নতুন নতুন শ্রমবাজার সৃষ্টির জন্য সরকারি-বেসরকারি উভয় পক্ষেই জোর তৎপরতা চালাতে চায় সরকার। এক্ষেত্রে বেসরকারিভাবে যদি কেউ নতুন শ্রমবাজার সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে তাহলে তাদেরকে বিভিন্ন রেয়াতি সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে। এমন ঘোষণা থাকবে আসন্ন ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে। বাজেটে ৮ দশমিক ২০ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হচ্ছে। যদিও চলতি অর্থবছরে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ অর্জিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কৃষি খাতের বাম্পার ফলন আর উচ্চ রফতানি প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে বলে মনে করে সরকার। এছাড়া নতুন বাজেটে মূল্যস্ফীতির চাপ ৫ দশমিক ৫ শতাংশে আটকে রাখার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আগামী ১৩ জুন জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রথমবারের মতো বাজেট উপস্থাপন করবেন। ইতোমধ্যে বাজেটের সবধরনের কার্যক্রম প্রায় শেষ। অনুমোদনের জন্য আজ (সোমবার) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খসড়া বাজেট তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী। খসড়ায় অর্থমন্ত্রী এসবের পাশাপাশি আগামী বাজেটের মোট আকার পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা ধারা হয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রীর সামনে উপস্থাপন করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর প্রাক-বাজেট আলোচনা এটাই প্রথম। এরপর আগামী বুধ ও বৃহস্পতিবার বাজেট বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আরও দুটি বৈঠক শেষে বাজেট চূড়ান্ত করবেন অর্থমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ দিক-নির্দেশনা নিয়েই চূড়ান্ত করা হবে আওয়ামী লীগের টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর চলতি মেয়াদের প্রথম বাজেট।
আজকের বৈঠকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সামগ্রিক রাজস্ব আদায়ের বিষয়ে খোঁজ নেন প্রধানমন্ত্রী। রাজস্ব ঘাটতির বিষয়ে তিনি বলেন, আগামী দিনগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফলে আমাদের রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে। রাজস্ব বাড়ানোর জন্য নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে মানুষের জীবন ধারণের ওপর কোনো ধরনের নেতিবাচক প্রভাব যেন না যেদিকেও নজর রাখতে হবে।
প্রয়োজনে ব্যাংক, শেয়ারবাজার, শ্রমবাজারসহ সামগ্রিক আর্থিক সংস্কার আনারও নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে যে খাতেই যেকোনো ধরনের সংস্কারই আনা হোক তা হতে হবে জনকল্যাণ, জনস্বস্তি ও জনহিতকর। মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলে কোনো ধরনের সংস্কার ও উন্নয়ন কার্যক্রম না নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
বাজেট উপস্থাপনের সময় অর্থমন্ত্রী বলেন, এ বছর যে পরিকল্পনা করা হচ্ছে তাতে করের বোঝা কোনোভাবেই বাড়বে না। তবে করের আওতা বাড়বে। অন্তত এক কোটি মানুষকে নতুন করে করের আওতায় আনা হবে। যার মাধ্যমে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থে কর্পোরেট করহার কমানো হবে। সেই সঙ্গে টানা প্রায় ১০ বছর পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তিকরণ চালু করা হবে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানো হবে।
সূত্র জানায়, আসন্ন বাজেটের মোট আকার হতে পারে পাঁচ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকা। যা জিডিপির ১৮ দশমিক ১ শতাংশ। চলতি বাজেটের আকার চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। সেই হিসাবে আসন্ন বাজেটে ব্যয়ের পরিমাণ বাড়ছে ৫৮ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা। রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে তিন লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। চলতি বছর এপ্রিল পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, আগামী বছর জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী পালন করা হবে। যার কিছু প্রতিফলন থাকবে আগামী বাজেটেও। এ জন্য উন্নয়নের ক্ষেত্রে গ্রাম ও শহরাঞ্চলে সমান গুরুত্ব দেয়া হবে। মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য শহরে যেন আসতে না হয়। সে জন্য গ্রামেই কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। এ জন্য সরকারের বিভিন্ন দফতরের কেন্দ্রীভূত কার্যক্রম মফসল এলাকায় ছড়িয়ে দেয়া হবে।
আসন্ন বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) দুই লাখ সাত হাজার ২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এডিপিতে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে যোগাযোগ খাতকে। একইভাবে গ্রামীণ জনপথের উন্নয়ন কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও প্রযুক্তিগত শিক্ষার প্রসারকে সমানভাবে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে আগামী বাজেটে।