ইরানের তেল রফতানিতে বাধা নেইদশ পণ্যে রাজস্ব আহরণে ধসআমদানিনির্ভর নিত্যপণ্যের শুল্ককর যৌক্তিক হতে হবেমেট্রোরেলে ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার চায় আইপিডিস্বর্ণালংকারে ভ্যাট কমানোর দাবি বাজুসের
No icon

আমানত পেতে সুদ বাড়িয়েছে বেশিরভাগ ব্যাংক

উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে এমনিতেই মানুষের সঞ্চয় ক্ষমতা কমেছে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার বিক্রি করায় বাজার থেকে দুই বছরে উঠে এসেছে ২ লাখ কোটি টাকার বেশি। এসব কারণে ব্যাংক খাতে বর্তমানে চলছে তারল্য সংকট। আবার ৯ শতাংশ সুদহারের সীমার মধ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে আমানত পেতে সুদ বাড়িয়েছে বেশিরভাগ ব্যাংক। আগামী জুলাই থেকে ঋণের সুদ বাড়ানোর সঙ্গে বাড়বে আমানতের সুদও। যদিও তা মূল্যস্ফীতির নিচে তথা প্রকৃত সুদ নেতিবাচকই থাকবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়ানোর বিষয়ে গতকাল সোমবার সার্কুলার জারি করেছে। তবে সেখানে আমানতের সুদহার বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তারা জানান, ঋণের সুদ বাড়লে আমানতের সুদ স্বাভাবিকভাবেই বাড়ে। ব্যাংকগুলো এখন তারল্য সংকটে আছে। শিগগিরই পরিস্থিতি উন্নতির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। যে কারণে এরই মধ্যে আমানতে সুদ বাড়িয়েছে বেশিরভাগ ব্যাংক। এর পরও আটটি ব্যাংক অনেকদিন ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ন্যূনতম নগদ জমা (সিআরআর) রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। যে কারণে বড় অঙ্কের জরিমানা গুনছে তারা। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে স্বল্পমেয়াদি ধারের (রেপো) সুদ বেসিস পয়েন্ট ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে সাড়ে ৬ শতাংশ করা হয়েছে। আবার নতুন পদ্ধতিতে কলমানি থেকে ধারের সর্বোচ্চ সুদ হবে সাড়ে ৮ শতাংশ। গত ১৪ জুন কলমানির গড় সুদ ছিল ৬.১৫ শতাংশ। সব মিলিয়ে সুদহার বাড়বে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, ঋণের সুদহার বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই আমানতের সুদ বাড়বে। ব্যাংকভেদে এই সুদ বাড়বে ১ থেকে ২ শতাংশ। কেননা ব্যাংকগুলোতে এমনিতেই এখন তারল্য সংকট। এ ছাড়া রেপোর সুদহার বাড়ানোর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে স্বল্প মেয়াদে টাকা নেওয়ার খরচ বাড়ছে। ফলে আমানতের সুদ যে বাড়বে, নিশ্চিতভাবে তা বলা যায়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সঞ্চয়ের ওপর আসলে সুদ পাওয়া যাচ্ছে কিনা তার হিসাব হয় মূল্যস্ফীতির ভিত্তিতে। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় গত মে মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৯৪ শতাংশ। এর মানে এক বছর আগে ১০০ টাকায় যে পণ্য ও সেবা কেনা যেত, মে মাসে তা কিনতে ১০৯ টাকা ৯৪ পয়সা খরচ হয়েছে। এক বছর আগে কেউ ব্যাংকে টাকা রেখে এর চেয়ে কম সুদ পেলে, তার প্রকৃত সুদ আয় হলো নেতিবাচক। আবার ব্যাংক যে সুদ দেয়, তার ওপর সরকারের শুল্ক, ব্যাংকের সার্ভিস চার্জ, সার্ভিস চার্জের ওপর ভ্যাট এবং আবগারি শুল্ক দিতে হয়। যে কারণে মূল্যস্ফীতির চেয়ে বেশি সুদ না পেলে আসলে সঞ্চয় ক্ষয় হয়। সে বিবেচনায় দেশের ব্যাংকে সঞ্চয় করে প্রকৃত সুদ নেতিবাচক থাকে।
ব্যাংকাররা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন ব্যবস্থায় ঋণের সুদ সামান্য বাড়লেও তা পুরোপুরি বাজারভিত্তিক হচ্ছে না। কেননা, ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের ছয় মাসের গড় সুদের সঙ্গে ৩ শতাংশ মার্জিন যোগ করতে পারবে ব্যাংক। সিএমএসএমই, ব্যক্তিগত ও গাড়ি কেনার ঋণে বাড়তি এক শতাংশ তদারকি ফি নিতে পারবে। এতে করে ঘুরেফিরে ব্যাংক ঋণের সুদহার ১০ শতাংশের আশপাশে থাকবে। যদিও এখনকার মতো ৯ শতাংশে নির্ধারিত থাকবে না। ফলে ঋণের সুদ অনেক বাড়াতে না পারায় আমানতের সুদ তেমন বাড়বে না। তবে এখনকার তুলনায় আমানতের সুদ সামান্য হলেও যে বাড়বে তা বলাই যায়।

