উল্কা গেমসের কর ফাঁকির ৫০ কোটি টাকা আদায়ে ব্র্যাক ব্যাংকে এনবিআরবাজেটের আকার কমানোর পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলইরানের তেল রফতানিতে বাধা নেইদশ পণ্যে রাজস্ব আহরণে ধসআমদানিনির্ভর নিত্যপণ্যের শুল্ককর যৌক্তিক হতে হবে
No icon

কর হার বাড়বে না আওতা বাড়বে

আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে করহার না বাড়িয়ে করের আওতা বাড়ানোর বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অধীনে রাজস্ব আহরণের প্রধান তিনটি খাত হচ্ছে- আয়কর, ভ্যাট ও আমদানি শুল্ক।প্রতিটি খাতেই করের আওতা বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে এনবিআর। তবে ব্যক্তি, পণ্য বা সেবার ওপর করের হার বা পরিমাণ বাড়বে না। এনবিআর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, কর হার না বাড়িয়ে আইনগত পরিবর্তনের মাধ্যমে কীভাবে অধিক সংখ্যক মানুষকে আয়করের আওতায় আনা যায়, এনবিআর সেটি পর্যালোচনা করছে। ভ্যাটের ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ উৎসকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। ভ্যাটের আওতা বাড়িয়ে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ভ্যাট আদায় বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এসব উদ্যোগের বেশকিছু অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ থাকবে।

আগামী বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণীর করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানোর পরিকল্পনা নেই। করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো হলে অনেক করদাতা করের আওতার বাইরে চলে যাবেন। এতে করের ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। তবে এ সীমা বাড়ানো হবে, নাকি অপরিবর্তিত থাকবে- সেই সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া উপজেলা পর্যায়ে বিত্তবানদের করের আওতায় আনতে কর অফিস স্থাপন করা হবে। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর বাজেট ঘোষণায় দিকনির্দেশনা থাকবে।

এদিকে বাজেটের আয়কর কাঠামো চূড়ান্ত করতে আগামী বুধবার ও বৃহস্পতিবার এনবিআরের সঙ্গে বৈঠক করবেন অর্থমন্ত্রী।

জানা গেছে, চাকরিজীবী ও ঢাকার বাড়িওয়ালাদের কাছ থেকে রিটার্ন দাখিল নিশ্চিত করতে আইনে পরিবর্তন আনা হতে পারে। এ দুটো ক্ষেত্রেই বর্তমানে আইনি বাধ্যবাধকতা আছে, তবে সেটি সঠিকভাবে পরিপালন হচ্ছে না। তাই আগামী বাজেটে এ বিষয়ে ঘোষণা আসতে পারে।

এছাড়া এনবিআরের প্রশাসনিক সংস্কারে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে। ইটিডিএস সিস্টেম চালু ও পৃথক মনিটরিং অঞ্চল গঠন, আধুনিক কর তথ্য ইউনিট গঠন, ডিজিটাল অডিট সিস্টেম চালু, অনলাইনে রিটার্ন দাখিল পদ্ধতি সহজীকরণ ও বিদেশে লেনদেনের মাধ্যমে অর্থপাচার রোধে ট্রান্সফার প্রাইসিং সেলকে (টিপিসি) শক্তিশালী করার বিষয়ে বাজেটে নির্দেশনা থাকবে। রাজস্ব আয়ের প্রধান খাত ভ্যাটে সবচেয়ে বড় চমক থাকবে। অনেক আলোচনা-সমালোচনার পর ১ জুলাই থেকে নতুন আইন বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে সরকার। তাই বাজেট ঘোষণা হবে নতুন আইন ঘিরেই। সব প্রজ্ঞাপন, আদেশ করা হবে নতুন আইনের আওতায়। এ আইনের মূল ভিত্তিই হচ্ছে ভ্যাটের জাল বাড়ানো। ভ্যাট হার, ট্যারিফ মূল্য, সম্পূরক শুল্ক, সেবা খাতে ভ্যাটের হার নির্ধারণসহ নানা ইস্যুতে ব্যবসায়ীদের আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে হার না বাড়িয়ে ভ্যাটের আওতা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সরকার। নতুন ভ্যাট আইনের আওতায় খুচরা ব্যবসায়ীদের ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) দেয়া হবে।

প্রাথমিক পর্যায়ে ১০ হাজার যন্ত্র বিনামূল্যে বিভাগীয় শহরের বড় বড় শপিংমলের দোকানগুলোতে স্থাপন করা হবে। এটি ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের সার্ভারের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। প্রতিদিনের বেচাবিক্রির তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে সার্ভারে সংরক্ষণ হবে। ফলে ভ্যাট ফাঁকির প্রবণতা কমে আসবে। এরপর দ্বিতীয় ধাপে আরও ৪০ হাজার মেশিন আমদানি করা হবে।

অন্যদিকে তালিকাভুক্ত কোম্পানির টার্নওভার ট্যাক্স আদায়ে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হবে। মূলত ফাঁকি বন্ধের মাধ্যমে ভ্যাট আদায়ের উদ্যোগ থাকবে বাজেটে। দেশীয় শিল্পের বিকাশের স্বার্থে রেফ্রিজারেটর, এয়ারকন্ডিশন, মোটরসাইকেল শিল্পের ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা বহাল রাখা হবে।

পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পাম অয়েল, সয়াবিন তেল উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে এবং এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারে ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হতে পারে। বাজেটে অর্থমন্ত্রী প্রতি মাসে ভ্যাট রিটার্ন জমার বিষয়ে ঘোষণা দেবেন।

ইতিমধ্যেই নতুন আইনের অধীনে ১ লাখ ৬৮ হাজার প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রনিক ভ্যাট নিবন্ধন নম্বর বা ই-বিআইএন নিয়েছে। এর মধ্যে ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন নিয়েছে ১ লাখ ৬২ হাজার প্রতিষ্ঠান এবং তালিকাভুক্তির জন্য নিবন্ধিত হয়েছে ৫ হাজার ২৬৩টি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নিয়মিত ভ্যাট রিটার্ন জমার নির্দেশনা থাকবে। আইন অমান্য করলে শাস্তির বিধানও রাখা হবে।