দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি সাত মাসে ১৩৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকা রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু এর বিপরীতে আহরণ করা হয়েছে ১১৩ কোটি ৮২ লাখ ১৬ হাজার টাকা। সেই হিসাবে সাত মাসে রাজস্ব আহরণে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৩ কোটি ৭৫ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। হিলি স্থলবন্দর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে হিলি স্থলবন্দর থেকে ২৭১ কোটি ৬১ লাখ টাকা রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সে মোতাবেক অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা আহরণ করা হয়েছে। এছাড়া আগস্টে ১৭ কোটি ৩১ লাখ টাকার বিপরীতে ৯ কোটি ৩১ লাখ, সেপ্টেম্বরে ১১ কোটি ৯৪ লাখ টাকার বিপরীতে ১৪ কোটি ১৬ লাখ, অক্টোবরে ১৬ কোটি ২৩ লাখ টাকার বিপরীতে ১১ কোটি ৭৯ লাখ, নভেম্বরে ২৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকার বিপরীতে ১৮ কোটি ২৬ লাখ, ডিসেম্বরে ৩৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকার বিপরীতে ২৪ কোটি ৫১ লাখ ও জানুয়ারিতে ২৪ কোটি ২১ লাখ টাকার বিপরীতে ২৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকা আহরণ হয়েছে।
রাজস্ব কর্মকর্তা ও আমদানিকারকরা বলছেন, বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানির পরিমাণ কমে গেছে। পূর্বে বন্দর দিয়ে চাল ও পেঁয়াজ প্রচুর আমদানি হলেও এখন বন্ধ রয়েছে। এ কারণে রাজস্ব আহরণে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তবে বন্দর দিয়ে আমদানির পরিমাণ বাড়লে রাজস্ব আহরণে ঘাটতি পূরণ হয়ে যাবে।
আমদানি কমে যাওয়ার বিষয়ে হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রফতানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশীদ হারুন বলেন, আগে বন্দর দিয়ে ভারত থেকে চাল, পেঁয়াজ, গম, ভুট্টা, সরিষার খৈল আমদানি হতো। এছাড়া হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ফল আমদানির ক্ষেত্রে গাড়ির চাকা অনুযায়ী শুল্কায়নের প্রথা চালু থাকায় কয়েক বছর ধরে ফল আমদানি একেবারে বন্ধ রয়েছে। আর সরকার চাল আমদানিতে শুল্কহার বসানোর কারণে প্রতি কেজি চালে এখন শুল্ক আসছে প্রায় ২০ টাকার মতো। এছাড়া ভারতের তুলনায় দেশে চালের দাম কম। যে কারণে ভারত থেকে চাল আমদানিও এক রকম বন্ধ আছে। এছাড়া আগে প্রচুর পরিমাণে খৈল আমদানি হলেও এখন দেশেই উৎপাদিত সরিষা দিয়ে খৈল উৎপাদন হওয়ায় দেশের চাহিদা মিটছে। এ কারণে ভারত থেকে তেমনভাবে খৈলও আমদানি হচ্ছে না।
হিলি স্থলবন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, সদ্যসমাপ্ত জানুয়ারিতে হিলি স্থলবন্দরে লক্ষ্যমাত্রার অধিক পরিমাণ রাজস্ব আহরণ হয়েছে। তবে সার্বিকভাবে বন্দর থেকে গত সাত মাসে ২৩ কোটি ৭৫ লাখ ৮৪ হাজার টাকার মতো কম রাজস্ব আহরণ হয়েছে। আগে কিছু পণ্য আমদানি হলেও এখন তা পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। ফলে রাজস্ব আহরণে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তবে বন্দর দিয়ে আমদানির পরিমাণ বাড়লে বাকি যে কয় মাস আছে, তাতে রাজস্ব আহরণের ঘাটতি পূরণ সম্ভব বলে মনে করেন এ কর্মকর্তা।
এদিকে গত রোববার থেকে ভারতের হিলি কাস্টমসে সার্ভারের সমস্যার কারণে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে দুই দেশের মাঝে পণ্য আমদানি-রফতানি কার্যক্রম অর্ধেকের নিচে নেমেছে। তবে বন্দরের ভেতরের সব কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, অধিক সময় ধরে কাস্টমসের সার্ভার না থাকায় রফতানীকৃত পণ্যের টেন্ডারসহ বিল অব এন্ট্রি সাবমিট করা যাচ্ছে না। এতে বন্দর দিয়ে স্বাভাবিকভাবে পণ্য রফতানি হচ্ছে না। মাঝেমধ্যে যখন সার্ভার আসছে, তখন যেসব পণ্যের টেন্ডার ও বিল অব এন্ট্রি সাবমিট হচ্ছে, সেসব পণ্য রফতানি করা হচ্ছে। বন্দর দিয়ে গড়ে প্রতিদিন যেখানে ২০০-২২০টি ট্রাক পণ্য আমদানি হতো, সেখানে গতকাল (রোববার) মাত্র ৭১ ট্রাক পণ্য আমদানি হয়েছে। আজ (গতকাল) সকাল থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত মাত্র দুই ট্রাক পণ্য আমদানি হয়েছে।