বঙ্গবন্ধুর নামে থাকা প্রতিষ্ঠানে অনুদানে করছাড় বাতিল করছে সরকারখেজুর আমদানিতে শুল্ক-কর কমলদেশে উৎপাদিত প্রসাধনীতে করের বোঝা, আমদানিতে ছাড়ভোজ্যতেল আমদানিতে কমলো ভ্যাটখেজুর আমদানিতে শুল্ক ও অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহারের সুপারিশ
No icon

বাজেটের আকার হতে পারে ৫২৩১৯১ কোটি টাকা

আগামী বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটের আকার প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯১ কোটি টাকা যা জিডিপির ১৮ দশমিক ১ শতাংশ। নতুন বাজেটে করের হার কমতে পারে, তবে বাড়ানো হবে করের আওতা। অর্থমন্ত্রী হিসেবে আ হ ম মুস্তফা কামালের এটিই হবে প্রথম বাজেট। বাজেট বক্তৃতার নামকরণ করা হয়েছে, সমৃদ্ধির সোপানে বাংলাদেশ, সময় এখন বাংলাদেশের, সময় এখন আমাদের। বাজেট পেশের দিন বক্তৃতাসহ ১২টি বাজেট ডকুমেন্ট সংসদ সদস্যের হাতে দেওয়া হবে। তবে ইংরেজি-বাংলা মিলিয়ে বাজেট ডকুমেন্টসের সংখ্যা হতে পারে ২৬টি। আগামী শুক্রবার বিকেল ৩টায় বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী গণমাধ্যমের মুখোমুখি হবেন বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অন্যান্য বারের চেয়ে এবারের বাজেট বক্তৃতা অনেকটাই সংক্ষিপ্ত হবে। যার আভাস অর্থমন্ত্রী আগেই দিয়েছিলেন। বক্তৃতা ছোট হলেও বাজেট উপস্থাপনকালে মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতার পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হবে।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেক বৈঠকে এডিপি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। নতুন অর্থবছরের বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপনের আগে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট মন্ত্রিপরিষদে উপস্থাপন করে তা অনুমোদন নেওয়া হবে।

অর্থমন্ত্রী তার বক্তৃতায় জাতীয় সংসদের স্পিকারের মাধ্যমে দেশবাসীকে বিভিন্ন বিষয়ে আশ্বস্ত করবেন। অর্থমন্ত্রী কর আদায়ে কর দাতাদের হয়রানি না হওয়ার বিষয়ে আশ্বস্ত করে এর আগে বলেছেন, রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়লেও কর হার বাড়বে না, শুধু করের আওতা বাড়বে। যারা আগে কর দিতেন তারা এখন কম কর দেবেন আর যারা কর দিতেন না তাদের করের আওতায় আনা হবে। কর দেওয়ার উপযুক্ত সবাইকে করের আওতায় এনে রাজস্ব আয় বাড়ানো হবে। অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় এ বিষয়টি উল্লেখ থাকবে বলে সূত্র জানিয়েছে।

আয় কাঠামো :সামষ্টিক আয়-ব্যয় ও ঘাটতি কাঠামো তিনটি সারণীর মাধ্যমে উপস্থাপন করা হবে, এরমধ্যে রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে আয় ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা যা জিডিপি’র ১১ শতাংশ, এনবিআর বহির্ভূত কর রাজস্ব ১৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা যা জিডিপির ৫ শতাংশ এবং কর বহির্ভূত রাজস্ব ৩৭ হাজার ৭১০ কোটি টাকা যা জিডিপির ১ দশমিক ৩ শতাংশ।

ব্যয় কাঠামো :পরিচালন ব্যয় ৩ লাখ ২০ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। ব্যয়ের খাতভিত্তিক বিভাজন হবে- ভৌত অবকাঠামো, সামাজিক অবকাঠমো এবং সাধারণ সেবা কাঠামো।

বাজেট ঘাটতি অবকাঠামো :বাজেট ঘাটতি প্রাক্কলন করা হয়েছে এক লাখ ৪৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এরমধ্যে বৈদেশিক সূত্র ৬০ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ২ দশমিক ১ শতাংশ, অভ্যন্তরীণ ব্যাংক ব্যবস্থা ৫৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১ দশমিক ৯ শতাংশ এবং সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য ব্যাংক বহির্ভূত খাত থেকে ৩০ হাজার ৮০০ কোটি টাকা যা জিডিপির ১ দশমিক শূন্য শতাংশ। অর্থা ৎচলতি অর্থবছরের মতো এবারও বাজেট ঘাটতি ৫ শতাংশ থাকবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে।

