মার্কিন শেয়ারবাজারে ধস, ডলারের দাম সর্বনিম্ন ২০২৩ সালে দেশের রাজস্ব ক্ষতি ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকাযুক্তরাষ্ট্রে মাসে বাড়তি শুল্ক দাঁড়াবে ২৫ কোটি ডলারবাধ্যতামূলক অবসর এনবিআরের দুই শীর্ষ কর্মকর্তাকে কিছু চীনা পণ্যে সর্বোচ্চ ২৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করল যুক্তরাষ্ট্র
No icon

ট্রাম্পের শুল্ক নিয়ে রোববার জরুরি বৈঠক

বাংলাদেশি পণ্যের ওপর নতুন করে ৩৭ শতাংশ রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ বা পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। নতুন শুল্কের কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের বড় বাজারটিতে পণ্য রপ্তানি, বিশেষ করে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বড় ধাক্কার আশঙ্কা করছেন রপ্তানিকারকরা। এ পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের শুল্ক পর্যালোচনা করতে রোববার (৬ এপ্রিল) অর্থ উপদেষ্টার নেতৃত্বে জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে।অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন নতুন করে যে শুল্ক আরোপ করেছে সরকার তা পর্যালোচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে ঈদের ছুটি থাকায় বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিক বৈঠক করা সম্ভব হয়নি। ঈদের ছুটি শেষে আগামী রোববার থেকে অফিস শুরু হবে। অফিস শুরুর দিনেই এই শুল্ক নিয়ে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন। বৈঠকে বাণিজ্য উপদেষ্টা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান, অর্থ সচিব, বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে যে শুল্ক আরোপ করেছে তা উদ্বেগের বিষয়। এ কারণে বিষয়টি পর্যালোচনা করতে জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে। ঈদের ছুটি শেষে রোববার অফিস খুলবে, এ দিনই এই জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

এই কর্মকর্তা বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে শুল্ক আরোপ করেছে। এ নিয়ে বিভিন্ন দেশ তীর্যক মন্তব্য করেছেন। নতুন শুল্ক আরোপের ফলে আমরা কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়তে পারি তা নিয়ে রোববারের বৈঠকে পর্যালোচনা করা হতে পারে।এতদিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক ছিল। নতুন করে ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। এই শুল্কের কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের বড় বাজারটিতে পণ্য রপ্তানি, বিশেষ করে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বড় ধাক্কার আশঙ্কা করছেন রপ্তানিকারকরা। বাংলাদেশের মোট পণ্য রপ্তানির ১৮ শতাংশের গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র।শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক বসিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই ঘটনায় দুনিয়াজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।ট্রাম্পের এই ঘোষণা নিয়ে বিবিসি, সিএনএন, নিউইয়র্ক টাইমসসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিশ্বনেতাদের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া উঠে এসেছে।ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বলছে, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত বিশ্ব অর্থনীতির জন্য বড় ধাক্কা। অস্ট্রেলিয়া বলেছে, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত বন্ধুসুলভ নয়। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেছেন, নিঃসন্দেহে এই ঘটনার অর্থনৈতিক প্রভাব অনুভূত হবে। চীন বলেছে, তারা এই ঘটনার প্রতিশোধ নেবে। অর্থাৎ ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের জবাবে তারাও পাল্টা শুল্ক আরোপ করবে। বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়ায় স্পষ্ট, ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বজুড়ে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করে দিলেন।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাংলাদেশের পক্ষে। আমদানির তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি অনেক বেশি। অবশ্য রপ্তানি তৈরি পোশাকের ওপর অত্যন্ত নির্ভরশীল, যার মধ্যে বেশিরভাগ মৌলিক আইটেম। অন্যদিকে, বাংলাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি লোহা, ইস্পাত, খনিজ জ্বালানি, তুলা, তেলবীজ ও নিউক্লিয়ার রেক্টরসহ পাঁচটি পণ্যের ওপর নির্ভরশীল।বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ছিল ১০ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার। যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি ছিল ৭ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার এবং দেশ থেকে আমদানি ছিল ২ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার।২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৬০১ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার মূল্যের লোহার ইস্পাত আমদানি করেছে, তারপরে খনিজ জ্বালানি ৫৯৫ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার, তুলা ৩৬১ মিলিয়ন ডলার, তেলবীজ ৩৪১ মিলিয়ন ডলার ও নিউক্লিয়ার রেক্টর আমদানি করেছে ১১১ মিলিয়ন ডলারের।বাংলাদেশের রপ্তানি আয় বেশিরভাগ আসে তৈরি পোশাক থেকে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয়ের ৭ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ডলার এসেছে তৈরি পোশাক থেকে। বাকিটা এসেছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, চামড়ার জুতা, ফার্মাসিউটিক্যালস ও বিভিন্ন কৃষিপণ্য থেকে।