
অর্থনীতিতে মন্থর গতি। রাজস্ব আহরণে অনেকটাই পিছিয়ে আছে সরকার। এর মধ্যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে গেলে শুল্ক আদায় কমে যাবে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর পথে হাঁটছে সরকার। তাতে বাধ্য হয়েই আয়কর ও ভ্যাটের ওপর নির্ভরতা বাড়তে হবে। সরকারও সে দিকেই এগোচ্ছে। ফলে আয়কর ও ভ্যাটে বড় পরিবর্তন আসছে আগামী অর্থবছরে।চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। তবে লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করে ৪ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। এর মধ্যে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৫ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা। ফলে সংশোধিত বাজেট থেকে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে ৫৮ হাজার কোটি টাকা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনও বাস্তবসম্মত নয়। একই সঙ্গে বাস্তবতার আলোকে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন তারা।সম্প্রতি দেশের অর্থনীতির বর্তমান চালচিত্র ও করণীয় বিষয়ে একটি প্রতিবেদন অর্থবিভাগ থেকে প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এতে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধির বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। এ জন্য ভ্যাট আহরণ বাড়াতে আয়কর ও ভ্যাট খাতের পূর্ণাঙ্গ অটোমেশনের প্রস্তাব করা হয়েছে। অবশ্য অটোমেশন প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরুও করেছে এনবিআর।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়- এই সময়ে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে গেলে বাজার উন্মুক্ত হয়ে যাবে। তখন আমদানি পর্যায়ে শুল্ক হ্রাস পাবে। ফলে রাজস্ব আয় বাড়ানোর জন্য সরকারের ভ্যাট ও আয়কর নির্ভরতা বাড়বে। অন্যথায় রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি বেড়ে যাবে। এ জন্য আসছে বছরের বাজেটে ভ্যাট ও আয়করের ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে। অবশ্য সেই কাজটা সরকার এরই মধ্যে অনেকটা এগিয়ে রেখেছে। কেননা, গত মাসে শতাধিক পণ্যের ওপর ভ্যাট ও শুল্ক বাড়ানো হয়েছে, যা থেকে অর্থবছর শেষে সরকার ১২ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত আয় হবে।তবে গ্রাহক পর্যায়ে কোনো পণ্য বা সেবার ভ্যাট বাড়ালে তার সরাসরি প্রভাব পড়ে ভোক্তার ওপর। এই পরিস্থিতি পরবর্তী অর্থবছর অপরিবর্তিত রাখলে সে বছরও ১২ থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হবে। এ জন্য আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে করজালকে নতুন করে সাজাতে এখন থেকেই কাজ শুরু করেছে সরকার। এতে করে পণ্য ও সেবার দাম কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরও বাড়বে। যার ফলে সব শ্রেণির মানুষের ওপর আয় ও ভ্যাটের চাপ বাড়বে। তবে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের ভোগান্তি কীভাবে কমানো যায়, সে কথাও ভাবছে সরকার। এ জন্য যার যত বেশি সম্পদ, তার প্রতি তত বেশি সারচার্জ আরোপ করা হবে। অবশ্য এ প্রথা এখনও কাগজে-কলমে রয়েছে। বাস্তবতা হলো, ভ্যাট ও আয়কর ফাঁকির কারণে তা থেকে কাক্সিক্ষত হারে রাজস্ব পায় না সরকার।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সামনের দিনগুলোয় রাজস্ব বাড়াতে হলে দেশব্যাপী আয়কর অফিস স্থাপন করতে হবে। সম্ভব হলে তৃণমুল পর্যায়ে (গ্রামে) আয়কর আহরণ করতে হবে, যা আসছে ২০২৫-২৬ বছর থেকেই শুরু করতে হবে। কর-ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে আনতে হবে। এতে করে এনবিআরের অসৎ কর্মকর্তাদের রোজগারে কিছুটা ভাটা পড়বে এবং দুর্নীতি কমবে বলে আশা করছে অর্থবিভাগ। কর আদায় থেকে করণীতিকে সম্পূর্ণ আলাদা করা হবে। এর প্রাথমিক কার্যক্রম এরই মধ্যে শুরু করেছে এনবিআর। রাজস্ব আদায়ের সঙ্গে জড়িতদের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি নৈতিকার শিক্ষাকে জোরদার করা হবে। করজাল সম্প্রসারণ ও তা পরিপালন করা হবে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এনবিআরের সব পর্যায়ের জনবলকে প্রস্তুতি নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।অর্থবিভাগ বলছে, আগের সরকারগুলো রাজনৈতিক বিবেচনায় রাজস্ব বোর্ডকেন্দ্রিক যেসব সিদ্ধন্ত নেওয়া হয়েছিল, সে রকম কোনো সিদ্ধান্ত এবার নেওয়া হবে না। করজাল ও কর আদায় বৃদ্ধির জন্য কঠোর কিংবা অপ্রিয় সিদ্ধান্ত হলেও তা বাস্তবায়ন করা হবে। এর অংশ হিসেবে এরই মধ্যে শতাধিক পণ্যের ওপর ভ্যাট বাড়নো হয়েছে।