জালিয়াতি করে ৬ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে মেসার্স ইয়াছির পলিমার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির ক্রয় বিক্রয়সংক্রান্ত চলতি হিসাব পর্যালোচনা করে এ অনিয়ম উদ্ঘাটন করেছে চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেট। তথ্যমতে, মূল্য সংযোজন কর(মূসক) আইন ও বিধিমালা ১৯৯১ অনুযায়ী রেজিস্ট্রার সংরক্ষণ করলেও সব ধরনের বিক্রয়ের বিপরীতে ইয়াছির পলিমার ইন্ডাস্ট্রিজ তা পরিপালন করেনি। কিছু রেজিস্ট্রার ও কম্পিউটারে রক্ষিত নথি প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন মতো তৈরি করে সুবিধা মতো স্থানে ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টস ম্যানেজার ও অ্যাকাউন্টস কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত ডেইলি শিট(দৈনিক হিসাবের নথি)পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ক্রয় হিসাব, বিক্রয় হিসাব ও চলতি হিসাবের তথ্যের সঙ্গে ডেইলি শিটের তথ্যে বড় ধরনের ফারাক রয়েছে।
ভ্যাট কমিশনারেট কর্তৃক জব্দ হওয়া ইয়াছির পলিমার ইন্ডাস্ট্রিজের ডেইলি শিট ফোল্ডার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত মূসক বিভাগে যে হিসাব দেয়া হয়েছে, তাতে ৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকার মূসক পরিশোধ করা হয়নি। এছাড়া গত অর্থবছরে ৭৬ লাখ ৫৫ হাজার টাকার সম্পূরক শুল্কও ফাঁকি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
কাস্টমস,এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার মোহাম্মদ এনামুল হক এ ব্যাপারে বলেন, প্রতিষ্ঠানটির ডেস্কটপ কম্পিউটার ও প্রিন্টেড ডেইলি শিটে থাকা তথ্যকে প্রকৃত সরবরাহ মূল্য হিসেবে ধরা হয়েছে। আমাদের তদন্তে মূসক ও সম্পূরক শুল্কসহ ৬ কোটি ১৩ লাখ ৩৬ হাজার টাকা ফাঁকি দেয়ার প্রমাণ মিলেছে। এজন্য এরই মধ্যে মেসার্স ইয়াছির পলিমার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড বরাবর সরকারের এ রাজস্ব আদায়ে দাবিনামা জারি করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান ব্যবসায়িক কার্যক্রমও এখন নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
নথি অনুযায়ী চট্টগ্রামের ২৪৩৫,ফুল সানিপাড়া,পতেঙ্গা ঠিকানায় অবস্থিত মেসার্স ইয়াছির পলিমার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। রাজস্ব অনিয়ম উদ্ঘাটন হলে মূল্য সংযোজান কর আইন, ১৯৯১-এর ধারা ৫৫(১) মোতাবেক প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে কাস্টমস,এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের পক্ষ থেকে দাবিনামা-সংবলিত কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠানো হয়েছে।
এর আগে রাজস্ব কর্মকর্তাদের অভিযানে একটি ক্রয় বই(মূসক-১৬), একটি বিক্রয় বই(মূসক-১৭),খরচের হিসাব ফাইল ২৩টি,ফোল্ডার ২০টি,আয়কর ফোল্ডার একটি,২০১২-১৩ অর্থবছরের সিএ রিপোর্ট,ল্যাপটপ একটি,ডেস্কটপ একটি(যেখানে প্রতিষ্ঠানের ক্রয়-বিক্রয়সংক্রান্ত প্রকৃত হিসাব রয়েছে),৯৭টি চেক বই ও বিদ্যুৎ বিলের কপি জব্দ করেছে কাস্টমস,এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট।
প্রসঙ্গত,গত বছর ব্র্যাক ব্যাংকের পক্ষ থেকে দেশের তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে পাঠানো চিঠিতে ঋণখেলাপি যে নয়টি প্রতিষ্ঠানের তালিকা দেয়া হয়, সেখানে ইয়াছির পলিমার ইন্ডাস্ট্রিজের নাম ছিল। প্রতিষ্ঠানটির কাছে ২০ কোটি ৮৪ লাখ ৯৯ হাজার টাকা পাওনা রয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করে ব্র্যাক ব্যাংক।
চিঠিতে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ইয়াছির এন্টারপ্রাইজের কাছে ৪৬ কোটি ৬৫ লাখ ৪৪ হাজার টাকা, এমএস হায়াৎ ট্রেডিংয়ের কাছে ৬ কোটি ৫৯ লাখ ৫৮ হাজার, হক স্পেশালাইজড স্টিল মিলের কাছে ১০ কোটি ৭০ লাখ ৪২ হাজার,ক্রিয়েটিভ কনস্ট্রাকশনের কাছে ১ কোটি ৬৭ হাজার, আরএম সিস্টেম লিমিটেডের কাছে ৯৭ লাখ ২৮ হাজার,তালুকদার প্লাস্টিক কোম্পানি লিমিটেড ও তালুকদার ইউপিভিসি ফিটিংস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কাছে ১১ কোটি ৩ লাখ ১০ হাজার এবং তাসিন টেলিকমের কাছে ৬ লাখ ৫৪ হাজার টাকা পাওনা রয়েছে বলে উল্লেখ করে ব্র্যাক ব্যাংক।