ইরানের তেল রফতানিতে বাধা নেইদশ পণ্যে রাজস্ব আহরণে ধসআমদানিনির্ভর নিত্যপণ্যের শুল্ককর যৌক্তিক হতে হবেমেট্রোরেলে ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার চায় আইপিডিস্বর্ণালংকারে ভ্যাট কমানোর দাবি বাজুসের
No icon

রাজস্ব আহরণ ও বিনিয়োগ নিয়ে শঙ্কিত অর্থমন্ত্রী

করোনায় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নানামুখী সমস্যা তৈরি হবে। অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য ও আমদানি-রফতানি কমেছে। মন্দাভাবের কারণে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও বিনিয়োগ কমবে।মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। নিজ বাস ভবনে দেশের অর্থনীতির সার্বিক বিষয় নিয়ে এ বৈঠক করেছেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়। ওই বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, আইআরডি সিনিয়র সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, অর্থ সচিব আবদুর রউফ তালুকদার এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে আসন্ন বাজেট নিয়েও প্রাথমিক আলোচনা হয়। এছাড়া বৈশ্বিক মহামারী করোনার প্রভাবে বাজেটে যাতে আর্থিক সংকট না হয় সেজন্য উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বাজেট সহায়তা বাড়ানোর তাগিদ দেয়া হয়।

বৈঠকে অর্থমন্ত্রী বলেন, এখনও জানি না করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কতদিন প্রলম্বিত হয়। ইতোমধ্যে আমদানি ও রফতানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে। অর্থবছর শেষে আরও কম হতে পারে। এছাড়া চলমান মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন, অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা বিলম্বের কারণে বেসরকারি বিনিয়োগ প্রত্যাশিত মাত্রায় অর্জিত না হওয়ার সম্ভাবনা আছে। হোটেল-রেস্টুরেন্ট, পরিবহন এবং পর্যটন খাতের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বিরূপ প্রভাব পড়বে দেশের শেয়ারবাজারেও। অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের চাহিদা হ্রাসের কারণে মূল্য ৫০ শতাংশের অধিক হ্রাস পেয়েছে- যার বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে প্রবাস আয়ের ওপর

তবে গত আট মাসে প্রবাস আয়ে ২১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছিল। ফলে আগামী চার মাসে প্রবাস আয় কিছুটা কম হলেও বছর শেষে খুব বেশি কম হবে না।

অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, বিশ্বের অর্থনীতি করোনার প্রভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের হিসাবে করোনার প্রভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ৩০২ কোটি মার্কিন ডলার হতে পারে।

এছাড়া দীর্ঘ ছুটি বা কার্যত লকডাউনের ফলে রফতানিমুখী শিল্প, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং কুটির শিল্পসহ উৎপাদনমুখী সব প্রতিষ্ঠানে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। পরিবহন সেবা ব্যাহত হওয়ায় স্বল্প আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস পাবে এবং সরবরাহ চেইনে সমস্যা হতে পারে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে। গত বছর ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়। চলতি বছরে ৮ দশমিক ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের দিকে এগুচ্ছিলাম। কিন্তু প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস জনস্বাস্থ্যসহ বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক থাবা বসাতে যাচ্ছে। বাংলাদেশও নেতিবাচক প্রভাব হতে ?মুক্ত নয়। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব প্যানডামিক বা বিশ্ব মহামারী হিসেবে এখন প্রায় বিশ্বের প্রতিটি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এই মুহূর্তে আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার

মানুষকে এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করা এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রয়োজনীয় আহারের ব্যবস্থা করা।

করোনা মোকাবেলা ও সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব উত্তরণের স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এই পরিকল্পনার মধ্যে সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি, আর্থিক সহায়তার প্যাকেজ প্রণয়ন, সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা ও মুদ্রার সরবরাহ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়া অর্থ বিভাগের অপ্রত্যাশিত ব্যয় খাত থেকে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুকূল ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ, নিুআয়ের ব্যক্তিদের ঘরেফেরা কর্মসূচির আওতায় নিজ নিজ গ্রামে সহায়তা প্রদান করা, গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য বিনামূল্যে ঘর, ৬ মাসের খাদ্য এবং নগদ অর্থ প্রদান করা হবে।

বিনামূল্যে ভিজিডি, ভিজিএফ এবং ১০ টাকা কেজি দরে চাল সরবরাহ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। রফতদানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার একটি প্রণোদনা প্যাকেজের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রফতানিমুখী শিল্প, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং কুটির শিল্পগুলোর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় আরও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ইতোমধ্যে ব্যবসায়-বান্ধব বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

আগামী জুন মাস পর্যন্ত কোনো গ্রাহক যদি কিস্তি পরিশোধে অপরাগও হয় তথাপিও তাকে ঋণ খেলাপি না করার ঘোষণা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এনজিওগুলোর ঋণের কিস্তি পরিশোধেও জুন পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে। রফতানি আয় আদায়ের সময়সীমা ২ মাস থেকে বৃদ্ধি করে ৬ মাস করা হয়েছে। একইভাবে আমদানি ব্যয় মেটানোর সময়সীমা ৪ মাস থেকে বৃদ্ধি করে ৬ মাস করা হয়েছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ে আর্থিক লেনদেনের সীমা বাড়ানো হয়েছে।