এ বিষয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‌‘৯ শতাংশ সুদহারের সীমা তুলে নেওয়াটা ব্যাংক খাতের জন্য ইতিবাচক। নতুন নীতিমালায় ঋণের সুদহার বাড়বে। এতে করে আমানতের সুদও বাড়ানোর চাপ তৈরি হবে। তবে ঋণের সুদহার যে পুরোপুরি বাজারের ওপর ছাড়া থাকবে তেমন নয়। এ ছাড়া এরই মধ্যে আমানতের সুদ বাড়িয়েছে ব্যাংকগুলো।’

সংশ্লিষ্টরা জানান, আমানতের সুদ বাড়ালেও ব্যাংকগুলো এতদিন ঋণে ৯ শতাংশের বেশি যেতে পারেনি। এতে করে সাম্প্রতিক সময়ে ঋণ আমানতের মধ্যকার সুদহারের ব্যবধান (স্প্রেড) কমেছে। গত এপ্রিলে স্প্রেড কমে ২.৯১ শতাংশে নেমেছে। ওই মাসে আমানতের গড় সুদহার ছিল ৪.৩৮ শতাংশ এবং ঋণে ৭.২৯ শতাংশ। আগের মাস শেষে আমানতের গড় সুদ ৪.৩৫ শতাংশ ছিল। ঋণে ছিল ৭.৩১ শতাংশ। স্প্রেড ছিল ২.৯৬ শতাংশ। এ ছাড়া গত বছরের এপ্রিল মাসে আমানতে ৪.০২, ঋণে ৭.০৯ এবং স্প্রেড ছিল ৩.০৭ শতাংশ। এর মানে সাম্প্রতিক সময়ে ঋণ ও আমানতের গড় সুদ বাড়লেও স্প্রেড তথা ব্যাংকের আয় কমেছে। নতুন পদ্ধতিতে আগামী জুলাই থেকে ঋণের সুদ বাড়ানোর সুযোগ পাবে ব্যাংকগুলো।
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের এমডি জাফর আলম বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন সিদ্ধান্ত ব্যাংকের ব্যবসার জন্য সহায়ক হবে। তবে নতুন করে আমানতের মুনাফা অনেক বাড়ানো যাবে বলে মনে হয় না। কেননা, বেশিরভাগ ব্যাংক এরই মধ্যে আমানতে মুনাফার হার বাড়িয়েছে। এমনিতেই সবকিছুর দর বৃদ্ধির কারণে ব্যাংকের পরিচালন ব্যয়সহ অন্যান্য খরচ বেড়েছে। এ সময়ে বিনিয়োগ ও আমানতের মুনাফার মধ্যে ৩ থেকে ৪ শতাংশ পার্থক্য না থাকলে সমস্যায় পড়তে হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ১৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর বিপরীতে বাজার থেকে উঠে এসেছে ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার মতো। গত অর্থবছর ৭৬২ কোটি ডলার বিক্রির বিপরীতে উঠেছিল আরও প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা। অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে তারল্য বাড়াতে এখন সরকারের ঋণের বেশিরভাগ সরাসরি সরবরাহ করছে। আবার কম সুদের বিভিন্ন ধরনের পুনঃঅর্থায়নের মাধ্যমে বাজারে তারল্য বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।