ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত: ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ, আন্দোলনের হুমকি৪৩ পণ্য ও সেবায় ভ্যাট বাড়ছেবায়োমেট্রিক সিমবিহীন করদাতাদের সুখবর দিল এনবিআরসিগারেটে কার্যকর করারোপ না করায় রাজস্ব হারিয়েছে সরকারআরও এক মাস বাড়ল রিটার্ন জমার সময়
No icon

দুই সংস্থার প্রধান কাস্টমস ও ট্যাক্স ক্যাডারের হবেন

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে পলিসি উইং (রাজস্ব নীতি) পৃথক করার সুপারিশ করেছে রাজস্ব বোর্ড সংস্কার বিষয়ক পরামর্শক কমিটি।রাজস্ব কমিশন নামে স্বাধীন একটি সংস্থা রাজস্ব নীতি প্রণয়নের কাজ করবে, যেটি সরকারের বিভাগ পদমর্যাদার হবে। এর প্রধান হবেন আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডারের শীর্ষ কর্মকর্তারা। কমিশন অর্থমন্ত্রীর অধীনে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। একই সঙ্গে প্রশাসনিক কার্যক্রম জোরদারে এনবিআরকে স্বতন্ত্র বিভাগ হিসাবে পুনর্গঠন এবং এর শীর্ষ নির্বাহী পদে আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডার কর্মকর্তাদের নিয়োগে সুপারিশ করেছে কমিশন।অংশীজনদের যাতায়াতের সুবিধার্থে সচিবালয় এবং আগারগাঁও রাজস্ব ভবনের বাইরে কমিশনের অফিস হবে। ২২ ডিসেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে সংস্কারবিষয়ক পরামর্শক কমিটির প্রধান ড. আব্দুল মজিদ অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন জমা দেন। এ সময় সংস্কার কমিটির অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। ওই প্রতিবেদনে এসব বিষয় উল্লেখ আছে।প্রতিবেদনে রাজস্ব প্রশাসন ও নীতি বিভাগ পৃথকীকরণের যৌক্তিকতায় বলা হয়েছে, কর নীতি প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন কাজ একই সংস্থা/প্রতিষ্ঠানের ওপর ন্যস্ত থাকায় নীতি প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নে আপসকামিতা, দুর্নীতি ও স্বার্থের সংঘাত ও নানা অনিয়মের অভিযোগ আসছে। গুরুত্বপূর্ণ দুটো কাজ একটি প্রতিষ্ঠানকে একসঙ্গে করতে হয় বিধায় নীতি-নির্ধারক বা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে নীতি প্রণয়নে বেশি সময় দিতে হয়।