সম্পূরক বাজেট :বিগত সময়ে গৃহীত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের জনবল ও কর্মপদ্ধতিতে ব্যাপক সংস্কার সাধন এবং অর্থনৈতিক অবস্থার সুদৃঢ় অবস্থানে থাকবে ধরে নিয়ে চলতি ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের রাজস্ব আহরণ ও ব্যয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও রাজস্ব আয় প্রত্যাশার চেয়ে কিছুটা কম হবে মর্মে প্রতীয়মান হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের মার্চ ২০১৯ পর্যন্ত আহরিত রাজস্বের পরিমাণ ছিল মূল বাজেটের বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার ৫৪ দশমিক ৭১ শতাংশ। একই সময়ে সরকারি ব্যয় হয় বার্ষিক বরাদ্দের ৪৪ দশমিক শূন্য শতাংশ। বাজেট বাস্তবায়নের এই পরিস্থিতি বিবেচনায় ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের বাজেটে যে সংশোধন ও সমন্বয় করতে হয়েছে তার একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ বাজেট ডকুমেন্টসে থাকবে।

সংশোধিত রাজস্ব আয় :২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের মূল বাজেটে রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয় ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ২২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা কমিয়ে ৩ লাখ ১৬ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা (জিডিপির ১২ দশমিক ৫ শতাংশ) করা হয়েছে। এনবিআর রাজস্বের ক্ষেত্রে আয় মুনাফার উপর কর মূল্য সংযোজন কর ও আমদানি শুল্ক থেকে অর্জন আশানুরূপ না হওয়ায় এই সংশোধন আনা হয়েছে।

সংশোধিত ব্যয় :চলতি ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের বাজেটে সর্বমোট সরকারি ব্যয়ের প্রাক্কলন করা হয় ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এ ব্যয় ২২ হাজার ৩৭ কোটি টাকা কমিয়ে ৪ লাখ ৪২ হাজার ৫৩৯ কোটি টাকা (জিডিপির ৫ দশমিক ১৭ শতাংশ) নির্ধারণ করা হয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা থেকে কিছুটা কমিয়ে ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে (জিডিপির ৬ দশমিক ৫ শতাংশ)। অন্যদিকে পরিচালন ব্যয়সহ অন্যান্য ব্যয়ের প্রাক্কলন কমিয়ে ১৪ হাজার ৩৭ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সংশোধিত বাজেট ঘাটতি ও অর্থায়ন :চলতি অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি প্রাক্কলন করা হয়েছিল ১ লাখ ২৫ হাজার ২৯৪ কোটি টাকা (জিডিপি’র ৪ দশমিক ৯ শতাংশ)। সংশোধিত বাজেটে ঘাটতি নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা (জিডিপির ৫ দশমিক শূন্য শতাংশ)। মূল বাজেট ঘাটতির বিপরীতে বৈদেশিক সূত্র থেকে অর্থায়নের প্রাক্কলন ছিল ৫৪ কোটি ৬৭ হাজার টাকা যা সংশোধিত বাজেটে কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ৪৫ হাজার ২৭৯ কোটি টাকায় (জিডিপির ১ দশমিক ৮ শতাংশ) অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য সূত্র থেকে অর্থায়নের পরিমাণ ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা।

জানা গেছে, বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বার্ষিক বরাদ্দ ব্যয়ের উন্নতির কথা শুনিয়ে বলবেন, আনন্দের বিষয় হলো যে পাইপলাইনে থাকা বৈদেশিক সাহায্যের ব্যবহার ব্যাপক হারে বাড়ায় চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। চলতি ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের এপ্রিল ২০১৯ পর্যন্ত প্রকল্প সাহায্যের ব্যবহার হয়েছে বার্ষিক বরাদ্দের প্রায় ৬১ দশমিক ১ শতাংশ, বিগত অর্থবছরের একই সময়ে এ হার ছিল ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশ।

নতুন অর্থবছরের বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৮ দশমিক ২০ শতাংশ হবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ অর্জিত হবে বলে আশা করছে সরকার। এ ছাড়া নতুন বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশে মধ্যে রাখার পরিকল্পনা করেছে সরকার। ইতোমধ্যে ভ্যাট এবং আয় কর থেকে রাজস্ব বাড়াতে নানামূখী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকারের এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে নতুন অর্থবছর দেশের জন্য সুফল বয়ে আনবে বলে আশা করা হচ্ছে।