মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাটে ব্যাপক অব্যাহতির কারণে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে কর আহরণের অনুপাত কম বলে জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। গত রোববার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দুই দিনব্যাপী রাজস্ব সম্মেলনে জাতীয় উন্নয়নে ভ্যাটের ভূমিকা: বর্তমান ও ভবিষ্যৎ শীর্ষক সেমিনারের মূল প্রবন্ধে এ তথ্য জানানো হয়।প্রবন্ধটি উপস্থাপন করেন এনবিআরের কমিশনার (ভাট অনু বিভাগ) সৈয়দ মুশফিকুর রহমান এবং কাস্টম এক্সসাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার শওকত আলী সাদী। এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, ফরেন ইনভেস্টর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি নাসের এজাজ বিজয়, এনবিআরের সাবেক সদস্য সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া প্রমুখ।প্রবন্ধে বলা হয়, কর-জিডিপির অনুপাত দিয়ে সাধারণভাবে বিভিন্ন দেশে কর আহরণ ব্যবস্থাপনার দক্ষতা পরিমাণ করা হয়। কোনো দেশের কর-জিডিপি অনুপাত বেশি হলে সম্পদ ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা বেশি বলে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশের কর-জিডিপির অনুপাত বেশ কয়েক বছর থেকে ১০ শতাংশের নিচে রয়েছে। রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় অনেক অর্জন থাকলেও কর-জিডিপির অনুপাত বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় আশাব্যঞ্জক নয়। এর প্রধান কারণ হলো দেশের ভ্যাট ব্যবস্থায় ব্যাপক হারে অব্যাহতি দেওয়া।
এতে বলা হয়, কৃষি, পশুসম্পদ, মৎস্য, স্বাস্থ্য, জনপ্রশাসন, প্রতিরক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে পুরোপুরি ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া রয়েছে। তৈরি পোশাক ছাড়াও বিদেশি পণ্যে নির্ভরতা কমিয়ে আনতে বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ও ইলেকট্রনিক্স পণ্যে দেওয়া হয়েছে ভ্যাট ছাড়। এ ছাড়া ভ্যাট অব্যাহতির আওতায় রয়েছে ওষুধের কাঁচামালসহ বিভিন্ন প্রসাধনী পণ্য।প্রবন্ধে আরও বলা হয়, দেশে স্বল্প ও মধ্য মেয়াদে অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খাত হচ্ছে ভ্যাট। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে স্থানীয় পর্যায়ে আহরিত ভ্যাটের পরিমাণ ১ লাখ ৮ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা, যা জিডিপির ২ দশমিক ৮৪ শতাংশ। তবে এ ক্ষেত্রে আমদানি পর্যায়ে ৪৪ হাজার ৩২৯ কোটি টাকা ছাড় দেওয়া না হলে ভ্যাট বেড়ে দাঁড়াত জিডিপির প্রায় ৪ শতাংশ।সরকারের প্রতি ১০০ টাকার রাজস্ব আদায়ে অন্যান্য দেশে তুলনায় বাংলাদেশের খরচ সবচেয়ে কম বলেও এতে উল্লেখ করা হয়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের খরচ হয় ২১ পয়সা। এ খরচ ভারতে ৬০ পয়সা, থাইল্যান্ডে ৭১ পয়সা, সিঙ্গাপুরে ৭৯ পয়সা, মালয়েশিয়ায় ১ টাকা, জার্মানিতে ১ টাকা ৫০ পয়সা এবং জাপানে খরচ এক টাকা ৭০ পয়সা।
অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, দেশের উন্নয়নে এনবিআরের ভূমিকা অনেক। সফলভাবে শুল্ক ও ভ্যাট সংগ্রহ করার কারণেই সরকার রাজস্ব আদায়ে সফলতা পেয়েছে। তবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে দক্ষতা ও সততার সঙ্গে কাজ করে রাজস্ব আদায় আরও বাড়াতে হবে।তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে আসার পর বেশ কিছু ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ আসবে। এ জন্য অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ বাড়াতে এনবিআরকে এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে।মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, রাজস্ব বেশি আদায়ের প্রয়োজনে যেসব ব্যবসায়ী নিয়মিত শুল্ক্ক বা ভ্যাট দেন, তাঁদের ওপর আরও চাপ দেওয়া হয়। কিন্তু যেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কর দেয় না, তাদের করের আওতায় আনার উদ্যোগ দেখা যায় না। বর্তমানে দেশে প্রায় ছয় কোটি মানুষ হোল্ডিং ট্যাক্স দেন। অথচ ই-টিআইএন রয়েছে মাত্র ৭০ লাখ। শুমারির মধ্যমে করদাতার সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।