এতে প্রত্যাশিত রাজস্ব আদায় হচ্ছে না এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত কার্যক্রম নিতে পারে না। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব এনবিআর চেয়ারম্যন হিসাবে দায়িত্ব পালন করায় কর নীতি, কর আহরণ, করদাতাদের সেবা সঠিকভাবে নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। তাই স্বচ্ছ ও উন্নয়নবান্ধব রাজস্ব নীতি প্রণয়ন ও প্রত্যাশিত রাজস্ব আদায়ে ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশ পুনঃপরিবর্তন করে এনবিআর ও আইআরডি পুনর্গঠনের আবশ্যকতা দেখা দিয়েছে।প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজস্ব কমিশন নামে একটি স্বাধীন সংস্থা রাজস্ব নীতি প্রণয়নের কাজ করবে। এই কমিশন সরকারের বিভাগ পদমর্যাদার হবে। আর নীতি বাস্তবায়ন ও রাজস্ব আদায়ের কাজ বর্তমানের ন্যায় এনবিআরই করবে। এ জন্য এনবিআরকে পুনর্গঠন করতে হবে।এনবিআরের বর্তমান কাঠামোকে পুনর্গঠন করে আয়কর বিভাগ (প্রত্যক্ষ কর) এবং শুল্ক ও ভ্যাট বিভাগের (পরোক্ষ কর) সমন্বয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি স্বতন্ত্র বিভাগের মর্যাদায় উন্নীত করা হবে। ১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির মূল আদেশ (৭৬নং) অনুযায়ী সচিব পদমর্যাদায় কর্মরত আয়কর ও কাস্টমস বিভাগের সদস্যদের মধ্য থেকে যোগ্যতম সদস্যকে সুনির্দিষ্ট যোগ্যতা ও নির্ধারিত পদ্ধতিতে সচিব/সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হবে।এনবিআর চেয়ারম্যান সরাসরি অর্থমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট করবেন। রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ অন্য সদস্যরা সচিবালয়ের সমপদমর্যাদাধারীদের ন্যায় সুযোগ-সুবিধা পাবেন।রাজস্ব কমিশন কাজ করবে যেভাবে : রাজস্ব কমিশন সরকারের উন্নয়নের নীতি কৌশল, অংশীজনদের প্রস্তাব-পরামর্শ ও আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার ভিত্তিতে নীতি প্রণয়নের কাজ করবে। আয়কর, ভ্রমণ কর, দানকর, আমদানি-রপ্তানি শুল্ক, নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক, ভ্যাট, আবগারি শুল্কসহ অন্য শুল্ক-কর হার নির্ধারণ করবে এই কমিশন। প্রয়োজনে শুল্ক-করসংক্রান্ত বিধিবিধান প্রণয়ন, সংশোধন ও পরিবর্তন করবে।প্রযোজ্য ক্ষেত্রে কর অব্যাহতি দেবে। পাশাপাশি আইন ও বিধি, প্রজ্ঞাপনের ব্যাখ্যা প্রদান করবে। রাজস্ব নীতি সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডারের দক্ষ, নিষ্ঠাবান ও সৎ কর্মকর্তাদের সচিব/সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় কমিশনে নিয়োগ দেওয়া হবে।

এই কমিশনে হিসাববিদ, প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী নেতা, থিংক ট্যাংক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, শিল্প মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, ট্যারিফ কমিশনের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি উপদেষ্টা পরিষদ থাকবে। এ পরিষদ অংশীজনদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ও আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চা মেনে নীতিমালার আলোকে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে রাজস্ব কমিশনকে নিয়মিত পরামর্শ দেবে। কাস্টমস ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনাল এবং আয়কর আপিলাত ট্রাইব্যুনাল রাজস্ব কমিশনে ন্যস্ত থাকবে। করনীতিসংক্রান্ত সেবা গ্রহণে অংশীজনদের যাতায়াত সহজসাধ্য রাখতে সচিবালয় ও রাজস্ব ভবনের বাইরে রাজস্ব কমিশনের অফিস স্থাপন করা যুক্তিযুক্ত হবে।২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায় সরকার রাজস্ব নীতি ও প্রশাসন বিভাগ পৃথক করে একটি আদেশ জারি করে। কিন্তু সেটি বাস্তবায়ন হয়নি। ২০০৯ সালে পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার সেই সিদ্ধান্ত বাতিল বা স্থগিত না করে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন থেকে সরে আসে।পরামর্শক কমিটির অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি সংস্কারের রূপরেখা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, স্বল্পমেয়াদে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আদেশ ১৯৭২ সংশোধন করতে হবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অর্থ বিভাগ পুনর্গঠিত এনবিআরকে স্বতন্ত্র বিভাগে উন্নীতকরণ ও কাঠামো শক্তিশালী করবে। পাশাপাশি এখানে কর্মরত সদস্যসহ ঊর্ধ্বতন পদের মর্যাদা বৃদ্ধি এবং নতুন পদ সৃষ্টি করবে। এছাড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থবিভাগ ও লেজিসলেটিভ বিভাগ প্রস্তাবিত রাজস্ব কমিশন গঠনের কাজ করবে। মধ্যমেয়াদে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়কর, ভ্যাট ও শুল্কসংক্রান্ত আইন ও বিধিবিধান সংশোধন করবে।