বাজেটের আকার কমানোর পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলইরানের তেল রফতানিতে বাধা নেইদশ পণ্যে রাজস্ব আহরণে ধসআমদানিনির্ভর নিত্যপণ্যের শুল্ককর যৌক্তিক হতে হবেমেট্রোরেলে ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার চায় আইপিডি
No icon

খেলাপি ঋণ কমাতে কঠোর হওয়ার পরিবর্তে আবার ঢালাও ছাড়

বাংলাদেশে ঋণখেলাপিদের কদর আগোগোড়াই। বিশেষ ব্যবস্থায় পুনঃতপশিল বা পুনর্গঠন কিংবা টাকা না দিয়েও খেলাপিমুক্ত থাকার সুযোগ দেওয়া হয় তাঁদের। এ নিয়ে রয়েছে নানা সমালোচনাও। আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ কর্মসূচি নিয়ে বিভিন্ন সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে। এর মধ্যেই চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১১ হাজার কোটি টাকা। ফলে খেলাপি ঋণ কমাতে কঠোর হওয়ার পরিবর্তে আবার ঢালাও ছাড় দিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা থাকলেও এপ্রিল-জুন সময়ে মাত্র ৫০ শতাংশ দিলে তাকে আর খেলাপি করা হবে না। গতকাল এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়েছে, চলতি বছরের এপ্রিল-জুন সময়ে কেউ মেয়াদি ঋণের প্রদেয় কিস্তির ন্যূনতম ৫০ শতাংশ পরিশোধ করলে তাঁকে আর খেলাপি করা যাবে না। স্বল্পমেয়াদি কৃষি ও ক্ষুদ্রঋণসহ গত ১ এপ্রিল অশ্রেণীকৃত ঋণের ক্ষেত্রে এ সুবিধা প্রযোজ্য হবে। কিস্তির বাকি অংশ ঋণের পূর্বনির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। কেউ নির্ধারিত সময়ে ঋণ পরিশোধ না করলে যথানিয়মে খেলাপি হবে।

ডলার সংকটের মধ্যে আইএমএফের ঋণের প্রথম কিস্তি পেয়েছে বাংলাদেশ। বাকি ছয় কিস্তির মধ্যে আগামী নভেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারিত আছে। ধাপে ধাপে ঋণ ছাড়ের ক্ষেত্রে সংস্থাটি ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ ধীরে ধীরে কমিয়ে আনার শর্ত দিয়েছে। ২০২৬ সালের মধ্যে বেসরকারি খাতে খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশের নিচে এবং সরকারি ব্যাংকে ১০ শতাংশের নিচে নামাতে হবে। এখন সংস্থাটির শর্তের অগ্রগতি দেখাতে এ রকম ছাড় দেওয়া হলো কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

ব্যাংকাররা জানান, দেশের এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী এমনিতেই ঋণ পরিশোধ না করতে বিভিন্ন অজুহাত খোঁজেন। এর মধ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক কঠোর হওয়ার পরিবর্তে খেলাপি ঋণ কম দেখানোর বিভিন্ন উপায় বের করে দিচ্ছে। করোনার প্রভাব শুরুর পর ২০২০ সালে ঋণ পরিশোধে অভিনব ছাড় দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই বছর ঢালাওভাবে ঋণ পরিশোধ না করেও খেলাপিমুক্ত থাকার সুযোগ দেওয়া হয়। ২০২১ সালে যে পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করার কথা ছিল, তার মাত্র ১৫ শতাংশ দিলেই তাদের নিয়মিত দেখানো হয়। এরপর ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে একজনের যে পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করার কথা ছিল, তার মাত্র ৫০ শতাংশ দিলেই তাকে আর খেলাপি করা হয়নি। এর মধ্যে গতবছরের জুলাইতে ঋণ পুনঃতপশিল নীতিমালা ব্যাপক শিথিল করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেখানে ডাউনপেমেন্ট, মেয়াদসহ বিভিন্ন বিষয় শিথিল করা হয়। এর মধ্যেই চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা বেড়ে ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২১ কোটি টাকা হয়েছে।

জানা যায়, ঋণ পরিশোধে শিথিলতার বিষয়টি করোনার পর শুরু হয়েছে, তেমন নয়। এর আগেও ২০১৯ সালে মাত্র ২ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দিয়ে ১০ বছরের জন্য ঋণ পুনঃতপশিলের সুযোগ দেওয়া হয়। তখন ৫২ হাজার কোটি টাকা পুনঃতপশিল হয়। ২০১৫ সালে ৫০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ ১২ বছরের জন্য পুনর্গঠনের সুযোগ দেওয়া হয়। তখন ১১ প্রতিষ্ঠানের ১৫ হাজার ২১৮ কোটি টাকার ঋণ পুনর্গঠন হয়। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে এক নির্দেশনার মাধ্যমে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ডাউনপেমেন্টের শর্ত শিথিল ও ঋণের মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই নির্দেশনার আলোকে ২০১৪ সালে ২৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়মিত হয়েছিল। এভাবে বারবার ছাড়ের কারণে ঋণখেলাপিরা একপ্রকার চাপমুক্তই থাকেন।

বাংলাদেশ ব্যাংক আরও বলেছে, এ সার্কুলারের আওতায় সুবিধা পাওয়া ঋণ দেরিতে পরিশোধের জন্য কোনো ধরনের দণ্ড সুদ বা অতিরিক্ত ফি আদায় করা যাবে না। আর পুনঃতপশিলের মাধ্যমে নিয়মিত থাকা ঋণের জন্যও এ সার্কুলারের আওতায় সুবিধা নেওয়া যাবে। ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে পারবে। আর সুবিধা পাওয়া ঋণে যে পরিমাণ সুদ নগদে আদায় হবে, তা আয় খাতে স্থানান্তর করা যাবে। সার্কুলার জারির প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলা হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে বহির্বিশ্বে যুদ্ধাবস্থা দীর্ঘ হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালসহ বিভিন্ন উপকরণের দর ও পরিবহন খরচ বেড়েছে। এতে ঋণ গ্রহীতারা কিস্তির সম্পূর্ণ অংশ পরিশোধে অসুবিধায় পড়ছেন। এ রকম পরিস্থিতিতে উৎপাদন, সেবা খাতসহ সব ব্যবসা চলমান রাখার মাধ্যমে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি বজায় রাখতে ঋণ পরিশোধে এ নির্দেশনা অনুসরণীয় হবে।