মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) একক রেট নির্ধারণ করতে পারলে ফাঁকি বা লিকেজ অনেক কমে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। একইসঙ্গে যে-সব জায়গায় কর ছাড় দেওয়া রয়েছে, তা ধীরে ধীরে তুলে দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।সোমবার (৯ ডিসেম্বর) বিকেলে জাতীয় ভ্যাট দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় এনবিআরের বিভিন্ন বিভাগের সদস্যসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।এক প্রশ্নের জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, কর ছাড় কমানোর বিকল্প নেই। কাউকে কর ছাড় দিলেন, কাউকে দিলেন না। এটা এক ধরনের বৈষম্য। যদিও কর ছাড় জনস্বার্থেই দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় স্বার্থে অতিরিক্ত ছাড়ও দিয়েছি। ধীরে ধীরে এটা যৌক্তিকীকরণ করতে হবে। কর ছাড়ের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতেই হবে। এখান থেকে বেরুতে না পারলে রাজস্ব বৃদ্ধি করা সম্ভব নয়। আমাদের মূল ম্যাসেজ হলো, আমাদের সিঙ্গেল রেটে ভ্যাট নির্ধারণ করলে ভালো হয়। তাতে লিকেজ অনেক কমে যায়। এটা বাস্তবায়ন করা অনেক সহজ হয়। আমরা অবশ্যই সেটা করার চেষ্টা করবো। সে ক্ষেত্রে সব ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করেই আমরা করবো। যে-সব জায়গায় ছাড় দেওয়া রয়েছে, সেখানে ধীরে ধীরে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করবো।
তিনি বলেন, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের কর অব্যাহতির বিষয়টি সকল গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। অনেক পণ্যে করছাড়ে বাজারে ইতিবাচক প্রভাবও পড়েছে। সব পণ্যের ক্ষেত্রে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি। আসলে মূল সমস্যা হচ্ছে, রিজার্ভ কমে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট। এর ফলে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা সমস্যা হয়েছে।এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আমরা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য চাল, চিনি, পেঁয়াজ, আলু, ডিম ভোজ্য তেল ও খেঁজুরের ওপর কর প্রত্যাহার করেছি। যার নেতিবাচক প্রভাব কর আদায়ে পড়েছে। যদিও এটা জনস্বার্থে করতে হয়েছে। আমরা আশা করছি পরিস্থিতির উন্নতি হবে। উন্নতি হলে ভ্যাট আদায় বৃদ্ধি পাবে। অন্যান্য পণ্যগুলো আছে, ধারণা করা হয় সেখান থেকে যথাযথ ভ্যাট পাই না। আমাদের আয়কর নিবন্ধিত করদাতার সংখ্যা এখনও যথেষ্ট কম। বর্তমানের এক কোটি ১০ লাখ নিবন্ধিত করদাতা। সেই তুলনায় ভ্যাট নিবন্ধিত সংখ্যা কম। ভ্যাট নিবন্ধিত করদাতার সংখ্যা ৫ লাখের বেশি। এটা অত্যন্ত কম।
তিনি বলেন, আমি সম্মানিত করদাতাদের ভ্যাট নিবন্ধনের জন্য আহ্বান জানাবো। কারণ এখন ঘরে বসেই ভ্যাট নিবন্ধন, ভ্যাট পরিশোধ ও সহজেই ভ্যাট রিটার্ন দেওয়া যাবে। আর অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন জমা দিলে অফিসে হার্ডকপি জমা দেওয়া লাগবে না। আমাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে করনেট বাড়াতে হবে। এ কারণে যারা ভ্যাট রিটার্ন দেন তাদের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা হবে, তাদেরকে নেটের আওতায় আনা হবে। আমরা ডোর টু ডোর যাবো। আমরা যদি ভ্যাট নেটের পরিধি বৃদ্ধি করতে পারি তাহলে বাকি যে ছয়মাস আমাদের হাতে রয়েছে, ওই সময়ে রাজস্ব ঘাটতি পূরণ করতে পারবো। এটা আমাদের করতেই হবে। আমরা অনেক অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে রয়েছি। সংকট থেকে উত্তরণে আমাদের হাতে আর কোনো বিকল্প নেই।এছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অত্যন্ত সততার সঙ্গে করদাতাদের সেবা দিতে হবে। করদাতারা যেন কোনোভাবেই মনে না করেন তাদের ওপর জুলুম করা হচ্ছে।এনবিআর জানায়, ভ্যাট ব্যবস্থা আমাদের দেশের অর্থনীতির অন্যতম একটি চালিকা শক্তি। চলতি বছরে ভ্যাট সিস্টেমকে সামগ্রিকভাবে অনলাইন ভিত্তিক করে ঘরে বসে সব ভ্যাট সেবা প্রদানের জন্য একটি রোবাস্ট ভ্যাট সিস্টেম নির্মাণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে সারাদেশের ছাত্র-জনতা অংশ নিয়ে যেমন গণতান্ত্রিক মুক্তি নিশ্চিত করেছে, তেমনি দেশের জনগণ একই চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে অর্থনৈতিক মুক্তিও নিশ্চিত করবে